স্কুলে মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচয় রয়েছে তার। নম্র এবং ভদ্র স্বভাবের। তবে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে মাদকের নেশায় বুঁদ থাকতো সে। উদ্দাম, অস্বাভাবিক যৌনজীবনেও অভ্যস্ত। এসবই যে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা হয়তো কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। জীবনের এমন উল্টো স্রোতে চলতে গিয়ে জীবনটাই হারাতে হলো ব্রিটেনে বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ১৭ বছরের এক তরুণীর।
নিজের ঘরে প্রেমিকের সঙ্গে মিলন মুহূর্তে আচমকা সংজ্ঞা হারায় পূরবী। শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তিন সপ্তাহ নার্সিংহোমে ভর্তি থাকার পর মৃত্যু হল ডাক্তার দম্পতির কন্যার।
দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছিল পূরবী। ‘এ’ গ্রেড-সহ স্টার মার্ক পাওয়া কিশোরীটি ব্রিটেনের কিং এডওয়ার্ড স্কুলের ছাত্রী। বন্ধুদের কথায়, নিয়মিত কোকেন, মদ, মাদকের নেশা করত পূরবী। অনেক সময় স্কুলেও মদ্যপান করে আসত। এমনকী বোর্ড পরীক্ষার আগেও নেশায় ডুবেছিল। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ পূরবীর এই অভ্যাসের জন্য কিছু বলত না বলে দাবি তার সহপাঠীদের একাংশের। মাদক নেওয়ার কারণে বোর্ড পরীক্ষার আগে পূরবীর যা অবস্থা হয়েছিল তাতে সে প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকত। ও যে পরীক্ষায় বসবে এবং এত ভাল রেজাল্ট করবে তা ভাবতেও পারেনি বন্ধুরা।
তবে বন্ধুদের এই বক্তব্যকে সমর্থন করেন নি পূরবীর মা, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিভা গিরি। মেয়ের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত মায়ের কথায়, আমার সুন্দর, মেধাবী মেয়ের মৃত্যুতে গোটা পরিবার ভেঙে পড়েছি। কেউ কেউ না জেনে ওর নামে খারাপ অভ্যাসের কথা বলছে। তবে এমন কিছুই ও করত না। তাহলে স্কুলের তরফ থেকে ঠিক আমাদের জানানো হত।
পুলিশ জানিয়েছে, বার্মিংহামে ধনী ডাক্তার দম্পতির মেয়ে পূরবী। তাদের বিলাসবহুল বাড়ির মূল্য প্রায় ১০ লাখ ইউরো। ফিজিক্স নিয়ে উচ্চশিক্ষার কথা চলছিল পূরবীর। স্কুলে ছুটির দিন পূরবী ১৯ বছরের প্রেমিককে বাড়িতে ডাকে। তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়। আচমকা অজ্ঞান হয়ে গেলে ছেলেটি দ্রুত পূরবীর বাবা-মাকে ফোন করে ডাকে। তার বাবা হিপ ও নি-রিপ্লেসমেন্ট সার্জন ডা. সীতারাম গিরি নিজের হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করান। প্রেমিকের আঘাতে পূরবীর শরীর দিয়ে এত রক্তক্ষরণ হয়েছে কি না তা জানতে প্রেমিককে আটক করে পুলিশ।
মেডিকেল পরীক্ষায় পূরবীর রক্তে ও মূত্রে অতিরিক্ত কোকেনের উপস্থিতি মেলে। কোকেনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেই হার্ট অকেজো হয়ে পূরবীর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করে পুলিশ। জেরার পর প্রেমিককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এডওয়ার্ড স্কুলের পড়ুয়াদের কথায়, পূরবী ইনস্টাগ্রামে তার ডাকনামের জায়গায় লিখে রাখত, ‘পোকেন’। কোকেন ও মারিজুয়ানাকে একসঙ্গে পোকেন বলে। নিজের মাদক ব্যবহারের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অন্যদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করত পূরবী। জিভে মাদক পিল নিয়ে সেই ছবিও পোস্ট করত।
এক বন্ধুর কথায়, মেধাবী ছাত্রী হলেও পূরবী খুব অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করত। টেনিস খেলতে ভালবাসত বলে স্কুলের মেধাবী ছাত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে টেনিস কোর্টে একটি বেঞ্চ পূরবীর নামে উৎসর্গ করেছে বার্মিংহামের অভিজাত এডওয়ার্ড স্কুল।
পূরবীর কয়েকজন বন্ধুদের মতে, বাবা-মা ব্যস্ত ও নামী ডাক্তার হওয়ায় তারা মেয়েকে বিশেষ সময় দিতেন না। তার উপর পড়াশোনার চাপও ছিল। ভাল কেরিয়ার গড়ার জন্য বাবা-মায়ের উচ্চাশাও ছিল। সেই সবের কারণেই এত কম বয়সে লাগামহীন জীবনযাপন শুরু করতে পারে যৌবনে পা রাখতে চলা পূরবী।
কারও কথায়, সুন্দরী হওয়ায় বহু ছেলে পূরবীকে প্রেমের প্রস্তাব দিত। সেই সব ঘটনা উপভোগ করত সে। কলেজের পাঠ শুরুর আগেই তার সঙ্গে একাধিক ছেলের সম্পর্ক ভেঙেছে-গড়েছে।
(বাংলাদেশ জার্নাল)
বার্তা কক্ষ
১০ ডিসেম্বর,২০১৮