১০১ নারী খুনের টার্গেটকারী লেডি কিলার রসু খাঁ গার্মেন্ট কর্মী সাহিদা হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেরে। মৃত্যুদণ্ডাদেশের একদিন পরই গত ২৩ এপ্রিল রসু খাঁ হাইকোর্টে ওই আপিল করেন। চাঁদপুর জেলা কারাগারের জেলার আক্তার হোসেন শেখ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, চাঁদপুর আদালতে ফাঁসির আদেশের একদিন পরই রসু খাঁ ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের জন্য জেলসুপারের কাছে আবেদন করেন। সে প্রেক্ষিতেই আপিলের জন্য রায়ের নকল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রসু খাঁর পক্ষ থেকে আপিল আবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। রসু খাঁ বর্তমানে ফাঁসির সেলে স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছেন বলেও জানান জেলার।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল বুধবার চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ অরুণাভ চক্রবর্তীর আদালতে ঘোষণা করা হয়। চাঁদপুর মডেল থানায় দায়েরকৃত টঙ্গীর গার্মেন্টস কর্মী শাহিদা বেগম হত্যা মামলাটি দীর্ঘ ৫ বছর ৬ মাস শুনানির পর বুধবার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়।
১১ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এই খুনি রসু খাঁ দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত চাঁদপুর জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৯টি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন আ্যড. নঈমুল ইসলাম ও বাদীপক্ষের সরকারী অতিরিক্ত পিপি আ্যড. সাইদুল ইসলাম।
ওই দিন রসু খাঁর মামলার রায় দেয়া হবে একথা শুনে সকাল থেকে চাঁদপুর আদালত প্রাঙ্গনে অনেক উৎসুক মানুষ ও গনমাধ্যম কর্মীরা ভিড় জমান।
চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ ভালোবাসায় পরাস্ত হয়ে এক সময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয়। ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তার লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের চিত্র বেরিয়ে আসে। নিজের মুখে স্বীকার করে ১১ নারী হত্যার কথা। টার্গেট ছিল ১০১টি নারী হত্যাকাণ্ড ঘটানোর।
কিন্তু চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তার সেই আশা গুঁড়েবালিতে পরিণত হয়। ফাঁসির রায় শোনার পরও স্বাভাবিক আচরণ করছেন সেই রসু। এর আগে জেলখানা থেকে পুলিশ প্রহরায় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার আগে আয়েশ করে সিগারেট ফুঁকছিলেন। পরনে ছিলে রঙচঙা টিশার্ট আর ধবধবে সাদা লুঙ্গি, মাথায় টুপি। ওই সময় তার হাতে ‘গোল্ডলিফ’ সিগারেটের একটি প্যাকেটও ছিলো। রায় তার পক্ষে কি বিপক্ষে যাক এটা নিয়ে কোন টেনশন ছিলো না।
আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। রায় ঘোষণার পরেও তাকে দেখা গেছে সিগারেটের প্যাকেট হাতে। ছিল তার মাঝে একধরনের স্বভাবিকতা।
উল্লেখ্য রসু খাঁ যাদের হত্যা করেছে তারা সবাই ছিল গার্মেন্টস কর্মী। ভালোবাসার অভিনয় করে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ঢাকার সাভার এলাকা থেকে চাঁদপুরে এনে প্রত্যন্ত এলাকায় নিয়ে রসু খাঁ ওইসব মেয়েদের ধর্ষণের পর অমানবিকভাবে হত্যা করেছে। হত্যার শিকার ওইসব হতভাগ্য নারীদের অধিকাংশেরই সঠিক নাম-ঠিকানা বা পরিচয় আজও জানা যায়নি।
রসু খাঁকে গ্রেফতারের পর চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ থানায় মোট ১০টি মামলা দায়ের করা হয়। এর ভেতর ১টি হত্যা মামলা ও অপরগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে। তার মামলাগুলো বিচারের জন্য চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে সেখানে একটি মামলার রায়ে রসু খাঁ খালাস পেয়ে যায়। এ অবস্থায় তার অপর মামলাগুলো চাঁদপুর আদালতে পুনরায় ফেরত পাঠিয়ে দেয় ট্রাইব্যুনাল। অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে তার আরো ৮টি মামলার বিচারাধীন রয়েছে।
চাঁদপুর টাইমস/ডিএইচ/২০১৫