Home / স্বাস্থ্য / বিজ্ঞাপন ও বিবৃতিনির্ভর সংগঠন বিএমএ!
বিজ্ঞাপন ও বিবৃতিনির্ভর সংগঠন বিএমএ!

বিজ্ঞাপন ও বিবৃতিনির্ভর সংগঠন বিএমএ!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট :

ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ‘বিজ্ঞাপন ও বিবৃতিনির্ভর’ সংগঠনে পরিণত হয়েছে! এক সময় দেশের সরকারি বেসরকারি হাজারো চিকিৎসকের পেশাগত মানোন্নয়ন ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিল এ সংগঠনটি।

পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় রাজনৈতিক দুর্যোগে আন্দোলনে সংগ্রামে মাঠে ময়দানে থেকে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে বিএমএ’র ব্যাপক সুনাম, সুপরিচিতি ও ঐতিহ্য মুখে মুখে আলোচিত হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বর্তমানে বিএমএ কার্যত ‘বাতিল’ সংগঠনে পরিণত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সাধারণ চিকিৎসকদের অভিযোগ, অধিকার আদায়ে বিএমএ এখন আর আগের মতো সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারছে না। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির কারণে মাঠে ময়দানে আন্দোলনের ডাক না দিয়ে দাবি আদায়ে পত্রপত্রিকায় টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন ও বিবৃতি দিয়ে দায় সারছে।

বিএমএ’র জরুরি সভায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিএমএ’র দৈন্য-দশারই বহিঃপ্রকাশ বলে তারা অভিমত দিয়েছেন।

জানা গেছে, ১৫ জুন বিএমএ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে বিএমএ’র ক্ষোভ শিরোনামে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটি দেখে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে চিকিৎসকরা সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছেন।

বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যকরি পরিষদের ১৫ জুনের জরুরি সভায় প্রস্তাবিত ৮ম বেতন স্কেলে চিকিৎসকদের সঙ্গে অন্যান্যদের বৈষম্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সভায় চিকিৎসকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, বিদ্যমান সিলেকশন ও টাইম গ্রেড অব্যাহত রাখা ও ইন্টার্নিদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। প্রস্তাবিত বেতন স্কেল সরকারের স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত করবে বলে মনে হয়।

১৫ জুন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিএমএ’র বিজ্ঞাপন

সুব্রত ঘোষ নামে একজন চিকিৎসক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন ‘ট্রাক ড্রাইভাররাও তাদের অন্যায় দাবি আদায়ের জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দিনের পর দিন মানুষের ভোগান্তিতে ফেলে। আমাদের মেরুদণ্ডহীন চিকিৎসকরা কথায় কথায় ঠুনকো অজুহাতে চিকিৎসক নির্যাতনের দাবিতে কর্মসূচি তো দূরের কথা একটি বিবৃতিও দেয় না, প্রতিবাদ সভাও করে না। লেজুড়বৃত্তি করতে করতে তারা তাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে।

‘সর্বশেষ পে স্কেল বৈষম্য নিয়ে দাবি আদায়ের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে। হা হা হা! হাসবো না কাঁদবো বুঝতেছিনা। তৃতীয় লিঙ্গরাও আন্দোলন করে তাদের দাবি আদায় করে নেয়। আর চিকিৎসকরা। এই দেশে চিকিৎসকরা হলো ক্লিব লিঙ্গ বা চতুর্থ লিঙ্গ। গাছেরও অনুভূতি আছে, শুধু নেই চিকিৎসকদের।’

ডা. আবদুন নুর তুষার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন ‘বিএমএ এখন বাতিল সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু আশা করা যায় না। তারা বিজ্ঞাপন দিয়ে দায় সেরেছে।’

ডা. মেজবাহ করিম লিখেছেন, হালকা প্রতিবাদ না করলেও পারতো বিএমএ।

ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ লিখেন, বিএমএ’র উচিত সংবাদ সম্মেলন করা, জরুরি সভা করতে হবে কেন, পে স্কেল তো ছয়মাস ধরে হচ্ছে। এতদিন তারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছে।

তিনি লিখেন, বিএমএ এমনকি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেউ সাধারণ ডাক্তারদের জন্য নয়। তারা কিছু কোটারি ও হাইব্রিড ডাক্তারদের জন্য।

নাক, কান ও গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিখেছেন, জাতীয় দৈনিক ও মিডিয়া তাদের কথা লিখে না। কটকটে হলুদ রঙয়ের ওপর লাল ও নীল ফন্টে বিজ্ঞাপনের সমালোচনা করে তিনিসহ অনেকে লিখেছেন বিএমএর মতো সংগঠন এ ধরনের রঙ ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দিবে আশা করিনি।

দুদিন আগে বিএমএ মহসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সাধারণ মানুষ আমাদের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে তুলনা করেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ ট্রাক ড্রাইভার ও পুলিশ অফিসারের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন যা পেশার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অমঙ্গলকর।

এছাড়া দু’দিন আগে তিনি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ১৮ জুন সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত, সচিব হওয়ার সুযোগ বাড়ছে, খবরটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কৃত্য পেশাভিত্তিক প্রশাসন স্বাস্থ্য অধিদফতরের একমাত্র সর্বোচ্চ পদ দখল করার ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই মেনে নিব না।

আমরা সরকারের প্রশাসনের সকল স্তরের কাছে আমাদের অবস্থান জানাচ্ছি। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন।

ডাকসুর সাবেক জিএস বর্তমানে বিএমএ’র কো-অপ্ড মেম্বার ডা. মোশতাক হোসেন জানান, ৮ম বেতন স্কেলে অন্যান্য সমমানের ক্যাডারদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিকিৎসকদের বেতন স্কেল ধার্য, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বন্ধ না করা এবং ইন্টার্নিদের বেতনভাতা দ্বিগুণের দাবিতে প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বিএমএ।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে অর্থমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বেতন বৈষম্যসহ তিন দফা দাবি তুলে ধরা হবে। অন্যান্য পেশার ক্যাডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ দাবি আদায়ে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।

আপডেট:   বাংলাদেশ সময়  ০২:২৯  অপরাহ্ণ, ২০ জুন ২০১৫, শনিবার

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না