জহিরুল ইসলাম জয়, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) | আপডেট: ০২:৫৫ অপরাহ্ণ, ০৪ আগস্ট ২০১৫, মঙ্গলবার
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ খাদ্য গুদাম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাদ্য গুদাম অধিদপ্তরের ভারপাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদা আবেদীন যোগদানের পর থেকে সব চেয়ে বেশি অনিয়ম ও দুর্নীতি মাত্রা বেড়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কয়েকজন কর্মকর্তারা এমন অভিযোগ করেন ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৮ শে জুলাই খাদ্য গুদামে থাকা ২ বস্তা গম থানা রোডের একটি চায়ের দোকানের পেছনে পড়ে আছে। দোকানদার হাজীগঞ্জ খাদ্য গুদাম ঘর থেকে ক্রয় করেছেন বলে স্বীকার করেন।
তাৎক্ষণিক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের দোষ দেন। ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপাপ্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে এড়িয়ে যান।
বড় অনিয়মের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ বছর হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে বেপারীদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা। খাদ্য গুদাম অধিদপ্তরের জন্য এ বছর ২শ টন ধান নির্ধারণ করা হলেও অফিস তথ্য মতে মাত্র ক্রয় করা হয়েছে ৫২ টন।
অভিযোগ রয়েছে এ বছর কোনোপ্রকার মাইকিং প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই উপজেলা খাদ্য গুদাম অধিদপ্তর কর্মকর্তা সরকারের নির্ধারিত সময়ে ধান ক্রয় না করে গত ১৫/২০ দিন পূর্বে মাত্র ৫২ টন ধান ক্রয় করেন।
খাতা কলমে কিছু কৃষক নামধারী সিন্ডিকেট বেপারীর মাধ্যমে ধান ক্রয় করেছে বলে বঞ্চিত কৃষকরা অভিযোগ করেন। সরকার নির্ধারিত এ বছর কৃষকের ধান প্রতি কেজি দাম ধরা হয়েছে ২২ টাকা করে। অথচ হাজীগঞ্জ উপজেলায় কিছু সিন্ডিকেট ধানের বেপারী কৃষকদের ভুলভাল বুঝিয়ে ১৮/১৯ টাকা ধরে ক্রয় করে খাদ্য গুদাম অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মোটা অংকের টাকার ব্যবসা করেছে বলেও জানাযায়।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন কৃষক সর্বনি¤œ ৪০ কেজি ও সর্বোচ্চ ৭৫ মন ধান বিক্রয় করতে পারবে। সেখানে এক এক জন কৃষক নামের বেপারী তারও বেশি ধান বিত্রয় করে সুবিধা নিয়েছে বলে অভিযোগ খাদ্য গুদাম অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু কর্মকর্তার ।
খাদ্য গুদাম অধিদপ্তরের অফিস সূত্রে বিক্রয়কৃত কৃষকের তালিকা মাত্র ২০ জন। তাদের মধ্যে রয়েছে গন্ধর্ব্যপুর এলাকার কৃষক আলমগীর, কংগাইশ এলাকার ফারুক, এনায়েতপুরের এরশাদ মিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরা কেউই প্রকৃত কৃষক নয়। তারা মূলত ধানের বেপারী। প্রতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে তা মওজুদ করে রেখে ব্যবসা করে।
উপজেলার মোহাম্মদপুর এলাকার রফিকুল ইসলাম, আহম্মদপুরের জয়নাল আবেদীনসহ কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আমরা ধান নিয়ে এ বছর খুব বিপাকে ছিলাম। তাছাড়া এ বছর সরকারিভাবে কোনো মাইকিং কিংবা প্রচার-প্রচারণা করতে শুনিনি। তারপরেও খাদ্য গুদাম অফিসে ধান নিয়ে গেলে তারা ধানের আর্দ্রতা, মিশ্রণ, অপুষ্ট-বিনষ্ট ছিটা দানাসহ নানা অজুহাতের কথা বলে ক্রয় না করে ফিরিয়ে দেয়।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আরো জানা যায়, হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা তাদের বরাদ্ধকৃত গম চাল খাদ্য গুদাম থেকে না এনে গুদাম ঘরের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছে কম দামে নগদ টাকার চেক উঠিয়ে আনে। পরে এসব মাল বড় বড় পাইকারদের কাছে কর্মকর্তারা বিত্রয় করে আলাদা মোটা অর্থের সুবিধা পাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায় ।
এসব নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে উপজেলা খাদ্য গুদাম অধিদপ্তরের ভারপাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদা আবেদীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তা এক এক করে নাচক জবাব দেন।
তিনি প্রথমে নিজেকে সৎ ও নির্দোষ দাবি করে চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমার এখান থেকে কোনো প্রকার গম বা চালের বস্তা বিক্রয়ের সুযোগ নেই। কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নিধারিত ধান ক্রয়ের মেয়াদ আগস্ট মাসের মধ্যম সময় পর্যন্ত রয়েছে বলে জানান। এ পর্যন্ত ৫২ টন ধান ২০ জন কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে। এতে কোনোপ্রকার দুর্নীতি হয়নি বলে এ কর্মকর্তার দাবি। কৃষক ও চেয়ারম্যানরা যে অভিযোগ তুলেছে তা সত্য না বলে তিনি আর কোনো জবাব না দিয়ে উঠে যান ।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুর্শিদুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে এর আগে কেউ এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখার পর যদি সত্যতা পাই তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি