Home / জাতীয় / রাজনীতি / বিএনপির হাল ধরতে আসছেন কোকোর স্ত্রী!
Sarmila-Rahman

বিএনপির হাল ধরতে আসছেন কোকোর স্ত্রী!

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে বিএনপির হাল কে ধরবেন সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে। আইনি জটিলতার কারণে দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নেওয়া দূরের কথা সশরীরে উপস্থিত থেকে দলীয় কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করতে না পারায় ‘বিকল্প’ বা ‘সহায়ক’ হিসেবে অন্য কাউকে ভাবতে চাইছে দলটি। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথির বিকল্প পাচ্ছে না তারা। দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। যুক্তরাজ্যে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন বলে এরই মধ্যে স্বীকার করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের জন্য নয়, যুক্তরাজ্যে সাময়িকভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে গিয়ে তারেক রহমান সে দেশের সরকারের কাছে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন।

বিএনপির একাধিক নেতার মতে, শর্মিলা রহমান সিঁথি নিজে রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ না দেখালেও সময়ের প্রয়োজনে হাইকমান্ডের নির্দেশে দলের নানা কর্মকাণ্ডে তাঁকে সম্পৃক্ত হতে দেখা যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে সিঁথির লন্ডন থেকে দেশে আসা, খালেদা জিয়ার সঙ্গে কয়েকবার কারাগারে সাক্ষাৎ, খালেদার বাসভবন ফিরোজায় বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলোচনাসহ তাঁর নানা কর্মকাণ্ড ওই সম্ভাবনা জোরালো করেছে।

বিএনপির ওই নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার অবর্তমানে তারেক রহমানই দলের পথনির্দেশক। তাঁকে সহায়তা করার জন্য যে কেউ কাজ করতে পারেন। তিনি পরিবারের সদস্য হলে আরো ভালো।

জানা গেছে, সিঁথি দেশে এসেছিলেন মার্চের শেষ সপ্তাহে। আর দেশ ত্যাগ করেন চলতি মাসের মাঝামাঝি। বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার মতে, দুই সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকায় জাফিয়া ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। কারাগারে খালেদা জিয়া অসুস্থ—এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর লন্ডন থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে দেশে আসেন সিঁথি। দেশে আসার পরদিনই কারাগারে গিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করেন। সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে গিয়েও শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করেন তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সিঁথি দেশে আসার পর ফিরোজায় তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সে সময় তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বেশ কিছু নির্দেশনা মহাসচিবের কাছে দিয়েছেন তিনি। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে যোগ দেন ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু।

তবে দলটির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পর তাঁর সন্তানরাই বিএনপির কাণ্ডারি হবেন। গৃহবধূকে দলের দায়িত্বে আনার পক্ষে নন বিএনপিপ্রধান। বেশ কয়েকবার জোবাইদার বিষয়ে বেগম জিয়াকে অনুরোধ করা হলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

পারিবারিক সূত্র মতে, কোকো মারা যাওয়ার পর সিঁথি তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে লন্ডনে চলে যান। এখন তাঁরা লন্ডনেই বাস করছেন। তাঁর ভাসুর তারেক রহমানও সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন। কোকোর পরিবারের সদস্যরা একই এলাকায় কিন্তু আলাদা ফ্ল্যাটে থাকছেন। লন্ডনে তাঁদের অভিভাবক তারেক রহমান। শর্মিলা রহমান সিঁথি সাবেক প্রকৌশলী হাসান রাজার মেয়ে। তাঁর জন্ম মাগুরায় মামাবাড়িতে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান না হলেও বৈবাহিক সূত্রে চলে এসেছেন রাজনীতির আলোচনায়।

হঠাৎ দেশে ফেরায় কয়েক দিন ধরেই মাগুরা-১ আসন থেকে শর্মিলা রহমান সিঁথির প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সামাজিক গণমাধ্যমেও চলছে তার প্রচার। শর্মিলার বড় মামা সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী মাগুরা জেলা বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জেলা বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী মজিদ উল হক বিএনপির রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার পর মাগুরা-১ আসনে আরেক সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী থেকে শুরু করে মাগুরা পৌরসভার সাবেক মেয়র ইকবাল আকতার খান কাফুর পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকে দিয়েই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি দলটি। সে কারণে স্থানীয় নেতারা নতুন করে হিসাব-নিকাশ করছেন। এরই মধ্যে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে শর্মিলার নামটি উচ্চারিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তারেক রহমানের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ভবিষ্যতে নিঃসন্দেহ তিনি সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।’

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘বিএনপিতে কে নেতৃত্বে থাকবেন বা কে থাকবেন না তা নির্ভর করবে দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর। আমরা আইনজীবীদের মাধ্যমে চেয়ারপারসন আর যোগাযোগব্যবস্থা ব্যবহার করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সামগ্রিক বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছি। এখন যদি তাঁদের পরামর্শে এই পরিবারের কেউ দায়িত্ব নেন সেটাও এই দুইজনের পরামর্শ মতে হবে। সেটিও ভবিষ্যতের কথা। এই মুহূর্তে এ নিয়ে আমরা ভাবছি না।’

(কালের কন্ঠ)

Leave a Reply