Home / শীর্ষ সংবাদ / সুস্থ শিক্ষককে অসুস্থ বানিয়ে ফরিদগঞ্জ শিক্ষা অফিসের কাণ্ড
primary
প্রতীকী ছবি

সুস্থ শিক্ষককে অসুস্থ বানিয়ে ফরিদগঞ্জ শিক্ষা অফিসের কাণ্ড

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে অনৈতিক কর্মকা- জড়েয়ে পড়ছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিস। অফিসটির বিরুদ্ধে ব্যপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও এবার অফিসটি জড়িয়ে পরছে প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষা কেন্দ্রে ‘ইনভিজিলেটর’ (কক্ষ পরিদর্শক) নিয়োগ নিয়ে।

অফিসটি চিহিৃত একটির চক্রের যোগসাজসে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভাল ফলাফল ও এ প্লাসসহ অধিক বৃত্তি প্রাপ্তির জন্য অনৈতিক উপায়ে অসাধু শিক্ষকদের গোপনে নিয়োগ প্রদান করছেন।

জানা গেছে, সমাপনী পরীক্ষা সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সমাপনী পরিক্ষা-২০১৯ সভাপতি মো. আলী আফরোজ এবং সদস্য সচিব ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান খান এক অফিস আদেশের মাধ্যমে স্ব-স্ব পরিক্ষা কেন্দ্রের জন্য ‘ইনভিজিলেটর’ নিয়োগ প্রদান করেন। ইতিমধ্যে গত রোববার থেকে যথা নিয়মে পরীক্ষা সারা দেশে একযোগে শুরু হয়।

এদিকে ফরিদগঞ্জ শিক্ষা অফিসের একটি দুর্নীতিবাজ চক্রটি গত ৭ নভেম্বর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের স্বারক নং-উশিঅ/ফরিদগঞ্জ/প্রাশিসপ/২০১৯/১০৩০/২৫ অফিস আদেশকে গোপন করে বিভিন্ন কেন্দ্রে অসাধু শিক্ষকদের ‘ইনভিজিলেটর’ হিসেবে পদায়ন করে। এমনকি সুস্থ্য শিক্ষককে অসুস্থ্য বানিয়ে ফেলছে চক্রটি। অথচ ঐসব অসুস্থ্য শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছেন এবং উপস্থিতি হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিচ্ছেন। ফলে এ নিয়ে উপজেলাময় ছড়িয়ে পরছে নানান গুঞ্জন।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার সরজমিনে ফরিদগঞ্জের কালির বাজার মিজানুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গেলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এই কেন্দ্রে ‘ইনভিজিলেটর’ একজনের বিপরীতে দায়িত্ব পালন করছেন আরেক জন।

এই কেন্দ্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের স্বারক নং-উশিঅ/ফরিদগঞ্জ/প্রাশিসপ/২০১৯/১০৩০/২৫ রামপুর বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হোসেন আহম্মদকে ইনভিজিলেটরের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। অথচ দায়িত্ব পালন করছেন আরেক শিক্ষক এম আর আমিন।

কিভাবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন, জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক এম আর আমিন ও কেন্দ্র সচিব হোসেন আহম্মেদ অসুস্থ, তাই তার বিপরীতে এম আর আমিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এজন্য সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল মোত্তালেব তাকে দায়িত্ব প্রদান করেছেন।

এর সত্যতা জানতে সহকারী শিক্ষক হোসেন আহম্মদ অসুস্থ্য কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমি প্রথম দিন পেটের পীড়াজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় দায়িত্ব পালন করতে না পেরে আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে আমাদেরই আরেজন সিনিয়র শিক্ষক এম আর আমিন সাহেবকে অনুরোধ করেছি ইনভিজিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে।

এখন কোন কেন্দ্রে ডিউটি করছেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমি এখন কোথায়ও ডিউটি করছি না, তবে আমার স্কুলে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছি।

ডিউটি প্রক্সি হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা ছিলো একদিন কিন্তু এখন তো প্রতিদিনই আপনার বিপরীতে এম আর আমিন দায়িত্ব পালন করছেন এটি বিধি অনুযায়ী ঠিক হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আমার প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করেই এমনটি করেছি। তবে প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা কেন্দ্রে কারো ডিউটি প্রক্সি দেয়ার অনুমতি রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি সদুত্ত্যর দিতে পারেননি।

কিভাবে বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত হন জানতে চাইলে জানান, ‘আমি এখন সুস্থ আমি নিয়মিত আমার ক্লাস নিচ্ছি, আমার বিপরীতে অন্যজন ডিউটি করতেছে।’

প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে দায়িত্ব দায়িত্ব ভাগাভাগিত করার বিষয়ে গোজামিলের আশ্রয় নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট দু’শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিও)।

সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল মোত্তালেব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি হোসেন আহম্মেদের অনুরোধ ও অপরাগতার প্রেক্ষিতে তাকে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়েছি। তার বিপরীতে এম আর আমিন সাহেবকে দেয়া হয়েছে।

ইউএনও স্বাক্ষরিত একটি ইনভিজিলেটর টিম থেকে কাউকে বাদ দেয়া বা একজনের বিপরীতে অন্যজনকে ডিউটিতে যুক্ত করা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিউ) হিসেবে আপনার এখতিয়ার আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান হ্যাঁ আমার রয়েছে, আমি বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে আলোচনা করে করেছি একজন শিক্ষকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে। তবে হোসেন আহম্মেদ তাকে অসুস্থতার কথা জানাননি।’

শিক্ষক হোসেন আহম্মেদ বা এম আর আমিনের কাছে এ বিষয়ে কোন চিঠি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এম আর আমিন সাহেব ও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিবকে বলে দিয়েছি। ইনভিজিলেটর তালিকায় হোসেন আহম্মেদের স্থলে এম আর আমিন সাহেবের নাম বসিয়ে দেয়ার জন্যে।

টাকার বিনিময়ে এমনটি করা হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে প্রশ্নে বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আফরোজ চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিও) ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিও) পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্য। কোনো শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে কি সুবিধা-অসুবিধা তা তারা ভালো বলতে পারেন। তবে কোনো শিক্ষককে পরীক্ষা দায়িত্ব পালনে যুক্ত করা বা অব্যহতি দেয়ার আমার সাথে আলোচনা করেই করার কথা।

এ বিষয়ে আপনাকে সংশ্লিষ্ট টিও কিংবা এটিও জানিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে ইউএনও চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘না আমার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। কিন্তু তারা যদি এমনটি করে থাকেন আর বিষয়টি আমার নজরে আসে তাহলে অবশ্যই এটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ফরিদগঞ্জ শিক্ষা অফিসটি দীর্ঘ দিন ধরে দালাল চক্র আর কথিত শিক্ষক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যার কারণে সাধারণ শিক্ষকরা ওইসব নেতাদের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া শিক্ষা অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পান না। কেবল মাত্র কথিত শিক্ষক নেতা দালাল ফাড়িয়াদের মাধ্যমে অনৈতিক লেনদের মাধ্যমে শিক্ষা অফিসকে ম্যনেজ করলেই সেবা প্রাপ্তি মিলে।

চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট, ২০ নভেম্বর ২০১৯