রাজনীতি

বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন আজ

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা রসায়নবিদ মনসুর রহমান ও মা জাহানারা খাতুন রানী।

পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় জিয়াউর রহমানের ডাক নাম কমল। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে সামরিকবাহিনীর কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন তিনি। জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুইদিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিএনপি ও দলের অঙ্গসংগঠনগুলো। গতকাল দলের তরফ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষ্যে এক বাণীতে শহীদ জিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তার রুহের মসাগফেরাত কামনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, শহীদ জিয়ার জš§দিনে তার প্রদর্শিত পথেই বর্তমানের অগণতান্ত্রিক শক্তি ও আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাভূত করতে হবে।

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনালগ্নে স্বাধীনতার ঘোষণাই তাকে দেশব্যাপী খ্যাতি এনে দেয়। পরে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস সেক্টর কমান্ডার ও ফোর্স কামান্ডার হিসেবে সাহসিকতার সঙ্গে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এরপর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুনর্গঠনকালে দূরদর্শী ভূমিকা পালন করেন। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক অভূত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২৫ আগস্ট তিনি সেনাবাহিনী প্রধান নিযুক্ত হন। ’৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।

এরপর জিয়াউর রহমান ’৭৭ সালের ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে রাজনৈতিক ঐক্যতানে নিয়ে আসা ও সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর কারণে তিনি আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে আখ্যা পান। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনের মধ্যদিয়ে দেশে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির সূচনা করেন।

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নতুন দর্শন উপস্থাপন করেন জিয়াউর রহমান। তিনি ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়ে দেশে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যান। তার প্রতিষ্ঠিত বিএনপি দেশের মানুষের প্রিয় দল হিসেবে ’৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ, ’৯১ সালের পঞ্চম সংসদ ও ষষ্ঠ এবং অষ্টম সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। স্বৈরাচার এরশাদের অধীনে অনুষ্ঠিত ’৮৬ সালের তৃতীয় ’৮৮ সালের চতুর্থ ও সর্বশেষ ’১৪ সালের একতরফা দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে।

’৭১ সালে তার স্বাধীনতার ঘোষণা যেমন এদেশের মুক্তিকামী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছিল, তেমনি ’৭৫ সালে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যখন হুমকির মুখে, তখন সিপাহী জনতার যে অভ্যূত্থান হয় তারই ধারাবাহিকতায় তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসীন হন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর মাত্র চারটি দৈনিক পত্রিকা রেখে অন্য সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল তৎকালীন সরকার।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, অন্যতম এই সেক্টর কমান্ডারের কন্ঠেই স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে এদেশের মুক্তিকামী মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে সাহসী অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর তৎকালীন সরকার তাকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করে। পররাষ্ট্রনীতিকে ব্যাপক পরিবর্তন এনে জিয়াউর রহমান চীনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্কের সূচনা করেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশকে নিয়ে ‘সার্ক’ গঠনের উদ্যোগ জিয়াউর রহমানেরই। ওআইসিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর সংহতি জোরদার করার জন্য তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এ পর্যন্ত পাঁচবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন, বিএনপি প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়নের রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন তিনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে সামরিকবাহিনীর কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বাণী :
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ফখরুল ইসলাম বলেন, এদেশের এক চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মাতৃভূমির মুক্তির জন্য নেতৃত্বহীন জাতির দিশারী হয়ে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন। স্বাধীনতাত্তোর দূঃসহ স্বৈরাচারী দূঃশাসনে চরম হতাশায় দেশ যখন নিপতিত, জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়া যখন বাধাগ্রস্ত ঠিক তখনই জিয়াউর রহমান জনগণের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। ক্ষমতায় এসেই মানুষের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। নিশ্চিত করেন মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা। তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার জন্মদিনে তার প্রদর্শিত পথেই বর্তমানের অগণতান্ত্রিক শক্তি ও আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাভূত করতে হবে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, ন্যায়-বিচার এবং মৌলিক ও মানবাধিকার সুরক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

নিউজ ডেস্ক ।।আপডেট : ২:৩০ এএম১৯জানুয়ারি ২০১৫, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share