Home / জাতীয় / বাংলাদেশের সিরিজ জয়োৎসবের ঘুড়ি উড়ছে
বাংলাদেশের সিরিজ জয়োৎসবের ঘুড়ি উড়ছে

বাংলাদেশের সিরিজ জয়োৎসবের ঘুড়ি উড়ছে

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট :

এই টিম বাংলাদেশকে ভারত কখনো দেখেনি। বহুবর্ণিল আলোদীপ্ত উচ্ছ্বসিত বাংলাদশকে দেখেনি বলেই বিস্ময়ে স্তব্ধ সফরকারীরা। অথচ শক্তি-সামর্থ্য পরিসংখ্যানে ভারতের জয়জয়কার। ৩১ ম্যাচে ভারতের ২৫ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের মাত্র ৪। তুলনা করার মুখও নেই। তবে চলমান সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের জয়টি ছিল ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। বাংলাদেশ ঠিক যেভাবে আশা করেছে, স্বপ্ন দেখেছে; ঘটেছে তাই। ৪ পেসার; ঠিক সেখানেই ধাক্কা খেয়েছে ভারত।

রোববার বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার অপেক্ষায় থাকা দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়েও বাংলাদেশীদের সিরিজ জয়োৎসবের স্বপ্ন-প্রত্যাশার ঘুড়ি উড়ছেই।

আবারও বৃষ্টির কথা লিখতে হচ্ছে। আবাহাওয়ার পরিভাষাবিদদের মুখের কথা, ‘রবিবার দুপুর গড়াতেই বৃষ্টি; ক্রমে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’ প্রথম ম্যাচের আগেও এমন আগাম বার্তা ছিল। সেই অনুযায়ী রবিবার বৃষ্টি না এলে সব দায় পরিদফতরের।

ধরুন, শনিবারের কথাই। ঢাকায় বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও ছিল না। বরং বারুদে গরমে তপ্ত মিরপুরে দুই দল অনুশীলন করেছে। অবশ্য মাঝেমধ্যে শিস দিয়ে বাতাস বয়ে গেছে। ঢাকার আশপাশে এক পসলা বৃষ্টি হয়েছে; ২-৪ মিনিটের। তাও টিপটিপ লয়ে। অথচ পরিবেশ জ্ঞান-বিজ্ঞানে ঋদ্ধ আবাহাওয়াবিদরা ফলাও করে খামাখাই জানিয়ে রেখেছিলেন ভারত-বাংলাদেশ সিরিজজুড়েই থাকছে ব্রজসহ বৃষ্টির টানা উৎপাত।

প্রথম ম্যাচের একাদশেই থাকার কথা বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ম্যাচেও দেখা যাবে চৌ-পেসার মিশন। ভারতীয় দলের ক্ষেত্রেও হতে পারে তাই।

প্রথম ম্যাচের পর টিকিট যেন লাপাত্তা শহরে। ব্যাংকের টিকিটের তো হদিসই নেই। ক্লাবপাড়ার কর্মকর্তারাও টিকিট বিড়ম্বনা এড়াতে সেলফোন বন্ধ করে রেখেছেন। নিজের প্রয়োজনে এক-দুই মিনিটের জন্য টেলিফোনে জীবন দিতে গিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। এক হাজার একটা মেসেজ চোখে পড়ছে। ফাঁক গলিয়ে ঢুকে পড়ছে ফোন। ফোন বন্ধ রাখার জন্য ‘ইচ্ছা’ মতো গালাগাল শুনতে হচ্ছে। ওই অসহায় কর্মকর্তাদের কারও কারও বাসায়ও হামলে পড়ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা- ‘তাদের টিকিট চাই।’

বড়দের কথা বাদই দিন। টিকিট কোথায় পাওয়া যাবে; এমন ফোনে কান ঝালাপালা মিডিয়ার ছোট প্রতিনিধিদেরও। ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড ৭৯ রানে জয়ের পরদিন থেকেই টিকিট নিয়ে হাহাকার সারাদেশে। বাড়তি টাকা দিয়েও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।

টিকিট কোথায় নেই; আবার টিকিট সবার হাতেই। কীভাবে? দ্বিতীয় ম্যাচ শুরুর আগেই গ্যালারিতে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। ক্রমেই তা দর্শক সীমাও ছাড়িয়ে যাবে। যাদের কাছে টিকিট রয়েছে; তারা তা যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছেন।

