Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / মতলব উত্তরে সেলাই মেশিন ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ
সেলাই

মতলব উত্তরে সেলাই মেশিন ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সটাকী-সুগন্ধি গ্রামে দুস্থ নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে হিন্দুসম্প্রদায়সহ বিনামূল্যে ১৫ অসহায় ও বেকার দরিদ্র নারীদের মধ্যে সেলাই মেশিন এবং শিশু কিশোরসহ ১০ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে এ হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় মতলব উত্তর উপজেলার সটাকী বাজার আহম্মদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে গরীব এতিম কল্যানট্রাষ্ট ইউকে এর অর্থায়নে পিএইচপি কোরআনের আলো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পিএইপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতার নির্বাহী পরিচালক হাফেজ মাওলানা মোঃ আবু ইউসুফ ও ইংল্যান্ড প্রবাসী ছালেহি আহমেদ হামিদি যৌথ উদ্যোগে এসব সেলাই মেশিন ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন,পিএইচপি কোরআনের আলো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সটাকী বাজার আহম্মদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাফেজ মাওলানা মোঃ আবু ইউসুফ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ মঞ্জু।

উপজেলার সটাকী বাজার আহম্মদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মোঃ হুমায়ন কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন,মতলব উত্তর থানার ওসি মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল, শরীফ উল্লাহ হাইস্কুল এন্ড কলেজ ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি মোঃ আনিসুল হক,ষাটনল ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম সরকার।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন, শরীফ উল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যাক্ষ শরীফ উল্লাহ, শিক্ষানুরাগী মোঃ আলী আর্শাদ, মিজানুর রহমান মোল্লা, যুবনেতা অম্রাফউদ্দিন টিপু, হারিছ খান প্রমূখ। অনুষ্ঠানে এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র,শিক্ষক,মসজিদের ইমামগনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক,ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় পিএইচপি কোরআনের আলো ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা মোঃ আবু ইউসুফ তিনি বলেন, সমাজের অসহায় এসব নারীদের আত্বনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতেই এসব সেলাই মেশিন বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এলাকার গরীব দুস্থদের সহায়তায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

প্রতিবন্ধিদের সাহায্য সর্ম্পকে হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফ বলেন, ধনী-দরিদ্র্র, সবল-দূর্বল, সুস্থ-অসুস্থ, সবার জন্যে সমতার নীতি বজায় রাখতে সকল ধর্মেই আদেশ দেওয়া হয়েছে। একজন মানুষ কখনও শারীরিক বা মানসিক ভাবে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয় না। কিছু না কিছু সমস্যা তার থাকেই। এই সমস্যা গ্রস্থ ব্যক্তিকে বলা হয় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি। বিশেষ সমস্যা গ্রস্থ’ ব্যক্তিকে ইসলামেও আলাদা সম্মান দিয়েছে। আমরা জানি প্রতিবন্ধী অক্ষম মানুষেরা চিরকালই সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে উপেক্ষিত ও অবহেলিত হয়ে আসছে। কিন্তু প্রতিটি ধর্মের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে সদাচরণ, সাহায্য-সহযোগিতা এবং অন্যদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। যেকোনো বিপদ আপদে তাদেরকে সাহায্য করাই আমাদের সবার দায়িত্ব।

হাফেজ আবু ইউসুফ তিনি আরও বলেন-শারীরিক বা যেকোনো প্রতিবন্ধিতা অক্ষমতা নয়, বরং ভিন্ন ধরনের সক্ষমতা। সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধীরাও দক্ষতা ও পারদর্শিতার মাধ্যমে অনেক কিছু করতে পারে। প্রতিবন্ধীদের মেধা ও প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারলে এরা মানবসম্পদে পরিণত হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে দক্ষতা গড়ে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা যায়। সমাজের সব থেকে প্রান্তিক অংশ অসহায় প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় প্রদত্ত অধিকার সুরক্ষা হচ্ছে কি না, তা সবারই দেখা উচিত। মানবাধিকার, উপযুক্ত পরিচর্যা, অনুকূল পরিবেশ, আর্থিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সমবেদনা পেলে তারা দেশ ও জাতি গঠনে যোগ্য অংশীদার হতে পারে। তাই,আমরা প্রতিবন্ধীদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সহমর্মিতা প্রকাশে অত্যন্ত যত্নবান হই এবং তাদের মানবাধিকার সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হই।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি মঞ্জুর আহমেদ মঞ্জু বলেছেন-প্রতিবন্ধীদেরকে সমাজের মূলস্রোতে এনে উন্নয়নমূলক নানাবিধ কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধিদের কল্যানে উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজে বিদ্যমান নেতিবাচক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তবেই এগিয়ে যাবে সমাজ ও দেশ। পরিশেষে বলতে চাই, প্রতিবন্ধী শিশুরা অন্য গ্রহের কোন প্রাণী নয়, তারা এই সমাজের সাধারণ শিশুর মতো তারাও জন্ম গ্রহণ করেছে। তাদেরকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নাই। তাদেরকে যদি আমরা সঠিকভাবে, উপযুক্ত সময়ে পরিচর্যা করতে পারি তাহলে তারাও তাদের স্বপ্নকে পূরণ করতে পারবে।

পরিবারের জন্য, দেশের জন্য, সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। তখন তারা সমাজের বা দেশের বোঝা হবে না বরং সম্পদ হবে। সুতরাং সবাইকে খুবই সতর্ক হতে হবে এবং প্রতিবন্ধীদের প্রতি অবহেলা নয়, ভালোবাসা আর সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, তাদের মধ্যে রয়েছে খোদা প্রদত্ত তীক্ষ্ন মেধাসম্পন্ন অনন্য প্রতিভা।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ৩০ জুন ২০২২