একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে চেম্বার করেন ৪ জন দন্ত্য চিকিৎসক। যাদের একজন দেড় বছর আগে মারা গেছেন। এই মৃত চিকিৎসকের নামে এখনও প্রচার হচ্ছে সাইনবোর্ড,ভিজিটিং কার্ড। লেখা হয় রোগীর প্রেসক্রিপসনও। আরেকজন ফক্সি চিকিৎসক। যিনি অন্যের সনদ নিজের নামে ব্যবহার করে রোগী দেখেন। বাকী দুইজন মৃত চিকিৎসকের স্ত্রী এবং কলেজে পড়ুয়া ছেলে। বৈধ কোন সনদ না থাকলেও নামের আগে ডাক্তার লিখে রোগী দেখছেন নিয়মিত।
এভাবেই এতসব অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে চলছে চাঁদপুর হাজীগঞ্জ বাজারের মর্ডাণ ডেন্টাল কেয়ার। যেখাসে ৩৯ বছর ধরে চিকিৎসাসেবার নামে প্রতিরিত হয়ে আসছে ওই এলাকার অসহায় রোগীরা।
৯ এপ্রিল শনিবার দুপুরে সরজমিনে চাঁদপুর-রায়পুর মহাসড়কের উত্তর পাশে হাজীগঞ্জ বাজারের লক্ষ্মী নারায়ন মার্কেটস্থ এই দন্ত্য চিকিৎসালয়ে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই দেখা যায় মৃত চিকিৎসকের ছেলে এক রোগীর দাঁতের সার্জারি করছেন। যিনি একটি দন্ত্য চিকিৎসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্র বলে জানান। অথচ এই ডেন্টাল কেয়ারের সাইনবোর্ড কিংবা প্রেসক্রিপশনে নেই তার নাম। সাইনবোর্ডে যে তিনজন ডাক্তারের নাম রয়েছে তারা হলেন, ডা. মোহাম্মদ আলী, ডা. মাহবুব আলম ও ডা. তাহমিনা আলী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার তাহমিনা আলী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, সাইনবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড ও প্রেসক্রিপশনে নাম থাকা ডা. মোহাম্মদ আলী তার স্বামী। যিনি দেড় বছর আগে মারা গেছেন। আর অধ্যাপক ডা. মাহবুব আলম ঢাকা থেকে এসে রোগী দেখেন। তবে নিজের রাষ্ট্রিয় চিকিৎসা অনুসদ কিংবা বিএমডিসির সনদ না থাকা এবং তার নামের আগে ডাক্তার লেখা ঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি। এছাড়া তার শিক্ষানবিশ ছেলের রোগী দেখাও বৈধ নয় বলে স্বীকার করেন।
ডাক্তার তাহমিনা আলী বলেন, হাজীগঞ্জে এমন বহু ভুয়া ডাক্তার আছেন। বিশেষ করে যারা ডেন্টাল ক্লিনিক দিয়ে চেম্বার করছেন তাদের অনেকের বৈধ কোন কোন সার্টিফিকেট নেই। প্রশাসন তদন্ত করে দেখলে সেটির প্রমান পাবেন।
মডার্ন ডেন্টাল কেয়ারে চিকিৎসা নিতে আসা উপস্থিত বেশ কয়েকজন রোগী সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা ডাক্তার মাহবুবুল আলমকে দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই বলা হয় ডাক্তার ঢাকা আছেন পরবর্তীতে তিনি দেখবেন। যে ডাক্তার নেই এবং যে ডাক্তার মারা গেছেন তার নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এবং প্রেসক্রিপশন ব্যবহার করাটা অন্যায়। তারা আমাদের সাথে প্রতারণা করছে।
এদিকে ডা. তাহমিনা আলী বৈধ চিকিৎসা সনদ না থাকলেও বিভিন্ন ব্যক্তি বর্গের সাথে কথা বলে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
এদিকে উল্লেখিত মর্ডন ডেন্টাল ক্লিনিকের সাইনবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড ও প্রেসক্রিপশনে নাম লেখা প্রকৃত ডাক্তার মাহবুব আলমের সন্ধানে নামে এই প্রতিবেদক। তার বিএমডিসির রেজিস্টেশন নাম্বারের সূত্র ধরে ঠিকানা পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে কথা হলে ডাক্তার মাহবুব আলম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, চাঁদপুরে হাজীগঞ্জ বাজারে মর্ডাণ ডেন্টাল কেয়ারে সাইনবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড এবং প্রেসক্রিপশনে আমার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি কখনোই চাঁদপুরের মর্ডাণ ডেন্টাল কেয়ারে বসিনি। আমার নাম ভাঙিয়ে ডা. তাহমিনা আলী তার ছেলেকে দিয়ে দন্ত্য চিকিৎসা দিচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অন্যায় কাজ। তারা আমার নাম ভাঙিয়ে এটি কখনোই করতে পারে না। আর ডাক্তার তাহমিনা আলী এবং তার ছেলের চিকিৎসা সেবা দেয়ার বৈধ কোন সনদপত্র নেই। এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় গণমাধ্যম ও প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম মাওলা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, একজন মৃত ডাক্তারের নামের সাইনবোর্ড ও প্রেসক্রিশন ব্যবহার করাটা বেআইনি। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, মর্ডাণ ডেন্টাল কেয়ারের বিষয়টি শিগগির খতিয়ে দেখা হবে। অনিয়ম পেলে ছাড় দেয়া হবে না।
প্রতিবেদক: আশিকি বিন রহিম, ৯ এপ্রিল ২০২২