আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে ইলিশ। আমাদের দেশের ইলিশের সুনাম পৃথিবীর সর্বত্র। বাঙালীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও গৌরবের সাথে মিশে আছে ইলিশের স্বাদ।
নদ-নদীর দেশগুলোর মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। দেশের এ নদ-নদীতে ইলিশ উৎপাদন দিন দিন বাড়ছেই। এদেশে বহু প্রকারের মাছ রয়েছে। এর মধ্যে ইলিশের অবস্থান সর্বশীর্ষে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে মিঠা পানির উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ। দেশে যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হয়েছ তার বর্তমান মূল্য হয়েছ ১০ হাজার কোটি টাকা
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ৭০% ইলিশ বাংলাদেশে, ২০% ভারতে, ৫% মায়ানমারে এবং বাকি ৫% টাইগ্রিসসহ পৃথিবীর অন্যান্য নদীতে পাওয়া যায়।এর মধ্যে বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদই আলাদা,অভিন্ন ও সর্বত্র চাহিদা রয়েছে।আমাদের দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য না থাকলেও মেঘনা ও পদ্মা নদীর উপকূলীয় এলাকায় এর বিচরণ ক্ষেত্র রয়েছে।
দেশের মাছের উৎপাদনের ১২% হলো ইলিশ এবং জেডিপিতে এর অবদান ১%। তাই ইলিশের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের চেয়ে কম নয়। বিদেশ থেকে আমদানি করা আমাদের দেশেই এক লিটার অকটেন এর মূল্য ৯৮ টাকা ও এক লিটার পেট্রোল এর মূল্য ৯৬ টাকা । অথচ ওই পরিমাণ ১ কেজি ইলিশের মূল্য ৮ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। সুতরাং ইলিশের গুরুত্ব বা মূল্য কতটুকু তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
সরকার প্রতিবছর জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় মেঘনা ও পদ্মা নদীর উপকূলীয় এলাকার বিচরণ কেন্দ্রগুলিতে অভয়াশ্রম ঘোষণা ও মা মাছসহ জাটকা রক্ষা করতে ২ মাস নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে।
অথচ এক শ্রেণির অপয়া জেলে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে মার্চ-এপ্রিলে অবাধে জাটকা নিধন করে যাচ্ছে। সংসার চালানোর অজুহাতে তারা এ কাজটি করছে। মৎস্য বিভাগের দেয়া এক তথ্যে জানা গেছে, নদী উপকূলীয় এলাকাসহ মাত্র ২% লোক জাটকা ধরা, বেচা, কেনা ও বিভিন্ন স্থানে চালান,বরফ ব্যবসা,পরিবহনের কাজে জড়িত। মাত্র এ দু’ভাগ লোক দেশের ৯৮ ভাগ মানুষরে জাতীয় সম্পদ ইলিশ ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত রয়েছে,যা কারো কাম্য নয়।
অথচ ওইসব জেলেদের ৩ মাস সংসার চালাতে আর্থিক সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সত্তে¡ও নির্বোধ জেলেরা তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন বড় হয়ে মাছে পরিণত হওয়ার সময়ই জাটকা অবাধে ধরে ফেলছে। ফলে চাঁদপুরে জাটকা রক্ষা কৌশল পরিবর্তনে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে । তাহলে তারা নদীতে মাছ ধরা সাহস পাবে না ।
কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ২০০১-’০২ অর্থবছর থেকেই জাতীয়ভাবে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে। দেশের গৌরবময় সেনাবাহিনী দেশের সম্পদ রক্ষায় কাজ করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস । সরকার প্রকৃত জেলেদের সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্যেই তাদের সঠিক তালিকা তৈরিসহ ছবিযুক্ত পরিচয়পত্রও দিয়েছেন । মৎস্য বিভাগ ইউপির জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ওইসব জেলেদের তালিকা তৈরি,কার্ডের মাধ্যমে চাল বিতরণ, প্রশিক্ষণ, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকেন।
তাই তারাই জানেন জাটকা নিধনে রাতে বা দিনে, সকালে বা সন্ধ্যায় সরকারি ছুটির দিনে কিংবা টাস্কফোর্স অভিযানে অংশগ্রহণ করে ফিরে আসার পর কারা জাটকা নিধন মিশনে নেমে পড়ে ।এতে জাটকা নিধন আশানুরূপ ভাবে বন্ধ করা যাচেছ না। তাই জাটকা নিধন কার্যক্রম পরিচালনার কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।
প্রথমত : নদী উপকূলীয় ইউপির সকল জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ বাহিনীদেরকে জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় সম্পৃক্ত করে ৩ মাস মেয়াদী শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে হবে ।
দ্বিতীয়ত : জেলার ৩ টি উপজেলার বিশেষ বিশেষ স্থান সমূহে ওই ৩ মাসের জন্যে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা যেতে পারে ।
তৃতীয়ত : পুলিশ জাটকা নিধনকারীদের আইনের আওয়তায় নেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকবে ও কোস্টগার্ড সেনাবাহিনীর সাথে নদীতে টহল দিবে।
যে সব স্থানসমূহে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা যেতে পারে সেগুলো হলো : মতলব উত্তরের মহনপুর ও এখলাছপুর। চাঁদপুর সদরের কানুদি মিয়ার বাজার , ডাসাদী, রাজরাজেস্বর , চাঁদপুরের মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোলহেড,হরিণা ফেরিঘাট, ইব্রাহিমপুরের রব মুন্সীর বাজার বা বাংলাবাজার ।
হাইমচর উপজেলার, চরগাজীপুর, হাইমচর ইউনিয়নের মধ্যচর এলাকায়, চরভৈরবী বাজার,কাটাখাল,বর্তমান হাইমচর বাজার এবং কালিখোলা লঞ্চঘাট ইত্যাদি।
এর ফলে জাল-নৌকা নিয়ে তথাকথিত জাটকা নিধনকারীরা তখন নদীতে নামার দু:সাহস পাবে না। চোরাই পথে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ক্রয়ও করবে না ।
এ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে সরকারের কয়েক শ’ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে, জাটকা রক্ষা কর্মসূচি আরো সফল হবে, মৎস্য বিভাগ এ নিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অযথা সময় নষ্ট ও দাপ্তরিক কাজের ব্যঘাত কম হবে। তাই জাটকা রক্ষার কৌশল গতানুগতিক পদ্ধতির পরিবর্তন করে এর নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন।
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮:৪৫ পিএম, ১৮ মার্চ ২০১৮, রোববার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur