Home / শীর্ষ সংবাদ / হাজীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু
গৃহবধূর

হাজীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় রুবি বেগম (২৫) নামের তিন মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

১৬ জুন বুধবার সন্ধ্যায় ওই উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের মুকুন্দসর গ্রামের বকাউল বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ ওই বাড়ির মানিক বকাউলের স্ত্রী। 

স্বজনরা জানায়, ২০১৪ সালে মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাঁকড়া গ্রামের সেলিম বকাউলের কন্যা রুবি বেগমের সাথে হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের  মুকুন্দসর গ্রামের মজিদ বকাউলের ছেলে মানিক বকাউলের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে রবিন নামে সাড়ে ছয় বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে এবং বর্তমানে সে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

নিহতের ভাই শাহাদাত ও তার চাচা জসিম বকাউল জানান, তাদের বিয়ের দুই বছরের মাথায় রুবির স্বামী মানিক বকাউল প্রবাসে চলে যান। তারপর থেকেই তার শাশুড়ি পারিবারিক বিভিন্ন ছোট খাটো বিষয় নিয়ে রুবিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালাতে থাকে। এসব পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই তার শাশুড়ি এবং স্বামীর সাথে অনেক মনোমালিন্য হতো।

তারা জানান, গত তিন মাস পূর্বে রুবির স্বামী মানিক বকাউল দেশে ফিরে আসলে এইসব পারিবারিক বিষয় নিয়ে শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে নিহত রুবি বেগম তার স্বামীর কাছে নালিশ দেন। কিন্তু তার স্বামী উল্টো উত্তেজিত হয়ে রুবিকে প্রায় মারধর করতো।

ঘটনার কয়েকদিন পূর্বেও একই ভাবে তাকে মারধর করলে সে রাগ করে তার বাপের বাড়িতে চলে যায়। পরে তার বাবা মা তাকে বুঝিয়ে পুনরায় তার শ্বশুরবাড়িতে পাঠান।

পরবর্তীতে সেই একই বিষয় নিয়ে ঘটনার দিন বিকেলে রবি তার স্বামীর কাছে শাশুড়ির এসব অসদাচরণ, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের কথা জানালে তার স্বামী তাকে বেধড়ক মারধর করেন বলে পরিবারের অভিযোগ। 

তারা জানান পরে রুবির শ্বশুরবাড়ির লোকজন বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মেয়ের বাপের বাড়িতে মোবাইল ফোনে কল করে জানান যে, সে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।

পরে তারা খবর পেয়ে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে আলীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে  সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

পরে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক তাকে পুনরায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুবিকে মৃত ঘোষণা করেন। 

পরে হাজীগঞ্জ থানার এস আই রুবেল চন্দ্র সিংহ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পোস্টমর্টেমের জন্য বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করেন। 

এদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন সে বিষপানে আত্মহত্যা করার কথা বললেও রুবি বেগমের পরিবারের অভিযোগ তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে পিটিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

তাদের দাবি তারা গৃহবধূ রুবিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পর, নিজেরা বাঁচার জন্য তাদেরকে আত্মহত্যা করেছে বলে জানান।

এমনই হত্যার অভিযোগ এনে নিহত রুবি বেগমের মাতা ফরিদা বেগম বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকেই নিহত রুবির স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছে বলে জানান তার স্বজনরা। 

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হারুনুর রশীদ জানান, নিহত রুবি বেগমের মাতা ফরিদা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা রুজু হয়েছে। বাকিটা পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পরে বলা যাবে। 

প্রতিবেদকঃকবির হোসেন মিজি,১৭ জুন ২০২১