Home / চাঁদপুর / নিপীড়িত শিশুটি স্কুলে যাচ্ছে না : পাশে এডিসি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
নিপীড়িত শিশু স্কুলে যাচ্ছে না :পাশে এডিসি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

নিপীড়িত শিশুটি স্কুলে যাচ্ছে না : পাশে এডিসি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

কাউকে কিছু জানালে অপহরণ করে নিয়ে শিশু পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেবে এমন হুমকির ভয়ে ৬ দিন ধরে স্কুলে যাচ্ছে না তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা দিনমজুর। বখাটের হুমকিতে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে শিশুর পরিবার।

চাঁদপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মৈশাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এ শিশু ছাত্রীটি প্রতিদিনের মতো স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১৭ মে বাড়ি থেকে রওনা হয়।

ওইদিন সকাল ৯টায় দক্ষিণ মৈশাদী গ্রামের মৃত ইব্রাহিম খাঁর ছেলে মোঃ স্বপন খাঁ (৪০) পথিমধ্যে শিশুটিকে চকলেট ও আচারের লোভ দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী বাগানে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।

শিশুটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন দৌঁড়ে আসলে বখাটে স্বপন খাঁ দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্বপন এলাকা থেকে গাঢাকা দেয়।

এদিকে বিষয়টি জানতে পেয়ে সোমবার (২২ মে) সকালে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আবদুল হাই দুপুরে শিশুটির বাড়ি দক্ষিণ মৈশাদীতে যান এবং তাঁর খোঁজখবর নেন।

তারপর থেকে শিশুটি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিষয়টি জেনে বাবা-মাকে বুঝিয়ে শিশুটিকে বিদ্যালয়ে আসার অনুরোধ জানালে শিশুটি শনিবার বিদ্যালয়ে আসে। কিন্তু তার সহপাঠীরা কেউ তার সাথে কথা বলে না এমনকি পাশেও বসে না।

যে কারণে শিশুটি মন খারাপ করে এক ঘন্টা পর কাউকে না জানিয়ে বাড়ি চলে যায় বলে জানালেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঃ বাসেদ খিলজি। দিনমজুর পরিবারের এ শিশুটি সারাদিন ঘুমায় ও কান্না করে।

কারো সাথে কথা বলে না, মাকে ছাড়া ঘরের আলাদা রুমে যেতে ভয় পায়। এক অজানা আতঙ্ক শিশুটির মাঝে কাজ করছে বলে জানালেন শিশুর মা ফাতেমা বেগম।

শিশুটির সাথে যৌন নিপীড়নের বিচার চেয়ে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের কাছে একটি অভিযোগ দেন শিশুর মা।

পুলিশ সুপারের নির্দেশে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ শনিবার রাতে সম্ভাব্য স্থানে বখাটেকে ধরতে অভিযান চালায়। এদিকে কেন পুলিশকে জানালো এজন্য বখাটে স্বপন ফোনে শিশুর বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলে জানালেন শিশুর বাবা শাহ আলম রাজা।

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়ালি উল্লা অলি শিশু ও তার বাবা-মাকে এলাকায় গিয়ে সান্ত¦না দিয়ে বখাটেকে আটক করে শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দেন।

এদিকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শিশুটিকে জড়িয়ে ধরে তার পড়ালেখার সহায়তাসহ পোশাক ও অন্যান্য উপকরণ কিনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি শিশুটির বাবা-মাকে সান্ত¦না দিয়ে বখাটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন।

এ সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দঃ মৈশাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও স্কুলের ব্যবস্থাপনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

এছাড়া শিশুটির বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নির্লিপ্ত ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি দক্ষিণ মৈশাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক’টি সিলিং ফ্যান প্রদান করবেন বলে জানান।

এ সময় তার সাথে ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম পাটওয়ারী, ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মানিক, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও চাঁদপুর বার্তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদ পাটোয়ারী, যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মির্জা জাকির, মতলবের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কেএম মাসুদ, চাঁদপুর প্রবাহের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার আবদুস সোবহান রানা, মৈশাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোবহান বেপারী প্রমুখ।

দুপুরে শিশুটির বাড়িতে তার বাবা-মা ও শিশুটির খোঁজখবর নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আবদুল হাই।

এসময় দৈনিক চাঁদপুর খবর সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদী, ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মানিকসহ ইউপি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

করেসপন্ডেন্ট
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১ : ২০ এএম, ২২ মে ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ

Leave a Reply