বিশেষ সংবাদ

যুদ্ধে ফেরা সৈনিক কবি নজরুল

১৯১৯ সালে যুদ্ধ থেকে ফিরে কবি দেখলেন ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলন চলছে। ভারতবর্ষ তখন উত্তাল। কবির ভেতর জেগে উঠল দ্রোহ আর তারুণ্যের টেউ। আরো হলো তিনি যুদ্ধে ফেরা সৈনিক,টগ বগে এক যুবক,সুঠাম দেহ ও চাহনি ছিল কবির বীরেরমত বা বীরত্বগাঁথা।

তখন এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহাত্মা গান্ধী। যুদ্ধে থেকে ফিরে কবি আর কোনো চাকরির প্রত্যাশা করেন নি। সওগাত সম্পাদক নাসির উদ্দিন ও ভোলার কবি মোজাম্মেল হককে পল্টুন ভেঙ্গে দিলে এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন,‘আমি এখন বাঁধনহারা’। সম্ভবত: তাই কলকাতায় এসে নজরুল তাঁর শৈশবের বন্ধু শৈলজানন্দের রমাকান্ত বোস স্ট্রীটের বোডিং এর মেছে অতিথি হয়ে উঠেন।

কিন্তু বোডিং এর অন্যান্যরা হয়তোবা পছন্দ করতেন না কবি মুসলমান বলে। খাবারের থালাবাসন শৈলজনান্দ নিজের হাতে ধৈত করে নিত। ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই ঐ বোডিং ছেড়ে কবি ৩২ নং কলেজ স্ট্রীট ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি’র অফিসে উঠেন। যার সম্পাদক ছিলেন কমরেড মুজাফফর আহমেদ। এখানে তাঁর সাথে কমরেড মুজাফফর আহমদের পরিচয় হয় ।

কমরেড মুজাফফর আহমেদ কমিনিস্ট পার্টির রাজনীতি করতেন। নজরুলকে পেয়ে তিনি খূব খুশি হন। কমরেড ভাবলেন-উঠতি কবিকে দিয়ে তিনি মেহনতি মানুষের কথা লিখাতে পারবেন। কমরেড বুঝতে পেরেছিলেন-নজরুলের কবিতা মানেই ‘বারুদ’। এ বাড়িতে আরও দু-তিন জন থাকতেন। তারা হলেন-মোসলেম পাবলিসিং হাউজের মালিক শান্তিপুরের কবি মোজাম্মেল হকের পুত্র আফজালুল হক, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও কাজী আব্দুল অদুদ।

মো.শহীদুল্লাহ হঠাৎ রুম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলে কবি ঐ খালি সিটেই থাকা শুরু করেন। এ সময় তাঁর সাথে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। ছিল শুধু কিছু পোষাক-পরিচ্ছদ, কবিতা আর গানের খাতা , পত্রিকা ও ক’ টা বই। এখানে ক’ দিন থাকার পর তিনি চলে যান চুরুলিয়ায় তাঁর নিজ গ্রামের বাড়ি।

সপ্তাহ খানের থাকার পর তিনি আবার ফিরে আসেন কলকাতায়। এসে সাব-রেজিস্টার পদে চাকরির জন্য নজরুল দরখাস্ত করেন। ইন্টারভিউয়ের কার্ডও পান। কিন্তু মুজাফফর আহমেদ,আফজালুল হক ও অন্যান্য বন্ধুদের পরামর্শে তিনি আর ইন্টারভিউতে অংশ নেন নি। ফলে কবির জীবনে চলে আসে একটি অনিশ্চিত অধ্যায়।

আফজালুল হকের বাবা ছিলেন কবি। তিনি নদীয়া শান্তিপুরের কবি মোজাম্মেল হক। তিনি কবিকে পেয়ে ‘মোসলেম ভারত ’ নামে একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদনার উদ্যোগ নেন। কবিকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেন আফজালুল হক। ১৯২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে কবি মোজাম্মেল হকের ঐ মোসলেম ভারত পত্রিকায় তাঁর বেশ ক’টি কবিতা, গান ও গজল প্রকাশিত হয়। এটি ছিল একটি মাসিক পত্রিকা। এগুলো হলো-বাঁধন হারা,বোঁধন, প্রিয়ায় দেয়া সোরাব,জীবন-বিজ্ঞান, উদ্বোধন ইত্যাদি। ভোলার ঐ কবি মোজাম্মেল হকের সাথে করাচির সৈনিক জীবনে নজরুলের সবসময়ই পত্র বিনীময়হত। তাঁর কাছেও নজরুল সর্বপ্রথম সাহিত্য চর্চারও অনুপ্রেরণা লাভ করেন।

তথ্য সূত্র :মো.হাবিবুর রহমান রচিত ‘ছোটদের নজরুল,‘নবারুণ ও বাংলাদেশ সচিত্র প্রত্রিকা,শেখ মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম রচিত -‘নজরুল জীবনের ট্য্রাজেডি’,ডা.আনিস আহমেদের সম্পাদনায় ‘কাজী নজরুলের জীবনী’এবং ওয়েবসাইড থেকে সংগৃহীত ছবি)(৩য় পর্ব শেষ – চলবে আরও ক’টি পর্ব )

সম্পাদনায় : আবদুল গনি , শিক্ষক, সাংবদিক ও সাধারণ সম্পাদক , নজরুল গবেষণা পরিষদ , চাঁদপুর। ০১৭১৮ ২১১-০৪৪ ৫ ফেব্রæয়ারি ২০২১

Share