বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি আতঙ্কের বিষয়। বিশেষ করে নতুন বছর এলেই এ আতঙ্ক বেড়ে যায়। বাড়িওয়ালারা ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দেন ভাড়া। এক্ষেত্রে আইনের তোয়াক্কা করেন না তারা। আবার অনেক ভাড়াটিয়া জানেনই না যে, দেশে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে।
‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১’-এ বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত সমস্যা ও সমাধানের কথা বলা হয়েছে। আইনে সুনির্দিষ্ট বেশকিছু বিষয় রয়েছে বাড়ি ভাড়া দেয়া ও নেয়ার ক্ষেত্রে। যেমন- বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে একটি লিখিত চুক্তিনামা থাকতে হবে, যেখানে উভয় পক্ষের স্বাক্ষর থাকবে।
এতে উল্লেখ থাকবে ভাড়ার মেয়াদ, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ভাড়ার পরিমাণ, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস বিলসহ আরও নানা প্রয়োজনীয় বিষয়। বাড়ির অবস্থান ও সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে কত টাকা জামানত হবে, যা চুক্তিনামায় উল্লেখ থাকতে হবে।
এই চুক্তিনামা অবশ্যই দলিল হিসেবে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে করতে হবে। বাস্তবতা হল, এমন আইনের কথা অধিকাংশ ভাড়াটিয়া না জানায় এর সুযোগ নিচ্ছেন বাড়িওয়ালারা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীর মোট জনসংখ্যার ