Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে শীতকালীন সবজির আবাদ বেশি হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা
শীতকালীন সবজির, শীতকালীন

চাঁদপুরে শীতকালীন সবজির আবাদ বেশি হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা

চাঁদপুরে এ বছর প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। তবে সবজিগুলো উৎপাদন শেষে বিক্রির সময় ন্যায্য দাম না পাওয়ার শঙ্কা কৃষকদের।

কারণ বর্ষার শেষ মৌসুমে সেচ প্রকল্প এলাকার বাইরে জোয়ারের পানিতে একাধিকবার সবজির জমিগুলো প্লাবিত হওয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে দেশের অন্য জেলায় আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে বিক্রি শুরু হলেও চাঁদপুরে বিভিন্ন প্রকারের সবজি সবেমাত্র বাজারে আসতে শুরু করেছে।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত জেলায় শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৩৯৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছিলো পাঁচ হাজার হেক্টর। জেলার ৮ উপজেলার মধ্যে সদরে ৭৬৫ হেক্টর, মতলব উত্তরে সবচায়ে বেশি ৯৬০ হেক্টর, মতলব দক্ষিণে ২২০ হেক্টর, হাজীগঞ্জ ৫৪০ হেক্টর, শাহরাস্তি ২১০ হেক্টর, কচুয়া ৪০০ হেক্টর, ফরিদগঞ্জ ৭৫০ হেক্টর ও চরাঞ্চলের উপজেলা হাইমচরে ৫৫০ হেক্টর জমিতে এ পর্যন্ত সবজির আবাদ হয়েছে।

আবাদকৃত সবজির মধ্যে রয়েছে- লালশাক, মুলাশাক, ধনিয়া, কুমড়াশাক, লাউ, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ডাটা, পুঁইশাক, পালংশাক, খিরাই ও টমেটো। এরমধ্যে কৃষকরা ফুল ও বাঁধাকপির আবাদ করেছেন বেশি। এছাড়া মতলব উত্তর ধনাগোদা সেচ প্রকল্প এবং চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকায় টমেটোর আবাদ বেশি হয়েছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মদনা গ্রামের আব্বাস, ছলেমান ও মোস্তফা শেখ বলেন, বর্ষার শেষ সময়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করার কারণে অনেকেরই শীতকালীন আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন মাঠে লালশাক, মুলা, ধনিয়া, ফুলকপি ও বাঁধাকপি রয়েছে। ফলন ভাল হলেও বাজারে দাম পাওয়া যাবে না।

কারণ এখনই বাজারে ফুলকপি বিক্রি হয় ১৫-২০ টাকায়। আমাদের আবাদি ফুলকপি ফলন শেষ হয়ে বাজারে বিক্রি করতে গেলে পাঁচ টাকা দাম পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে চাষের কাজে বিনিয়োগের টাকা উঠানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। এভাবে শেষ পর্যায়ে সকল শীতকালীন সবজির দাম না পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের চরভাঙা গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, শেষ পর্যায়ে মেঘনার জোয়ারের পানি আমাদের সব ধরনের সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারপরেও অনেক কৃষক আবারও সবজির আবাদ করেছেন। এখন মাঠে টমেটো আবাদ চলছে। ফলনও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে লালশাক, মুলারশাক, কুমড়াশাক, ধনিয়া পাতা একাধিকবার বিক্রি করেছেন কৃষকরা।

হাইমচর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, হাইমচর উপজেলায় প্রতিবছরই শীতকালীন সবজির আবাদ ভাল হয়। এ বছর জোয়ারের পানিতে কিছুটা ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে আবার সবজি আবাদ হয়েছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রণোদনা ও পরামর্শ অব্যাহত রেখেছি। এ বছর এ উপজেলায় শীতকালীন সবজির পরেই নতুন করে সূর্যমুখী ও তরমুজ আবাদের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, চাঁদপুর জেলায় শীতকালীন সবজি জমিতে পানি দেরিতে শুকানোর কারণে আবাদও দেরি হয়। এ বছর অবশ্য বর্ষার শেষ মৌসুমে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী উপকূলীয় এলাকায় সবজির আবাদ বিলম্ব হয়েছে। যে কারণে এখনো অনেক জমিতে টমেটো, খিরাই ও আলুর আবাদ চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত সবজির আবাদ পাঁচ হাজার হেক্টর যে লক্ষমাত্রা ছিলো তা অর্জন হবে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন।

করেসপন্ডেট,৩১ ডিসেম্বর ২০২০