Home / উপজেলা সংবাদ / চাঁদপুর সদর / অধিক মুনাফার ফাঁদে ফেলে চাঁদপুরে কোটি টাকা প্রতারণা
অধিক মুনাফার ফাঁদে ফেলে চাঁদপুরে কোটি টাকা প্রতারণা

অধিক মুনাফার ফাঁদে ফেলে চাঁদপুরে কোটি টাকা প্রতারণা

শুক্রবার, ১২ জুন ২০১৫ ০৬:১২ অপরাহ্ন

চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯নং বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার ফরক্কাবাদ বাজারে ‘দিশারী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি.’-এর নামে কোটি টাকা প্রতারণাকারী হাবিবুর রহমান শেখ ওরফে হাবিব শেখ বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে ভুক্তভোগী পাওনা গ্রাহকদের মারাত্মক হয়রানি করার উল্টো অপহরণ মামলায় ফাঁসানোর জন্য আবারো উধাও বা লাপাত্তা হওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

এলাকার সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ ও ভূক্তভোগী সাধারণ ও নিরীহ মানুষের মাঝে ব্যাপক আতংকভাব দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে নাছিমা বেগম, স্বামী নুর মোহাম্মদ ঢালী এবং আবুল বাশার বেপারী, পিতা- বশির উল্লাহ বেপারী, সর্বসাং- সাপদী, ওয়ার্ড নং ৬, পো: বাগড়া বাজার, উপজেলা- চাঁদপুর সদর, জেলা- চাঁদপুর গত ১০ মে ২০১৫ তারিখে ৯নং বালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: হাফিজুর রহমান ঢালীর কাছে ৩জনকে বিবাদী করে পৃথক দু’টি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

বিবাদীরা হচ্ছে হাবিবুর রহমান শেখ, পিতা- নুরু শেখ; সাবানা বেগম, স্বামী- হাবিবুর রহমান শেখ; সলেমান শেখ, পিতা- নুরু শেখ, সর্বসাং সাপদী, ওয়ার্ড নং ৬, পো: বাগড়া বাজার, উপজেলা- চাঁদপুর সদর, জেলা- চাঁদপুর। পরে চেয়ারম্যান সাহেব ‘বিধি মোতাবেক নোটিশ করা হউক’ মর্মে বিষয়টি আমলে নেন।

জানা যায়, চতুর ও ধুরন্দর প্রকৃতির হাবিব শেখ নাছিমা বেগমকে অধিক মুনাফার প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ফরক্কাবাদ বাজারে ‘দিশারী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি:’ এর নামে দুই কিস্তিতে এক লক্ষ ও পঞ্চাশ হাজার টাকা করে সর্বমোট দেড় লক্ষ টাকা ৫ বছরের মেয়াদী আমানতের নামে হাতিয়ে নেয়। এছাড়া নাছিমা বেগম উক্ত সমিতিতে প্রতি মাসে ৫শ’ টাকা করে আরো একটি ডিপিএস খোলেন। উক্ত আমানতের টাকা ও ডিপিএস এর টাকা মেয়াদ পূর্তি মোতাবেক তার মুনাফাসহ নাছিমাকে ফিরিয়ে দেবে মর্মে লিখিতভাবেসহ সমিতির একখানা বই প্রদান করা হয়। এছাড়া ৩নং বিবাদী সলেমান শেখের প্ররোচনায় ও ছলনায় ইসলামী ব্যাংক থেকে নাছিমা বেগম উক্ত ডিপিএসের বিপরীতে প্রতারক হাবিব শেখকে আরো এক লাখ ষাট হাজার টাকা উঠিয়ে দেয়। এমনকি হাওলাত শর্তে গত ১২ জুলাই ২০১৩ খ্রি. তারিখে নাছিমার পুত্র মো: মানিক ঢালীর কাছ থেকে আরো এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক হাবিব শেখ। কিন্তু উক্ত টাকার মেয়াদপূর্তির ৩ দিন পূর্বে অর্থাৎ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ খ্রি: তারিখে উক্ত সমিতি বন্ধ করে এলাকা থেকে পালিয়ে যায়।

