Home / বিশেষ সংবাদ / মামা আর দিয়েন না, আমি মরে যাব
মামা আর দিয়েন না, আমি মরে যাব

মামা আর দিয়েন না, আমি মরে যাব

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক | আপডেট: ০৫:৫২ অপরাহ্ণ, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

‘মা আমি আর বাঁচব না, যন্ত্রণায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। ও মা আমাকে তুমি বাঁচাও মা।’ মৃত্যু যন্ত্রণায় এভাবেই ছটফট করছিলো রাকিব। নির্যাতনের পর রাকিবকে প্রথমে নেওয়া হয় কাছের একটি ক্লিনিকে, সেখান থেকে পাঠানো হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ঢাকায় নিতে অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে তার ‍মৃত্যু হয়। হাসপাতালেও রাকিবের মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফটের কথা ভুলতে পারছেন না তার মা লাকি বেগম। তিনি বলেন, ‘রাকিব আমাকে বলে, মা আমি আর বাঁচব না, যন্ত্রণায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। ও মা আমাকে তুমি বাঁচাও মা।’ টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের বাসায় সন্তান হারানো লাকির এই আর্তনাদ ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবাইকে। চোখের জল ধরে রাখতে না পেরে প্রতিবেশীদের অনেকেই বেরিয়ে আসেন।

অভাবের কারণে দেড় বছর আগে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে রাকিবকে মিন্টু মিয়ার গ্যারেজে কাজে দিয়েছিলেন নূর আলম।

লাকি বলেন, ‘গ্যারেজ মালিকের গালমন্দ ও কথায় কথায় মারপিটের কারণে কাজ ছেড়ে পিটিআই মোড়ে নাসিরের গ্যারেজে কাজ নেয় রাকিব। এতেই ক্ষুব্ধ হয় মিন্টু মিয়া।’

সে জন্য একটি শিশুকে মেরে ফেলা হবে- এই বিস্ময় এলাকাবাসীর। ‘কী অপরাধ করেছিল আমার বুকের ধন’- সবার কাছে লাকি এই প্রশ্নের চাইলেও উপস্থিত সবাই ছিল নির্বাক।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের যে চিকিৎসক রাকিবকে দেখেছেন, সেই সুমন রায় বলেন, শিশুটির শরীরে অস্বাভাবিক পরিমাণ বাতাস প্রবেশ করানোয় তার পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি ছিড়ে গিয়েছিল, ফুসফুসও ফেটে যায়।

সোমবার রাতে নগরীর টুটপাড়া এলাকায় একটি মোটর গ্যারেজে মলদ্বারে পাইপের মাধ্যমে হাওয়া ঢুকিয়ে মো. রাকিবকে হত্যা করা হয়।মামা আর দিয়েন না, আমি মরে যাব

মৃত্যু যন্ত্রণায় রাকিব ছটফট করলেও তা নির্যাতনকারীদের স্পর্শ করেনি বলে জানিয়েছে এই শিশুর এক বন্ধু, যে চিৎকার শুনে সেখানে গিয়েছিল। সোমবার রাতে খুলনা নগরীর টুটপাড়া কবরস্থানের কাছে মিন্টু মিয়ার মোটর গ্যারেজের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল আকিব (ছদ্মনাম)। রাকিবের চিৎকার শুনে সেখানে যায় সে। এই শিশুটি মঙ্গলবার বলে, মেশিন দিয়ে যখন রাকিবের পেটের ভেতরে বাতাস ঢুকাচ্ছিল, তখন সে শুধু বলছিল- ‘মামা আর দিয়েন না, আমি মরে যাব’।

খান জাহান আলী সড়কের ওই গ্যারেজে এক সময় কাজ করত ১২ বছরের রাকিব, মালিক মিন্টু মিয়াকে ডাকত মামা। কিন্তু নির্যাতন চালানো হত বলে সেই কাজ ছেড়ে পিটিআই মোড়ে অন্য একটি গ্যারেজে কাজ নেয় সে। সেই কারণে মিন্টু মিয়া ক্ষুব্ধ হয় এবং সেই কারণেই তার উপর নির্মম নির্যাতন চলে বলে রাকিবের পরিবারের অভিযোগ। আর এই নির্যাতনই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় শিশুটিকে।

 

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