রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের দাবি ছিল, লাইফ সাপোর্ট খুললেই মারা যাবেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মকবুল খান। এতে তার স্বজনরা সব আশা হারিয়ে খোলারই সিদ্ধান্ত দেন। এর আগে পরিশোধ করেন হাসপাতালের সব বিল এবং বাড়িতে লাশের জন্য কবরও খুঁড়েন। পরে ‘লাইফ সাপোর্ট’ খুলে নেওয়া হয়। কিছু সময় পর হাসপাতাল থেকে ‘মরদেহ’ (হাসপাতালের দাবি) বের করার মুহূর্তে চোখ খুলে তাকান মকবুল খান।
মকবুল খানের স্ত্রী সংগীতশিল্পী দিলরুবা খান। তাঁদের মেয়ে শিমুল খান জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের কারণে গ্রামের বাড়ি নাটোরে মকবুল খানের জন্য কবরও খোঁড়া হয়। তাঁর বাবা বর্তমানে অন্য একটি হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শিমুল খান বলেন, ‘লাইফ সাপোর্ট খোলার পরই দেখি বাবা চোখ খুলে তাকিয়েছেন। তাঁর চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। দ্রুত ওই হাসপাতাল থেকে তাঁকে নিয়ে হলিফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাই। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখার পর আজ সোমবার বিকেল ৩টায় বাবাকে সাধারণ শয্যায় নিয়ে আসা হয়েছে।’
শিমুল খান বলেন, ‘বাবা নাটোরে থাকেন। গত ২ ডিসেম্বর তিনি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত (ব্রেইন স্ট্রোক) কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই তাঁকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে বাবাকে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই রাত পৌনে ১০টায় বাবাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে চিকিৎসকরা বলেন, বাবাকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে, নইলে বাঁচবেন না। এমন কথা শুনে আমি রাজি হই।’
শিমুল খান বলেন, ‘আমরা তো জানি, লাইফ সাপোর্ট মানেই আসলে বাবা মারা গেছেন। এখন যন্ত্রের সাহায্যে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হবে। আমার মাথায় কিছুই কাজ করছিল না। অথচ ওখানে নেওয়ার আগেও বাবার গোঙানি শুনতে পাই আমি।’
শিমুল খান জানান, তাঁর বাবা মকবুল খানকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার আগে বলা হয় প্রতিদিন খরচ হবে ৫০-৬০ হাজার টাকা। তিনি ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।
শিমুল খান বলেন, ‘দু-তিন ঘণ্টা পর বাবার কাছে গিয়ে দেখি তাঁর শরীরে অনেক যন্ত্র লাগানো আছে। পরে মা (দিলরুবা খান) আমাকে বলেন, লাইফ সাপোর্টে রাখা মানেই তো মারা গেছে। তাহলে আর রেখো না ওখানে। পরদিন পৌনে ১২টায় আমাদের বলা হয় লাইফ সাপোর্ট খুললেই মারা যাবেন বাবা। তখন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা দাবি করেন, যে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসছেন উনাকে, সে অ্যাম্বুলেন্সে লাইফ সাপোর্ট খুলবেন। এমনকি ডেথ সার্টিফিকেট দিতেও রাজি হননি তারা। এরপর ৫৭ হাজার ৩২৭ টাকা বিল পরিশোধ করি। এরপর চিকিৎসকরা বাবার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন।’
শিমুল খান আরো বলেন, ‘আমরা তখন খুবই ভেঙে পড়ি। বাবার জন্য কবর খোঁড়া হয় নাটোরে। লাইফ সাপোর্ট খুলে লিফটে ওঠানোর সময়ই বাবা চোখ তুলে তাকান। তাঁর চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। এরপরই আর দেরি না করে বাবাকে নিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে আসি।’
শিমুল খান বলেন, ‘প্রায়ই এভাবেই রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে অনেক হাসপাতাল। আর আমাদের সঙ্গে যা করা হলো তাতে আমি হতবাক।’
এ ব্যাপারে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্মকর্তা বাবলি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হ্যাঁ। এ রকম একটা ব্যাপার আমরা শুনেছি। চিকিৎসকরা বলেছেন, তখন মকবুল সাহেবের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। পরে পরিবর্তন হয়। তবে এ ব্যাপারে আইসিইউর প্রধান অধ্যাপক এম এ মান্নান বিস্তারিত বলতে পারবেন।’ অধ্যাপক মান্নানকে এখন আর পাওয়া যাবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur