Home / উপজেলা সংবাদ / হাজীগঞ্জ / হাজীগঞ্জে ফায়ার সার্ভিসের নিষেধাজ্ঞা ঠেলে বহুতল ভবনে অবৈধ বেকারী
ma moni bekary

হাজীগঞ্জে ফায়ার সার্ভিসের নিষেধাজ্ঞা ঠেলে বহুতল ভবনে অবৈধ বেকারী

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বহুতল ভবনের নিচে গড়ে উঠেছে অবৈধ বেকারী। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সরেজমিনে গিয়ে নিশেধাজ্ঞা প্রধানের পরও চলছে মালামাল তৈরীর কার্যক্রম।

জানা যায়, পৌর ৫নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মকিমাবাদ এলাকায় মজুমদার কটেজ নামে ৮ তলা ভবনের নিচ তালায় মা-মনি বেকারীর কার্যক্রম চলে আসছে গত ৬ মাস ধরে। উক্ত ভবনের উপরের তলায় আবাসিক ভাড়াটিয়াদের বসবাস।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মজুমদার কটেজের নিচ তলার পুরোটাই মা-মনি বেকারীর বিস্কুট, কেক, পাউরুটি, জন্মদিনের কেকসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারী আইটেম ভোক্তাদের জন্য তৈরি করা হয়। আর এগুলো তৈরিতে অবৈধ ভাবে ৪টি চিমনিতে সিলিন্ডারযুক্ত বয়লারের মাধ্যমে আবাসিক গ্যাসের চারটি বড় পাইপ চলমান রয়েছে। আর এতে করে পুরো ভবন বয়লারের তাপে গরম হয়ে থাকে। ফলে যে কোন সময় বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে ঘটতে পারে ঢাকার নিমতলীর ট্রাজেডির মতো বড় দুর্ঘটনা।

নিয়ম অনুযায়ী কোন আবাসিক ভবনের নিচে বানিজ্যিক কারখানা গড়ে উঠার সুযোগ নেই। সেখানে আবাসিক ভবনের নিচে অবৈধ ভাবে আবাসিক গ্যাস ব্যবহার করে কার্যক্রম চালাচ্ছে মা-মনি বেকারী। অনুসন্ধান করে দেখা যায় তাদের বিএসটিআই লাইসেন্স নেই। অথচ হাজীগঞ্জ, রামগঞ্জ, শাহরাস্তি, কচুয়াসহ অন্যান্য জেলায়ও তাদের মালামাল বাজারজাত করে আসছে।

আরো জানা যায়, ১৯৯৮ সালে মা-মনি বেকারী আলীগঞ্জে গড়ে উঠেছে। সেখানে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের উক্ত ছাড়পত্র নবায়ন না করে বর্তমান এ বহুতল আবাসিক ভবনের নিচে অবৈধ ভাবে বেকারীর কারখানা দিয়েছে। এমন খবরের ভিত্তিতে হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা গত ১৫ দিন পূর্বে কারখানা বন্ধের নোর্টিশ দিয়ে আসলেও তাদের মালামাল তৈরির কার্যক্রম এখনো চলছে নির্বিগ্নে।

এদিকে মজুমদার কটেজের বসবাসরত ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি এ ভবনের নিচে বেকারী রয়েছে। কিন্তু রাতের বেলায় তাদের বেকারীর চুলা চলা অবস্থায় পুরো বিল্ডিং গরম হয়ে যায়। অনেক ভাড়াটিয়া ভবন ছেড়ে অন্যত্রে চলে গেছে আবার অনেকেই উক্ত ভবন থেকে নেমে যাওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছেন বলে জানা যায়।

তবে ভবনে থাকা কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরাও নিমতলী ট্রাজেডির কথা ভুলিনি। আমরা জানতে পেরেছি মা-মনি বেকারীর ৪টি ৩০০শ’ ফিটের বয়লারের মাধ্যমে বেকারী আইটেম প্রতিদিন তৈরিতে যে পরিমাণ তাপ ছড়াচ্ছে এতে দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। বয়লার বিস্ফোরণ ঘটলে আমরা কেউই প্রাণে বাঁচতে পারবো না। বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্টদের এখনি নজরে নেয়ার দাবি করছি।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এর স্টেশন অফিসার মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের লোক এরইমধ্যে মজুমদার কটেজের নিচে মা-মনি বেকারির মালিককে মালামাল তৈরির কার্যক্রম বন্ধ রাখার নোটিশ করেছে। বর্তমানে উক্ত বেকারি চলমান থাকলে আমি নিজে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মা-মনি বেকারীর মালিক রিপন মজুমদার বলেন, আমার বেকারী পূর্বে আলীগঞ্জ ও পরবর্তীতে বাজারের টিন পট্টিতে ছিল। শুধুমাত্র সেখান থেকে আমি এখানে স্থানান্তর করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছি তারা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বিএসটিআই অনুমোদনের কাগজপত্র প্রক্রিয়া নিয়েছি ২০১৮ সালের জুনে আবেদন করবো। অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করছি তা ঠিক নয় আবাসিক ও বাণিজ্যিকের জন্য দুইটি রাইজার রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন যে কারনে বন্ধ রাখতে বলেছে তা অফিসে গিয়ে সমাধান করবো। এখানে উপরের আবাসিক বাড়াটিয়াদের কোন ক্ষতি হবে না বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল আলম মজুমদার বলেন, নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করে রাখবো এবং স্যানিটেশন ও ফায়ার সার্ভিসকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে যাবো। তবে এ ধরণের আবাসিক ভবনের নিচে যে কোন কারখানা গড়ে উঠা সম্পূর্ণ রূপে বে-আইনি।

প্রতিবেদক- জহিরুল ইসলাম জয়
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১:৩৩ পিএম, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ রোববার
ডিএইচ

Leave a Reply