প্রবাস

১০ বছর মেয়াদে ই-পাসপোর্ট শুরু হবে কবে থেকে?

বাংলাদেশে দশ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে অনেক আগেই। গত আগস্টে পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর বাড়ানোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে মতামত চাওয়া হয়। সেই মতামতের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনার অনুমোদন দেন।

বাংলাদেশের অনেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ১০ বছর মেয়াদী এই ই-পাসপোর্টের আশায়। কারণ ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টে উপকৃত হবে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। যদিও শোনা যাচ্ছিল, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতেই এই পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু হতে পারে, তবে কাজটি সময় সাপেক্ষ। তাই ই-পাসপোর্ট আসতে আরো সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক আবু আসাদ।

এ ব্যাপারে পরিচালক আবু আসাদ বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি সময় সাপেক্ষ, তাই বিষয়টি আরো একটু সময় লাগবে।’

তবে এ বিষয়ে এই অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের একটি টিম আমরা জার্মানি গিয়েছিলাম, পাসপোর্ট বইয়ের স্যাম্পল কপিটা অনুমোদন করার জন্য আমরা সেটা প্রিন্টের অনুমোদন দিয়ে এসেছি। সেটার কাজ এখনো চলছে। এখন পাসপোর্ট দিতে হলে তো সেটার জন্য শুধু বই দিলেই হবে না, তার সঙ্গে কপিটা অ্যান্ড্রুস করার জন্য প্রিন্টিং মেশিনটাও আমাকে বসাতে হবে। এছাড়া এলসির যে বিষয়টা অর্থাৎ সরকারের সঙ্গে চুক্তির পরে যে এলসি খুলতে হয়, কারণ এলসি না খুললে ঠিক মতো শিফট হতে পারবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া বাজেটের কারণেও কিছুটা দেরি হয়েছে। তারা সময় মতো কাজটা করতে পারেনি। কারণ এলসি দেখিয়ে আমার ওয়ার্কঅর্ডার নিতে হয়, এজন্যও আমাদের কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আর আমরা অলরেডি দেখে আসছি, তাই আশা করছি জানুয়ারি না পারলেও ফেব্রুয়ারিতে আমরা ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টটি চালু করতে পারবো। আসলে জানুয়ারিতে সম্ভব নয়। ফেব্রুয়ারিতে আসলেও সেটা শেষভাগে। কারণ, ফাইনাল অনুমোদনের পর আমরা কপিটা প্রধানমন্ত্রীকে আবারও একবার দেখাবো। তারপর আমরা ফাইনালি ইস্যু করবো।’

শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘পাসপোর্ট ৫ বছর থেকে ১০ বছর করবো। এছাড়া পাসপোর্টের পৃষ্ঠাও বাড়বে। আগে ৪৮ পৃষ্ঠা ছিল আমরা সেটাকে এখন ৬৪ পৃষ্ঠা করছি। র‍্যাপিড ট্রাভেল করে যারা তাদের অনেক বেশি পৃষ্ঠার দরকার হয়, তাদের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ৪৮ এবং ৬৪ দুটোই থাকবে। এছাড়া মেয়াদও ৫ এবং ১০ বছর দুটোই থাকবে। যারা হজে যায়, এরপর চলে আসে, পরে পাসপোর্ট পড়ে থাকে। তারা ইচ্ছা করলে ৫ বছর মেয়াদী নিতে পারবেন। আবার যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে থাকে এবং বাইরে অনেক যাওয়া আসা করে তারা ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট করতে পারবেন।

এছাড়াও ১৮ বছরের নিচে যারা তাদের চেহারার পরিবর্তন হয়, সেক্ষেত্রে তাদের ১০ বছর নয়, ৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট পাবেন। তবে ১৮ বছর থেকে তার ওপরে ৬০ বছর পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট পাবেন। তবে সেক্ষেত্রে ৬০ বছরের ওপরে যারা আছেন, তাদের আবার ৫ বছর মেয়াদেরটা দেয়া হবে। কারণ অনেকেরই দাড়ি বা চেহারার পরিবর্তন হয়।

পাসপোর্টের ফি বাড়ানোর বিষয়ে তিনি জানান, ‘ফি কিছুটা বাড়বে। ফি এর বিষয়টা মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ের।’

ফি এর ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, ‘ফি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এ বিষয়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এখানে আবার ক্যাটাগরিও পরিবর্তন হবে। আমরা এখন দুইধরনের পাসপোর্ট দিচ্ছি। একটা হচ্ছে সাধারণ এবং আরেকটি হচ্ছে এক্সপ্রেস। এছাড়া ভবিষ্যতে হবে সুপার এক্সপ্রেস।’

সুপার এক্সপ্রেসের সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সুপার এক্সপ্রেসটা শুধুমাত্র ঢাকায় অবস্থিত আমাদের তিনটি অফিস থেকেই নিতে পারবে। আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ি ও উত্তরা এই তিন অফিস থেকেই নিতে পারবে। কারণ, সুপার এক্সপ্রেসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট দেয়া হবে। আর ঢাকার বাইরে যেতে হলেও ৪৮ ঘণ্টা লেগে যাবে। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঢাকার মধ্যেই এই সুবিধা পাওয়া যাবে।’

বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ১০ বছর। পাশাপাশি ১০ বছর-উপযোগী উন্নতমানের বই কেনার প্রয়োজন পড়বে। কারণ অধিদপ্তর মনে করে, বর্তমান বই দিয়ে ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট বিতরণ করা সম্ভব নয়।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশি শ্রমিক অধ্যুষিত মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এটি কার্যকর হলে শুধু প্রবাসীরা নন, বাংলাদেশে থাকা নাগরিকরাও উপকৃত হবেন। (সময় টিভি)

বার্তা কক্ষ
১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

Share