বাংলাদেশ-ভারত প্রথম ম্যাচ শুরুর আগে উত্তেজনার পারদ খুব একটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল না। কিন্তু ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া একটি দল; তা ভারতেরও অজানা ছিল না। সেই কারণেই এই সিরিজ শুরুর আগে বলাবলি হচ্ছিল- দিনটি নিজেদের হলেই বাংলাদেশ জিতবে। হয়েছিল তাই। প্রথম ম্যাচে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নতুন রানের মাইলফলকের পাশে স্কোর নোঙর করেছিল ৩০৭ রানে। তার পর তাসকিনে অনুপ্রাণিত-উজ্জীবিত অভিসিক্ত মুস্তাফিজ কাব্যনামার পাশে সাকিব-মাশরাফির ঝলক। তাতেই ভারতের বিপুল-বড় পরাজয়।

ভারতের বিপক্ষে কালজয়ী বিজয়ে সারাদেশ আনন্দে ভাসছে। উৎসব-আমেজের আবহেও আশ্চর্যজনকভাবে গা ভাসাতে নারাজ টিম বাংলাদেশ। অনুশীলনেও সবাই শান্ত এবং পুরোদস্তুর সিরিয়াস; নিজ নিজ ধ্যানে। ব্যাটে, বলে, ফিল্ডিংয়ে। শক্তিশালী ভারতকে হারানোর পরও অনুশীলন মঞ্চে টিম বাংলাদেশ বড্ড ক্যাজুয়্যাল। সিয়াম সাধনার এই মাসে যথেষ্ট সংযমী টিম বাংলাদেশ। অনাহূত কথার বাড়াবাড়ি নেই মাশরাফির মুখে। এমনকি মুস্তাফিজকাণ্ড ঘটে যাওয়া; ম্যাচ ফি কেটে নেওয়ার পরও নির্লিপ্ত সবাই। কারণ, মুস্তাফিজ আবির্ভাবেই কামাল করে দিয়েছেন। ৫০ রানে ৫ উইকেট নেওয়া সপ্রতিভ-উদ্দীপ্ত মুস্তাফিজেই বাজিমাত বাংলাদেশের।

পাকিস্তানকে টানা ৪ ম্যাচে হারানো বাংলাদেশে এখন রীতিমতো ভয় ধরে গেছে ভারতের। তাদের দেশের বোদ্ধাবাবুদের মুখ ফসকে আর আজেবাজে কথা বের হয় না। বরং সর্তক উচ্চারণে সমীহ জাগানিয়া দল হিসেবে বাংলাদেশকে মানছেন।

দেশের মাটিতে টানা ৯ ওয়ানডে জয় দেখে ফেলেছে বাংলাদেশ। এটা বিশাল এক অর্জন। সেই অর্জন আরও সমৃদ্ধ করতে মাশরাফি আরও মরিয়া হয়েই উঠবেন। কেন; প্রথম ম্যাচের জয়কে সন্তুষ্টি মানছেন না কোচ হাথুরুসিংহে। তার কথায় বিস্ময়ের রসদ মজুদ। বলেছেন, ‘শেষ ম্যাচ নিয়ে সবদিক থেকে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কারণ, আমাদের এখনো সব বিভাগেই উন্নতির সুযোগ রয়েছে। আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে এর চেয়ে ভাল খেলেছি। আমি আশাবাদী, পরের ম্যাচে আমরা আরও ভাল খেলব।’

ভারতের এমন পারফর্ম নিয়ে সমালোচনার ঝড় বিশ্বজুড়ে। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের নামে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ধোনিরা যা করেছে; তাতে বাকি রয়েছে মণ্ডুপাত। এমন হারকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। হাত ফসকে; কিংবা মিরাক্যাল কোনো জয়- এমনটা বলার সুযোগ নেই। রোহিত শর্মা বলেছেন, ‘তাদের (বাংলাদেশের) তেমন কিছুই হারানোর নেই। ভারতের সবটাই হারানোর রয়েছে। যে কারণে আমরা অতিরিক্ত সর্তকতা অবলম্বন করছি।’

আপডেট:   বাংলাদেশ সময়  ১১:৫৭ অপরাহ্ণ, ২০ জুন ২০১৫, শনিবার

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না