Home / সম্পাদকীয় / মানবদেহে নানা সমস্যার উৎস শব্দ দূষণ
Editorial-Picture

মানবদেহে নানা সমস্যার উৎস শব্দ দূষণ

বর্তমানে চাঁদপুর জেলাসহ সব উপজেলায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি শব্দ দূষণের কবলে আমরা পতিত হচ্ছি। মানবদেহে নানা সমস্যার উৎস এখন শব্দ দূষণ। যার পরিপ্রেক্ষিতে শব্দ দূষণ একটি মারাত্মক পরিবেশগত জাতীয় সমস্যা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

চাঁদপুরে প্রায় ৩ শতাধিক স’ মিল,বাস,ট্রাক,সিএনজি,অটো ,চাল,ডাল ও অন্যান্য কলকারখানা,গ্রেরেজ,ওয়েল্ডিং কারখানা,জেনারেটর,উচ্চ স্বরে মাইক চালানো, স্টীল ও রডের দোকানে, কামারশালায় প্রভৃতির উৎস থেকে প্রচন্ড শব্দ সৃষ্ঠি হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও নদীপথে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার থেকে ভীষণ শব্দ সৃষ্টিতে মানুষের নানা সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে জনসভা ও ওয়াজ- মাহফিলে অসংখ্য মাইকের ব্যবহারে শব্দ দূষণ বাড়ছে।
এ সমস্যা আপামর জনজীবনের স্বাভাবিক পদচারণাকে চরমভাবে বিঘœ ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে তীব্র শব্দদূষণের কারণে আগামী প্রজন্ম মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্রমশ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘিœত করে মেধা চর্চা কমিয়ে দিচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে, শব্দদূষণের ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস,বধির, হৃদরোগ আক্রান্ত করে, মেজাজ খিটখিটে হয় এবং ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয় ও দিচ্ছে।
শহরাঞ্চলের জনপদের নিকটবর্তীতে স্থাপিত বিদ্যমান মিল-কারখানা থেকে নিসৃত শব্দ প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণ করে চলেছে। শহরে যানবাহনের কারণে শব্দ দূষণ আরেকটি বড় কারণ। কিন্তু এসব শব্দ দূষণ রোধে কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নেই।

এ ছাড়া শুধু ঘরের বাইরে, রাস্তায় বা কর্মস্থলেই নয়, ঘরে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন ভেক্যুয়াম ক্লিনার, ফুড বেলেন্ডার ও গ্রাইন্ডার, পাখা থেকেও বিরক্তিকর শব্দ বের হয়। যা জনস্বাস্থ্যের জন্যে বেশ ক্ষতিকর। ফলে সচেতন হয়ে এগুলোর নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবহারে শব্দ দূষণের ভয়াবহতা থেকে দূরে থাকতে হবে।

শব্দ দূষণের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আমাদের সবার জানা উচিত। বর্তমানে শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশে শব্দ দূষণ প্রধান অন্তরায়। দূষিত শব্দ গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য আরো মারাত্মক ক্ষতিকর। আকস্মিক উচ্চশব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়। মাংসপেশিকে সঙ্কোচন করে, পরিপাকে বিঘœ ঘটায় এবং স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি কমিয়ে দেয়।

হঠাৎ বিকট শব্দ যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ণ বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচন্ড চাপ দেয়। এত মানুষে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী হর্ণ মোটরযানের চালক বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে যান চালাতে উৎসাহিত করে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ^ব্যাপি শব্দ সৃষ্টির একটি মাত্রা রয়েছে যার বেশি শব্দ সৃষ্টি করলে তা দূষণের পর্যায়ে পড়ে। সেটি হলো ৬০ থেকে ৭০ ডেসিবল। কিন্তু সময়ের সাথে ক্রমাগতভাবে ৮৫ থেকে ১ শ’ ডেসিবলের শব্দ সৃষ্টি হয়ে পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে।

সব দেশেই শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের আওতায় শব্দ দূষণ বিধিমালা রয়েছে। জনগণের সচেতনতার অভাবে সেসব বিধিমালা যেমন কার্যকর হচ্ছে না তেমনি শব্দ দূষণ রোধ করাও সম্ভবপর হচ্ছে না।

ফলে বিধিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতা জোরদার করতে হবে। এ ছাড়া শব্দদূষণ রোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করাও দরকার। শব্দদূষণের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে আমরা মুক্তি পেতে সার্বিকভাবে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

strong> সম্পাদকীয়
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪:১০ পিএম, ১৮ মে ২০১৮,শুক্রবার
এজি

Leave a Reply