Home / বিশেষ সংবাদ / মাকে কাঁধে বহন করে টানা আটদিন হেঁটেছেন আজিম
মাকে কাঁধে বহন করে টানা আটদিন হেঁটেছেন আজিম

মাকে কাঁধে বহন করে টানা আটদিন হেঁটেছেন আজিম

আশি বছর বয়সী মাকে কাঁধে বহন করে টানা আটদিন হেঁটেছেন ছেলে সৈয়দ আজিম (৪৬) ও তার ছেলে সৈয়দ হোসেন (৩০)। তারপর দেখা পেয়েছেন নাফ নদীর।

আর পিছনে পড়ে থেকেছে আগুনে পোড়া তার স্বপ্নের বাড়ি ও গ্রাম। কিচ্ছু নিয়ে আসতে পারেন নি তিনি। সাজানো সংসার, যত্নে জমানো এটা-সেটা, কোনো কিছুই আনতে পারেন নি। শুধু পেরেছেন বয়সী মাকে সঙ্গে নিয়ে আসতে। আত্মীয়-স্বজন কোথায় আছেন তার কিছুই বলতে পারেন না আজিম।

তিনি বলেন, আমার গ্রামের অর্ধেকের বেশি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা চোখের সামনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে সবুজের মাঝে দাঁড়ানো গ্রামগুলোতে। বলতে বলতে চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায় আজিমের। কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে আসে। পরনের কাপড় দিয়ে চোখ মোছেন। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। তাকিয়ে থাকেন পূর্বের দিকে।

ওদিকেই রাখাইনে তিনি ফেলে এসেছেন সবকিছু। নতুন করে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছেন তাদেরই একজন এই আজিম। আয়ারল্যান্ডের অনলাইন আইরিশ ইন্ডিপেন্ডেন্টে তাদের নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক রবার্ট বারসেল।

তিনি লিখেছেন, সোমবার থেকে নতুন করে আবার রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঢল নেমেছে বাংলাদেশে। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে রাখাইনে অনাহারে কাটাচ্ছে রোহিঙ্গারা। সহিংসতা তাদের পিছু ছাড়ছে না। ২৫ শে আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। তার প্রতিশোধ নিতে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা নৃশংসতা শুরু করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে।

এর ফলে প্রায় ৫ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে শাস্তি দেয়ার কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। তারা এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি খসড়া করেছে। তাতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়, সোমবারও রাখাইনের উত্তরাঞ্চল থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয নিয়েছে পালংখালিতে। সেখানে বিভিন্ন বাঁধ ও হালকা বন সর্বত্রই রোহিঙ্গাতে উপচে পড়ছে। তাদেরই একজন এই সৈয়দ আজিম।

তিনি গ্রামে আগুন দেয়া দেখে ৮০ বছর বয়সী মা ও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশে। এ জন্য বাঁশের সঙ্গে একটি ঝুড়ি ঝুলিয়ে তাতে মাকে বসিয়েছেন। তারপর দু’পাশ থেকে নিজে ও ছেলে ওই বাঁশ কাঁধে নিয়ে মাকে এনেছেন বাংলাদেশে। এভাবে তিনি এক নন। কয়েক হাজার রোহিঙ্গা এসেছেন সোমবার। তারা বলছেন, এখনও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধদের রক্তাক্ত হামলা বন্ধ হয়নি।

এ জন্য মানুষ পালিয়ে এখনও ছুটছে বাংলাদেশের দিকে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ও মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগে মেতে উঠেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ উগ্রপন্থিরা।

জাতিসংঘ একে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করলেও মিযানমার তা অস্বীকার করছে। তারা উল্টো এর জন্য দায়ী করছে রোহিঙ্গাদের। নতুন করে বাংলাদেশে আসতে গিয়ে রোববার নৌকাডুবে কমপক্ষে ১২ জন মারা গেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১৩ জনকে।

সৈয়দ আজিমের ছেলে সৈয়দ হোসেন বলেছেন, রাখাইনে আমাদেরকে ভয়াবহ সব সমস্যার মধ্যে থাকতে হয়েছে। সেখানে খাবার নেই। বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে উঠেছে। পানিতে ডুবে মারা গেছে তার স্ত্রী, তিন বাচ্ছা, মা ও শ্বশুর।

করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ ০৫:০৩ পিএম, ১০ অক্টোবর, ২০১৭ মঙ্গলবার
ডিএইচ

Leave a Reply