কলেজছাত্রী হত্যার নেপথ্যে দেবর-ভাবীর পরকীয়া

কক্সবাজারে পরকীয়া সম্পর্কের বলি হয়েছেন কলেজছাত্রী হাসিনা আকতার। বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দিন দেবর-ভাবীর পরকীয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।

ওইদিন রাতে মেজো ভাবীর (স্বামী প্রবাসী) রুমে গিয়ে খেলা দেখেন কলেজছাত্রী হাসিনার স্বামী ইয়াছিন আরাফাত। সারা রাত নিজ শয়নকক্ষে না আসায় ডাকতে গিয়ে নিজ স্বামীকে মেজো ভাবীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেন হাসিনা।

স্বামীর পরকীয়া দেখে ফেলায় ওই রাতেই তাকে বেদম প্রহার করে স্বামী। এরপর আরও কয়েকবার স্বামীর হাতে মারধরের শিকার হন হাসিনা, যা শ্বশুরালয়ের সবাই জানেন।

সর্বশেষ ২৯শে মার্চ একই ঘটনা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া বাঁধে।

হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগেও বাড়ির অন্যদের সঙ্গে ইয়াছিনের ঝগড়া হয়। ওই ঝগড়ার সূত্র ধরে নিজের কুকর্ম লুকাতে ২৯শে মার্চ হাসিনাকে পরিকল্পিতভাকে হত্যা করে স্বামীসহ শ্বশুরালয়ের লোকজন। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন নিহত হাসিনার পরিবার।

তারা অভিযোগ করেন, কক্সবাজার সরকারি কলেজের ম্যানেজমেন্ট (অনার্স) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী হাসিনা আকতার হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে শক্তিশালী মহল উঠেপড়ে লেগেছে। পরিকল্পিত হত্যার পর ঘটনাটি ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রমাণ করতে ঘাতকচক্র উঠেপড়ে লেগেছে।

ইয়াছিন নিজেকে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ভিন্নধারায় প্রবাহিত করতে জোর তদবির শুরু করেছে। তাদের টার্গেট একটাই, যে কোনো মূল্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুকূলে নেয়া। আর ঘাতকচক্রকে বাঁচানোর জন্য শক্তিশালী একটি চক্র কাজ করছে বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

পরিবারের পক্ষে হাসিনার ভাই দেলোয়ার বলেন, ২৫শে ফেব্রুয়ারি ইয়াছিনের সঙ্গে হাসিনার বিয়ে হয়। ইয়াছিন আরাফাত শহরের বিলকিস মার্কেটস্থ সালমা এন্টারপ্রাইজের মালিক ও চৌফলদণ্ডির মধ্যম মাইজপাড়ার মোস্তাক আহমদের ছেলে। বিয়ের কদিন যেতে না যেতেই দোকানের প্রয়োজনের কথা বলে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে ইয়াছিন। আমাদের আর্থিক দৈন্যতায় দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় হাসিনাকে বেশ কয়েকবার মারধরও করে ইয়াছিন।

দোকানে আসা-যাওয়ার সুবাদে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে ইয়াছিনের অবৈধ সম্পর্ক হয়। বিয়ের পর হাসিনা এসব ঘটনা জেনে তার স্বামীকে ভুল পথ থেকে সরিয়ে আনতে অনেকবার চেষ্টা করে। কিন্তু স্বামী তাতে পাত্তা দেয়নি।

পরিকল্পিত হত্যার পর ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রমাণ করতে ঘরের চালের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে হাসিনার মৃতদেহ। ওই অবস্থা থেকেই উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে পুলিশ।

এ ঘটনায় স্বামী ইয়াছিন আরাফাতকে প্রধান আসামি করে নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলো দেবর জাহেদুল ইসলাম, শ্বশুর মোস্তাক আহমদ, শাশুড়ি হোসনে আরা বেগম ও জা রেবেকা বেগম।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হাসিনার মা জুহুরা বেগম, ভাই জাকির হোসেন, জামাল হোসেন, পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহনেওয়াজ চৌধুরী প্রমুখ। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসিনা আকতারের স্বামী ইয়াছিন আরাফাত।

অজ্ঞাত স্থান থেকে তিনি জানান, তাদের বিয়ের বয়স মাত্র ১ মাস। নতুন বউ নিয়ে যেখানে আনন্দ করে ঘুরে বেড়ানোর কথা, সেখানে তাকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা কখনো ভাবেননি। তিনি স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসতেন বলেও জানান।

ভাবীর সঙ্গে পরকীয়ার বিষয়ে ইয়াছিন আরাফাত জানান, এটি অবাস্তব কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছু নয়।

Share