অপর অভিযোগকারী আবুল বাশার বেপারী এবং তার স্ত্রী রোকেয়া বেগমের কাছ থেকেও প্রতারক হাবিব শেখ একই প্রক্রিয়ায় উক্ত সমবায় সমিতির নামে এক লাখ ষাট হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে প্রতারক হাবিব শেখ সমিতির নামে এলাকার বহু লোকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার প্রতারণা করে প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে এলাকার বিভিন্ন স্তরে সুষ্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

এ ব্যাপারে বেশ কিছুদিন পূর্বে প্রতারক হাবিব শেখের এহেন প্রতারণার বিষয়টি এলাকার ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত নিরীহ ও সাধারণ মানুষ বিভিন্নস্থানে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে হাবিব শেখ পালিয়ে বা আত্মগোপনে থেকে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে তার স্ত্রী ২ নং বিবাদী সাবানা বেগম ও তার ভাই ৩নং বিবাদী ছলেমান শেখের মাধ্যমে এলাকায় প্রচার করতে থাকে। এসব ভূক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাদের পাওনা টাকা চাইতে গেলে ২নং সাবানা বেগম ও ৩নং বিবাদী সলেমান শেখ তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিতে থাকে। অতঃপর এলাকার গণ্যমান্যদের পরামর্শক্রমে বাদীগণ পৃথক পৃথকভাবে চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে বাধ্য হন।

এদিকে এর আগেও প্রতারক হাবিব শেখ উক্ত প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাত করার দেনার দায় থেকে বাঁচার জন্য এলাকা থেকে আরো একবার গা ঢাকা দেয়। বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার গতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারক হাবিব শেখ স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের তথা আওয়ামীলীগের ক’জনের বিরুদ্ধে তাকে অপহরণের মত মিথ্যা মামলা বা নাটক সাজানোর দুঃসাহস দেখায়। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চাঁদপুরের ডিবি পুলিশ প্রতারক ইউপি মেম্বার হাবিব শেখকে সিলেটের মৌলভীবাজার এলাকা থেকে সিএনজি চালানো অবস্থায় গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠায়। বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে প্রতারক হাবিব শেখ এলাকায় কিছুদিন চুপচাপ থাকে। পরবর্তীতে সে সম্প্রতি আবারো এলাকায় গা ঢাকা দেয় এবং তার স্বজনদের দিয়ে এলাকায় প্রচার করতে থাকে তাকে অপহরণ করা হয়েছে এবং শোনা যায়, পূর্বের মতো এবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ঢালীর কাছে অভিযোগকারী যথাক্রমে নাছিমা বেগম এবং আবুল বাশার বেপারীকে মিথ্যা অপহরণ মামলায় ফাঁসিয়ে মারাত্মক হয়রানি করে তাদেরকে পাওনা টাকা আদায়ের স্বাদ হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিবে প্রতারক হাবিব শেখ চক্র।

প্রায় এক কোটি টাকার দেনার দায় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই প্রতারক ইউপি সদস্য হাবিব শেখ বার বার তাকে অপহরণের নাটক সাজানোর মতো দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় মিথ্যা অপহরণ মামলা সাজানোর অসৎ উদ্দেশ্যে লাপাত্তা হয়ে যাওয়া প্রতারক হাবিব শেখকে চাঁদপুরের ডিবি পুলিশ সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে সিএনজি চালানো অবস্থায় গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠালে বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিনে এসে চতুর হাবিব শেখ আবারো এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে তথা লাপাত্তা হয়ে আইন আদালতের প্রতি প্রতারণার দুঃসাহস দেখানোর বিষয়ে চাঁদপুর জেলা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে অত্যাবশ্যক মনে করছেন অভিজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক মহল।

 

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমসর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না