Home / ইসলাম / ‘রোজা, আযানের ধ্বনি আমাকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসে’
‘রোজা, আযানের ধ্বনি আমাকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসে’

‘রোজা, আযানের ধ্বনি আমাকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসে’

ইউরোপীয় নাস্তিক থেকে ইসলাম গ্রহণের মর্মস্পর্শী গল্প বলছিলেন আহমেদ কাশেম (ছদ্মনাম)। রোজা, আযানের সুমধুর ধ্বনি এবং ইসলামী সংস্কৃতি তাকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসে। সেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন এই সাক্ষাৎকারে।

আহমেদ কাশেম (ছদ্মনাম) তার ইসলাম গ্রহণের পুরো প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, যখন আমি প্রথম বাহরাইন যাই তখন আশা করেছিলাম মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ঐতিহ্য দেখব। কিন্তু এখানে দেখলাম বেশিরভাগ মানুষই আলাদা ধর্ম ও বিশ্বাসের অনুসারী। কারণ তারা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছিল। ফলে আমার কাছে ইসলাম অজানাই থেকে যায়। দীর্ঘদিন ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতে পারি নাই।

একদিন আমি আযান শুনলাম। তা আমাকে খুবই আকৃষ্ট করল। আমি মানুষদের জিজ্ঞেস করলে তারা আমাকে অর্থ জানিয়েছিল এবং তা আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় ছিল। তবে এটা ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের তথ্য।

এর দশ বছর পর আমি শারজাহ্ ও দুবাই ভ্রমণ করি। অতঃপর তুরস্ক গিয়ে যা দেখলাম তা আলাদা।

তার মানে এই নয় যে তুরস্কে ইসলাম যথাযথভাবে পালিত হয়। বরং তুরস্কে ইসলামকে নানানভাবে দমন করা হয়। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কিত অনেক আকর্ষণীয় বিষয় খুঁজে পেয়েছিলাম সেখানে।

তুরস্কের রয়েছে ঐতিহাসিক ইসলামি সংস্কৃতি যা আমাকে সরাসরি আকৃষ্ট করে। আমি অটোমান সাম্রাজ্যের বেশ কিছু ইসলামিক স্থাপত্য খুঁজে পাই। ততদিনে বেশ কিছু স্থানীয় মুসলিম আমার বন্ধু হয়।

অতঃপর মাহে রমজান আসল। আমি আমাকে নতুনভাবে খুঁজে পেলাম। আমি অবাক হলাম, মানুষ দিনের বেলা এক কাপ চা-ও খায় না।

আমি খেয়াল করলাম। মনে মনে সেই ধরনের মানুষদের পছন্দ করতাম যাদের এখানে দেখছি। যারা রোজা পালন করত তাদের শ্রেষ্ঠ মানুষ মনে হতো যা আমাকে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে উৎসাহিত করে।

অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে আমি মুসলিম না হয়েও রোজা রাখতে শুরু করলাম। আমি লক্ষ্য করলাম এটা খুবই আরামদায়ক ও মানসিক স্বস্তিদায়ক।

আমি রোজাকে খুবই উপভোগ করতাম। বিশেষ করে মাগরিবের পূর্ব সময়ে রোজাদারদের সঙ্গে শান্তভাবে বসে থাকা। ইফতার গ্রহণের মুহূর্তকে।

এখানে সবাই রোজা রেখেই সারাদিন কাজ করত। যা আমাকে অবাক করত। আমি নিজেও সারাদিন রোজা রেখে কাজ করতাম। ব্যাপারটি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে আগ্রহী করে তোলে।

এমন অবস্থায় কেউ একজন ইউসুফ আলীর ইংলিশে অনুবাদ করা একটি কুরআন আমাকে দেয়। আমি তা পড়ে অদ্ভুত কিছুই খুজে পেলাম না, আমি ভেবেছিলাম হয়তো পশ্চিমা রহস্যজনক গল্পগুলোর মতো হবে, কিন্তু তা ছিল না। প্রকৃতপক্ষে এটা বাইবেলের মতো ছিল না।

বাইবেলকে অসঙ্গতি ও অদ্ভুত গল্পে পরিপূর্ণ মনে হতো। যিশু খ্রিস্টের প্রকৃত বাণী ধারণ করছে বলে মনে হতো না।

আমি বেশি বেশি কুরআন পড়তে আরম্ভ করলাম। যে বিষয়টি আমাকে ইসলামে আকৃষ্ট করল তা হল মহানবী মুহাম্মদ (সা.)।

রাসুল (সা.) জীবনী আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করল কিন্তু তখন পর্যন্ত কেউ আমাকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করেনি।

তুরস্ক থেকে আমি আবার দুবাই ফিরলাম, আলহামদুলিল্লাহ্ আমি এমন একজন বস পেয়েছিলাম যে আমার বন্ধু হয়। সে তার সামর্থ অনুযায়ী আমার সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করত।

পরের শুক্রবারে তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ডাকেন। সেখানে আমি ইসলাম গ্রহণ করি, আল-হামদুলিল্লাহ্। উপস্থিত হাজারো মানুষ আমাকে অভিবাদন জানায়। আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। আমি কখনো এত হাসি মুখ দেখি নাই, কখনোও না।

আমি যেন নতুনভাবে জন্ম নিয়েছি। জীবনকে নতুনভাবে জানতে পারছি।

ইসলামকে নিয়ে আমার অনেক ভুল ধারণা ছিল। যখন কুরআন পড়তে শুরু করলাম। মুসলিমদের সঙ্গে মিশতে শুরু করলাম। তখন থেকেই ইসলাম সম্পর্কে আমার ভুল ধারণা পাল্টাতে থাকে।

Leave a Reply