সবার জন্য আসছে স্বাস্থ্য কার্ড

স্বাস্থ্যসেবা সহজতর করতে আসছে নতুন বছরে শুরু হতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য কার্ড কার্যক্রম। জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা ব্যক্তিগত তথ্যের মতো এ কার্ডে থাকবে নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবার সব তথ্য। প্রথম ধাপে ঢাকা,গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের মোট আট প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম চলবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবার সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এ কার্ডে। এ ছাড়া সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট যাবে ই-মেইলে। ঘরে বসেই রোগীরা হাসপাতালে এপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবে।

কেন এ স্বাস্থ্য কার্ড

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কার্ডের মূল লক্ষ্য হচ্ছে,দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের আওতায় আনা। শেয়ারড হেলথ রেকর্ডের মাধ্যমে সব প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয়ভাবে সংযুক্ত করা।

দেশের প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে নিজস্ব হেলথ আইডির নম্বর। এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয় করা, চিকিৎসাসেবার গুণগত মান বৃদ্ধি, নাগরিকদের অর্থ ও সময় সাশ্রয়, চিকিৎসাব্যবস্থা আরো সুশৃঙ্খল,সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী জানুয়ারির শুরুতে ঢাকা মহানগরের মধ্যে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), আলো ক্লিনিক এবং মানিকগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে রোগীদের স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে।

অধ্যাপক ডা.শাহাদাত হোসেন বলেন,‘এরপর আগামী জুলাই মাস থেকে সারা দেশের সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোতে এ কার্যক্রম শুরু করব। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো পাঁচ বছরে অন্তত ছয় কোটি মানুষকে এ কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা।’

স্বাস্থ্য কার্ডের সুযোগ-সুবিধা

রোগীদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব স্বাস্থ্যসেবার তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এ ডিজিটাল ডাটাবেইস। আগের চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ হারানোর ভয় থাকবে না। রোগীর বহন করে নিতে হবে না কোনো কাগজ। অনলাইনেই থাকবে সব তথ্য।

শুধু স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমেই রোগী পেয়ে যাবে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা। সব পরীক্ষার সব রিপোর্ট চলে যাবে রোগীর ই-মেইল ঠিকানায়। ঘরে বসেই রোগী অনলাইনে হাসপাতালে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নিতে পারবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা.বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘আমরা যখন একজন রোগীকে চিকিৎসা দিই, তখন রোগীর নানা ধরনের অসুস্থতা,পূর্বে কী ওষুধ খেয়েছে, বংশগত রোগ আছে কি না তার নানা কিছু বিবেচনা করতে হয়। অনেক সময় রোগী ব্যবস্থাপত্র হারিয়ে ফেলে বা নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসকের লেখা বোঝা যায় না। এসব কারণে সঠিক তথ্য ছাড়াই চিকিৎসকরা ওষুধ লেখেন। এতে একদিকে রোগীর চিকিৎসা খরচ বাড়ে, অন্যদিকে সঠিক চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। হেলথ কার্ডে এ সমস্যাগুলো কমবে।’

তিনি বলেন,‘আমাদের দেশে আবার ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও আছে। যেমন—কভিড টিকাদানের সময় অনেকে নিবন্ধন করতে না পারার কারণে প্রথমে টিকা নিতে পারছিলেন না। আমি মনে করি, সব জায়গায় একই সুবিধা থাকলে মানুষ উপকৃত হবে। কোথাও আছে কোথায় নেই, এমন হলে রোগীর ভোগান্তি বাড়বে।’

স্বাস্থ্য কার্ড মিলবে যেভাবে

প্রাপ্তবয়স্কদের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন লাগবে। চিকিৎসা নেওয়ার সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত যেকোনো সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধনপত্র দেখালে, প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত নিবন্ধন বুথে গেলে স্বল্প সময়ের মধ্যে কার্ডটি তৈরি করে নেয়া যাবে।

৫ ডিসেম্বর ২০২৩
এজি

Share