Home / স্বাস্থ্য / রোটা ভাইরাস কি ও এর প্রতিকার
rota virus

রোটা ভাইরাস কি ও এর প্রতিকার

ডায়রিয়া হওয়ার একটি অন্যতম কারণ রোটা ভাইরাস। সাধারণত শীতকালে রোটা ভাইরাসের মাধ্যমে শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়।গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়া কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া ।

রোটা ভাইরাস হচ্ছে নবজাতক ও শিশুদের ডায়রিয়াজনিত রোগ ও পানিশূন্যতা প্রধান কারণ। আক্রান্ত হওয়ার ২-৩ দিন পর সাধারণত এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। রোটা ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা না থাকলেও পানিশূন্যতা রোধে বারবার পানি খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়।

চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে হাজার হাজার শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। গত এক মাসে চাঁদপুরের মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ৬ হাজারের অধিক রোটা ভাইরাস আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।

শুধুমাত্র এক সপ্তাহে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় দেড় হাজার শিশু। এতে রোগীর উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসকরা বলছেন, শীত মৌসুম, অপরিছন্ন থাকা ও কাঁচা ফলমূলের সঙ্গে রোটা ভাইরাস বেশি ছড়ায়। তবে অভিভাবকরা আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক পরিচর্যা করলে রোটা ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব। তবে অধিকাংশ অভিভাবক জানে না রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ।

রোটা ভাইরাস নিয়ে সর্বশেষ গবেষণায় আরো দেখা যায়, ডায়রিয়াজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এবং ৬ থেকে ১১ মাস বসয়সী শিশুর প্রায় ৫০ শতাংশ রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত। আর আমাদের দেশে শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সাধারণত শিশুরাই এই রোগে আক্রান্ত হয়। রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শিশুররোগের লক্ষণ সমূহ হলো:

পাতলা পায়খানা হওয়া ;ডায়রিয়ার সাথে জ্বর হয়;ঘন ঘন বমি হয়; শরীর দুর্বল হওয়া; খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া;শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়।

রোটা ভাইরাস কি?
আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরণের রোগের জীবাণু বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সুযোগ পেলেই এরা আমাদের সংক্রমিত করে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। রোটা ভাইরাস তেমনই এক দুষ্ট জীবাণু যা দেখতে চাকার মত। এই ভাইরাস মারাত্মক এক ডায়রিয়া সৃষ্টি করে যা রোটাভাইরাল ডায়রিয়া নামে পরিচিত। আর এই রোটাভাইরাল ডায়রিয়া সব শিশুদের বিশেষ করে নবজাতকের জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।

রোটা ভাইরাসের ভয়াবহতা:
রোটাভাইরাল ডায়রিয়ার কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর ৬ লাখের ও বেশী শিশু মৃত্য বরণ করে। বাংলাদেশের প্রতি বছর প্রায় ২৪ লক্ষ শিশু রোটা ভাইরাস জনিত পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহে ভোগ। প্রতিবছর ৩ লাখেরও বেশী শিশু মারাত্মক সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে প্রায় অনেক শিশু মৃত্যু বরণ করে।

কিভাবে আক্রান্ত হয়?
রোটা ভাইরাস প্রধানত মুখ গহবর দিয়ে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে এবং একজনের কাছে থেকে অন্যজনের দেহে প্রবেশ করে। সংক্রামিত পানি, খাবার, খেলনা এমনকি বিভিন্ন আসবাবপত্র থেকেও এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। রোটা ভাইরাস এ সংক্রামণ হওয়ার ২৮ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।

কি হয়?/লক্ষণ
প্রথমে শুরু হয় বমি, এরপর ধীরে ধীরে পানির মত পাতলা পায়খানা। খুব কম সময়ের মধ্যে ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং পানি শূন্যতা এত বেশি দেখা দেয় যে, যার কারণে জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া জ্বর এবং পেটের ব্যথাও থাকতে পারে। ডায়রিয়া থাকতে পারে ৭ দিন পর্যন্ত।

চিকিৎসা
পানিশূন্যতা পূরন করার জন্য ঘন ঘন খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শিশুর পানিশূন্যতা বেশি হলে এবং মুখে স্যালাইন না খেতে পারলে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তি করে শিরাপথে স্যালাইন দিয়ে পানিশূন্যতা পূরণ করতে হবে।

প্রতিষেধক
রোটা ভাইরাল ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য দুইভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

প্রথমত, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন, শিশু যে সমস্ত জিনিসপত্র ব্যবহার করে সেগুলো সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। শিশু যে সমস্ত খেলনা নিয়ে খেলা করে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং আপনার হাত, এমনকি খাবার তৈরি করার স্থান সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। সর্বোপরি শিশুদের ৬ মাস পর্যন্ত শধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো।
দ্বিতীয়ত, শিশুকে রোটাভাইরাসের টিকা খাওয়ানো। বর্তমানে প্রতিষেধক হিসাবে রোটা ভাইরাস এর টিকা বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

কেন এই টিকা জরুরী?
গবেষণায় দেখা গেছে উন্নত জীবনযাত্রা মেনেও অনেক ক্ষেত্রে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায় না। সর্বোপরি ২ মাস থেকে ৬ মান বয়স্ক শিশুদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী থাকে। তাই এই বয়সের শিশুদের রোটাভাইরাল ডায়রিয়া মুখে খাবার স্যালাইন দিয়ে সারিয়ে তোলা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শিরাপথে স্যালাইন দিয়ে পানিশূণ্যতা পূরণ করতে হয়। তাই এই টিকার বিকল্প নেই।

টিকা কখন দিতে হবে?

রোটা ভাইরাসের টিকা দিতে হবে দেড় মাস থেকে ছয় মাসের মধ্যে। এই টিকা মুখে খাওয়ানো হয়। প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ কমপক্ষে ১ মাস পর ‍দিতে হয়। এই টিকা দিলে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হবে না। শিশু রোটাভাইরাস জনিত ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু থেকে রক্ষা পাবে। সুতরাং শিশুদের জীবন রক্ষার্থে তাদের পরিচর্যার পাশাপাশি রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে পরিত্রান পেতে সময়মত টিকা দিয়ে শিশুদের ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করুণ।

বার্তা কক্ষ
১৭ জানুয়ারি,২০১৯

Leave a Reply