বর্তমান সমাজে গর্ভপাত বা ভ্রুণ হত্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ক্লিনিক আঙিনায় ভিড় করছে অসংখ্য তরুণী। ক্লিনিকগুলো যেন হয়ে উঠেছে মানব হত্যার কেন্দ্র।
কারও কারও যৌক্তিক কারণ থাকলেও, অধিকাংশ গর্ভপাতই নষ্ট চরিত্রের ফসল। কেউ করে দরিদ্রতার ভয়ে। ক্রমবর্ধমান এ সমস্যাটি হয়ে উঠেছে একটি সামাজিক ব্যাধি। আসুন এ ব্যাধি সম্পর্কে জেনে নিই ধর্মের কিছু দিকনির্দেশনা।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ভ্রুণের বয়স যখন হয় তেতাল্লিশ দিনের কম, তখন ভ্রুণ একটি রক্তপিণ্ড হিসেবে মায়ের গর্ভে অবস্থান করে। এ সময় পর্যন্ত তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায় না।
এ অবস্থায় ভ্রুণটিকে মানুষের শরীরের একটা অঙ্গ হিসেবে ধরে নেয়া হবে। আর মানুষের প্রতিটি অংশের মালিক আল্লাহতায়ালা। অতএব শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো এই অঙ্গটিও নষ্ট করা অন্যায়।
যদি স্তন দানকারিনী গর্ভবতী হয়ে দুধ বন্ধ হওয়ার ও বাচ্চা মারা যাওয়ার আশঙ্কা হয়, এ অবস্থায় গর্ভে বীর্য জমাট রক্ত কিংবা গোশতের টুকরাকারে থাকলে এবং কোনো অঙ্গ প্রকাশ না পেলে চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ভপাত করানো যাবে। (ফতওয়ায়ে কাজিখান : ৩/৪১০)
ভ্রুণের বয়স যখন তেতাল্লিশ দিন হয়ে যায়, তখন থেকে তার প্রয়োজনীয় ওরগান যেমন, ফুসফুস, নাক, হাত ও বিশেষ কিছু হাড় ইত্যাদি প্রস্তুত হওয়া শুরু হয়। অতএব তখন থেকে শুরু করে চার মাস পর্যন্ত গর্ভপাতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় ভ্রুণটি নষ্ট করে ফেলা মোটেও ঠিক নয়। (আদ্দুররুল মুখতার : ১০/২৫৪)।
ভ্রুণের বয়স যখন ১২০ দিন বা চার মাস হয়ে যায় তখন আল্লাহতায়ালা তার রুহ দান করেন। আর রুহ আসার পর বাচ্চা নষ্ট করা কোনো মানুষকে হত্যা করার শামিল। তাই এ সময় ভ্রুণ হত্যা সর্বসম্মতিক্রমে অন্যায়। (ফতহুল আলিয়্যিল মালিক খ. ১/৩৯৯)।
আধুনিক যুগে ভ্রুণ হত্যা জাহেলি যুগে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত সমাধিস্থ করার মতোই। তখন বাবা নিজ মেয়েকে গর্তে পুঁতে ফেলত আর এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে মায়ের পেটেই শিশুকে মেরে ফেলা হচ্ছে।
এ দুই হত্যার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। এ জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) ভ্রুণ হত্যাকে ‘গুপ্তহত্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্মরণ কর ওই দিনকে, যেদিন জীবন্ত সমাধি দেয়া নিষ্পাপ বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাকে কোন অপরাধের কারণে হত্যা করা হয়েছে?’ (সূরা তাকয়ির : ৮)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যে একটি জীবনকে হত্যা করা থেকে বিরত থেকেছে, সে যেন সব মানুষের জীবনকে হত্যা করা থেকে বিরত থেকেছে? আর যে একটি আত্মাকে হত্যা করেছে, সে যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করেছে?’ (সূরা মায়েদা : ৩০)
অনেকে মনে করে, আগত শিশুকে লালনপালন করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এই ভয়ে সেভ্রুণ মেরে ফেলে। এ কাজটি নিতান্তই নিন্দনীয় ও বোকামি।
কেননা, যিনি তার বান্দাকে এত যত্ন করে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তার রিজিকেরও ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানকে দরিদ্রতার ভয়ে হত্যা কর না। আমরা তোমাকে এবং তোমার সন্তানকে দেখেশুনে রাখি। তাই তাদের হত্যা করা সত্যিকার অর্থেই একটি মহাপাপ।’ (সূরা ইসরার : ৩২)
ভিন্ন ধর্মের বেশ কিছু সেবা সংস্থা (যেমন এনজিও) গ্রামে গ্রামে সাধারণ মহিলাদের এ ব্যাপারে ভয় দেখায়, বেশি সন্তান হলে দরিদ্রতা সংসারকে গ্রাস করে নেবে। ভালো খেতে পারবে না, পরতে পারবে না।
তাই একটি বা দুটি সন্তান নেয়াই ভালো। তাদের এ কুটকৌশলে গ্রামের অবুঝ মহিলারা গর্ভপাতে উদ্বুদ্ধ হন। এ ব্যাপারে গ্রামের মানুষকে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
নিউজ ডেস্ক:
আপডেট সময় ৩:০০ এ.এম ৮ এপ্রিল ২০১৮ রোববার
কে এইচ