চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় ৬১০ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৮ শ ৪৯ জন। জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় ক্রমান্বয়ে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অভাব পূরণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অভিভাবকগণ শিশুদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বর্তমানে শহর অঞ্চল থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যেকটি এলাকাতেই গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন।
চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ শিক্ষাবর্ষের নতুন বইয়ের চাহিদা মতে চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় বর্তমানে ৬১০ কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারি ভাবে এসব স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপণি পরীক্ষার অনুমতি ও প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে সরকারিভাবে বই প্রদান করা হয়ে থাকে। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে জেলার এ প্রতিষ্ঠান গুলোতে বই প্রযোজন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কপি ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র মতে, চাঁদপুর সদরে ১১৬ টি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৬০ জন, কচুয়া উপজেলায় ১১৫ টি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৪ শ ৮৩ জন , হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৮৩ টি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ হাজার ৯ শ ৪ জন, হাইমচর উপজেলায় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭শ ৫০ জন।
শাহরাস্তি উপজেলায় ৬৬ টি কিন্ডারগার্টেন ৮ হাজার ১ শ ১০ জন শিক্ষার্থী, মতলব উত্তর উপজেলায় ৯০টি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ হাজার ২ শ ৮৭
জন , মতলব দক্ষিণ উপজেলা ৯১ কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ৩ শ ১৫ জন এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ৭৮ কিন্ডারগার্টেনে ১৩ হাজার ৩ শ ৩৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
প্রতি ১ম ও ২য় শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী ৩ টি এবং ৩য় , ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী ৬ টি করে নতুন বই পাবে ।
এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস চাঁদপুর টাইমসকে জানান, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেবলমাত্র পঞ্চম শ্রেণির সমাপণি পরীক্ষার অনুমতি ও সরকারিভাবে বই প্রদান করা হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জানা যায় , সরকারি উপবৃত্তির নীতিমালায় কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠানে উপবৃত্তি প্রদান করা হয় না। কিন্ডারগার্টেন অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সরকারিভাবে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে হয়তোবা প্রাথমিক শিক্ষায় প্রাক-প্রাথমিক এর আগে নার্সারি খোলার সম্ভাবনা রয়েছে ফলে এসব কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদেরকে অভিভাবকগণ হয়তোবা আর পড়ানোর সুযোগ পাবে না । সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকার সন্তানগণ কিন্ডারগার্টেনে পড়াতে পারবেনা এ মর্মে নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের এক তথ্যে জানা গেছে-চাঁদপুরে অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেনে ৭ থেকে ৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও গড়ে ১ শ ৫০ থেকে আড়াইশো শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষকগণ একান্তই স্নেহ, মায়া-মমতা,ভালোবাসা এবং আদর দিয়ে তাদেরকে শিক্ষা প্রদান করা হয় ।
এছাড়াও কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং পর্যাপ্ত খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনন্দঘন শিক্ষাপাঠের মাধ্যমে পাঠদান করেন। এছাড়াও জাতীয় দিবসগুলোতে বিভিন্ন রকমের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
চাঁদপুরে সর্বপ্রথম আশির দশকে কোর্টস্টেশনের একটু পশ্চিমে রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন নামক একটি প্রতিষ্ঠান বাকশিস নেতা অধ্যক্ষ সাফায়াৎ আহমদ ভূইঁয়া পরিচালনা করেন। বর্তমানে বেশ কটি কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে ।
বিশ্বকোষ থেকে জানা যায়, কিন্ডারগার্টেন শিশুদের প্রাক-বিদ্যালয় বা বিদ্যালয়-পূর্ব উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ। এ শব্দটি জার্মান শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে‘ শিশুদের বাগান’ ‘কিন্ডারগার্টেন’শব্দটি বিখ্যাত জার্মান শিশু-শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ফ্রেডরিক ফ্রোয়েবল কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে।
তিনি ১৮৩৭ সালে‘আমেরিকার ব্যাড ব্ল্যাংকেন বার্গে শিশুদেরকে বাড়ি থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত গমন এবং খেলা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণের ধারণাকে কেন্দ্র করে এ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
তাঁর উদ্দেশ্য ছিল-শিশুরা উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষনের মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে এবং ‘শিশুদের বাগান’ হিসেবে কিন্ডারগার্টেনে বাগিচায় রোপিত চারাগাছের ন্যায় পরিচর্যা পাবে। শিশুরা কিন্ডারগার্টেনে উপস্থিত হয়ে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করাসহ একে-অপরের সাথে খেলাধূলা করবে এবং অন্যের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে উপযুক্ত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে।
শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষক বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ সঙ্গে রাখবেন। অত:পর উপকরণগুলোর বাস্তবমূখী ও কলা-কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে শিশুর মনোযোগ আকর্ষণ করবেন। উপযুক্ত ভাষা ও শব্দ ভাণ্ডার প্রয়োগের মাধ্যমে পড়বেন কিংবা শিক্ষার্থীকে পড়াতে উদ্বুদ্ধ করবেন। গণিত,বিজ্ঞানসহ সঙ্গীত,কলা,সামাজিক আচার-আচরণ শেখানোও শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব।
সাধারণতঃ শিশুরা তাদের অধিকাংশ সময় বাড়িতেই অতিবাহিত করে। কিন্ডারগার্টেনে প্রবেশের পর পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিপালন, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি যাবতীয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেন। সাহায্য-সহযোগিতার দ্বার প্রশস্ত করে পরিবেশের সাথে শিশুকে খাঁপ খাওয়ানোর মাধ্যমে পিতা-মাতা বা অভিভাবককে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে রক্ষা করার আপ্রাণ প্রয়াস চালান কর্তৃপক্ষ।
খেলাধূলা এবং পারস্পরিক ক্রিয়া বা যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সমজাতীয় শিশুদের মিলনক্ষেত্র হিসেবে এটি সুন্দর সুযোগ হতে পারে। প্রাক-বিদ্যালয় হিসেবে কিন্ডারগার্টেনে সাধারণত: কোমলমতি শিক্ষার্থীর বয়সসীমা ৩ থেকে ৫ বছরের হয়ে থাকে। তাদের মনের মাঝে পারিবারিক পরিবেশই সর্বদা বিরাজমান থাকে।
আবদুল গনি , ২১ ডিসেম্বর ২০১৯