চাঁদপুরে ইরি-বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে ধান কাটার জন্য শ্রমিক না পাওয়ায় কৃষকের মুখের সে হাসি দূঃখে পরিণত হচ্ছে। এক দিকে মাঠে পাকা ধান অন্য দিকে টানা বৃষ্টিতে ডুবছে ধান।
কিন্তু ধান কাটার জন্য পাওয়া যাচ্ছেনা শ্রমিক। যা পাওয়া যাচ্ছে তাও অতি উচ্চ দরে শ্রমিক মিলছে যত সামান্য। এতে বিপাকে পড়েছে চাষীরা। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখাগেছে।
চাঁদপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আলী আহম্মদ জানান, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬১ হাজার ২শ’৬৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪শ’ ৫৩ মে.টন চাল। যা গেলো বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩শ ৩০ হেক্টর জমি কম চাষাবাদ হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুর সদরে ৫ হাজার ৫ শ’ ১৪ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২১ হাজার ৪শ’ ৩০ মে.টন। মতলব উত্তরে ৯ হাজার ১শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৫ হাজার ৮শ’ ২৯ মে.টন।
মতলব দক্ষিণে ৪ হাজার ৭শ’ ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৮ হাজার ৫শ’ ৪৭ মে.টন। হাজীগঞ্জে ৯ হাজার ৭শ’ ২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ হাজার ৫ শ’ ৪৪ মে.টন । শাহারাস্তিতে ৯ হাজার ৪শ’ ১৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪০ হাজার ৪৬ মে.টন।
কচুয়ায় ১২ হাজার ১শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৭ হাজার ৮শ’৯৪ মে.টন। ফরিদগঞ্জে ৯ হাজার ৯শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৯ হাজার ৭ শ’ ৭৯ মে.টন এবং হাইমচরে ৬ শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ হাজার ৩শ’ ৮৪ মে.টন চাল।
চাঁদপুরের কৃষকরা সাধারণত হাইব্রিড, স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ তিন জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়। কোনো কোনো উপজেলার প্রবল বৃষ্টিতে এ বছর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিধায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার মে.টন কম চাল উৎপাদন হতে পারে বলে চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।
এ বছর চাঁদপুররে ৮ উপজলোয় ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ২০১৭-২০১৮ র্অথবছরে ১শ’৭১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এর মধ্যে ১শ’৭১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
দেশের অন্যতম দু’টি সেচ প্রকল্প মেঘনা-ধনাগোদা এবং চাঁদপুর সেচ প্রকল্প থাকা সত্তে¡ও চাঁদপুর খাদ্য ঘাটতির জেলা। এর কারণ, নদী ভাঙ্গনে বিস্তীর্ণ ফসলী জমি বিলীন এবং আবাদী জমির উপর বসতি গড়ে তোলা। তারপরও এ জেলায় ধানসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের চাষাবাদ হয়।
এবার চাঁদপুরে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গ্রামীণ জনপদের দিকে তাকালে এখনো দেখা যায় ব্যস্ত কৃষক জমি থেকে ধান গাছ কাটা এবং মেশিনে নতুন ধান মাড়ানো, রোদে শুকানো ও বস্তা বা গোলায় ভরার কাজে। জেলার হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জে বৃষ্টির কারণে অনেক ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও শ্রমিক না পাওয়ায় ধান কাটতে পারছেনা চাষিরা।
হাজীগঞ্জ উপজেলার কালোচা উত্তর ইউনিয়নের কৃষক আ. জলিল (৬৫) বলেন, বাবারে এবার চাষাবাদ করে বিপদে পড়েছি। ধানের মন ৭’শ টাকা বদলার (শ্রমিকের) রোজ ৮’শ টাকা।
একই উপজেলার ৯নং গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের চাষি তৈয়ব আলী মোল্লা জানান, আমি ২ কানি (২ একর ৪০ শতাংশ) জমি চাষ করেছি। ধান জমিতে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে রয়েছে শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারিছিন। তিনি আরো বলেন, শ্রমিক পেলেও ৯টা বাজে কাজে যোগ দিয়ে ১টায় কাজ শেষ করে চলে আসে। তাদেরকের রোজ দিতে হয় ৭শ থেকে ৮’শ টাকা। তার পরেও বদলা পাওয়া দুস্কর।
সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের মধ্য বালিয়া দিঘিরপাড় এলাকার গৃহস্থ বাদল গাজী (৪০) এবং কৃষক বিল্লাল গাজী (৬০) জানান, ৩ একর জমিতে এবার ইরি বিআর ২৯ আবাদ করে প্রায় ১৮০ মণ ধান পাবেন। ফলন বাম্পার হলেও ধান বিক্রি নিয়ে তারা চিন্তিত। দালালদের কারণে ধান বিক্রি হচ্ছে না। মিল মালিকরা এবং বেপারীরা এখন ধান কিনে না। তারা আরো জানায়, পনর শতাংশে ১ গন্ডা জমিতে ধানের আবাদ করলে কৃষকের খরচ হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা। ধানের মণ এক হাজার টাকা হলেও গৃহস্থের পোষায় না। তারপরও ৮শ’ টাকায় ধানের মণ পাইলে উৎপাদন খরচ মোটামুটি উঠে আসে।
কচুয়া উপজেলার উত্তর কচুয়া ঘুরে দেখাযায়, এখানে ফলনগুলো এখনো কাঁচা। এ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিব জানান, এ অঞ্চলে আলু চাষ হওয়ার প্রায় ৩০/৪০ দিন পর ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়। এতে প্রায় সব জমির আলু নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার মাঠ তৈরী করে আলু চাষ করা হয়েছে। ওই আলু তোলার পর আলু ক্ষেতে ধান চাষ করা হয়েছে। দেরীতে ধান চাষ করায় এখনো কৃষকরা ধান তুলতে পারেনি। তাই ফসল মাঠেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, যদি সামনের দিকে আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে ফসল কৃষকের ঘরে উঠবে। এই কর্মকর্তা আরো জানান, এ উপজেলায় ইরি-বোরো ফসল লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশী হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগের উপর নির্ভর করবে সবকিছু।
প্রতিবেদক- শরীফুল ইসলাম
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur