Home / বিশেষ সংবাদ / সাদিয়া, তানিয়া, কখনো নদী পরিচয়ে ঢুকে পড়েন বাসা বাড়িতে!
সাদিয়া, তানিয়া, কখনো নদী পরিচয়ে ঢুকে পড়েন বাসা বাড়িতে!

সাদিয়া, তানিয়া, কখনো নদী পরিচয়ে ঢুকে পড়েন বাসা বাড়িতে!

রাজধানীর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বিচরণ তার। কখনো সাদিয়া, কখনো তানিয়া, কখনো নদী পরিচয়ে ঢুকে পড়েন বাসাবাড়িতে। সেখানকার অভিভাবকদের মেয়ের বা নাতি-নাতনির বন্ধু-বান্ধবী হিসেবে ভাব জমান। একপর্যায়ে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী লুট করে পালিয়ে যান তিনি।

প্রতিনিয়ত এভাবে অভিনব প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এই বহুরূপী নারী। অবশেষে ৯ আগস্ট উত্তরার আজমপুরের আমির কমপ্লেক্সে এক অভিযানে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এ সময় তার কাছ থেকে নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা ও বেশ কয়েক ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। এরপর পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ১৮ নম্বর বাসার দ্বিতীয়তলায় ভাড়া থাকতেন তিনি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে তানিয়া বান্ধবীর পরিচয় দিয়ে অন্তত চারটি বাসায় অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করেন। তার প্রতারণার ফাঁদগুলো ঘটনা আকারে সাজানো হলো।

ঘটনা-১ : উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়িতে গিয়ে রুনা আক্তারের কাছে তার মেয়ের বান্ধবীর পরিচয় দেন তানিয়া। এ সময় রুনার সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন তিনি। এভাবে বেশ ভাব জমিয়ে গল্পগুজবে মেতে উঠে সুযোগ বুঝে রুনার বাসায় থাকা নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান ওই প্রতারক নারী।

ঘটনা-২ : উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ৪৪ নম্বর বাড়িতে দিলারা বেগমও আটকা পড়েছেন তার প্রতারণার জালে। সেখানে দিলারার বাসায় নাতনির বান্ধবীর পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করেন এই প্রতারক নারী। একইভাবে বিভিন্ন আলাপচারিতায় ভাব জমিয়ে টাকা-পয়সা নিয়ে সটকে পড়েন তিনি।

ঘটনা-৩ : উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের ২৬/ই নম্বর বাড়িতে রোকেয়া বেগমের কাছে প্রতারক তানিয়া পরিচয় দেন মেয়ের বান্ধবী বলে। তার কাছে নিজের মূল্যবান সামগ্রী খুইয়ে থানায় অভিযোগ করেন রোকেয়া।

ঘটনা-৪ : উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়িতে ঘটে আরেকটি অভিনব প্রতারণার ঘটনা। সেখানে সর্বশেষ মিশন সফলতার সঙ্গে শেষ করে গৃহকর্ত্রী ফাতেমা আক্তারের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেন তানিয়া। তবে এর পরই পুলিশের কাছে ধরা পড়তে হয় তাকে।

জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. এজাজ শফি বলেন, ‘প্রতারক ওই নারী অভিনব কৌশলে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গিয়ে টাকা-পয়সা লুট করে।’

কোথাও সে মেয়ের বান্ধবী আবার কোথাও নাতি-নাতনির পরিচয় দিয়ে এসব কাজ করে আসছিল।’ অন্যদিকে ১১ জুন বনানীতে একটি বাসা থেকে আরেক প্রতারক নারী অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে ১০ ভরি সোনা চুরি করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বনানীর ১৭/এ রোডের ৮২ নম্বর বাড়িতে। ঘটনার দিনই বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ভুক্তভোগীরা।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভুক্তভোগী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমার মেয়ের বান্ধবী পরিচয় দিয়ে নওশিন নামে এক নারী বাসায় আসে। সে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে বলে জানায়।

তার ভাইয়ের বিয়ের কার্ড দেওয়ার কথা বলে ড্রয়িং রুমে বসে গল্পগুজব করতে থাকে সে। একপর্যায়ে তার কাছে থাকা ডলার আমার আলমারিতে এক রাতের জন্য রাখবে বলে অনুরোধ জানায়। পরে তার কাকুতি-মিনতিতে আমি রাজি হই।

এই সুযোগে সে আমার বেডরুমে প্রবেশ করে। পরে আমি তার দেওয়া প্যাকেটটি আলমারিতে রাখি। এরপর সে আমাকে সুন্দর লাগার কথা বলে ড্রেস চেঞ্জ করতে বলে। আমিও তার কথা অনুযায়ী ড্রেস চেঞ্জ করতে যাই।

পরক্ষণে ফিরে এসে দেখি সে আমার বেড রুমে নেই। তাত্ক্ষণিকভাবে যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে আলমারি খুলে দেখি তার দেওয়া প্যাকেট শুধু কাগজে ভরা। সেই সঙ্গে ড্রয়ারে রাখা আমার ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে গেছে সে।’

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫:৩০ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ

Leave a Reply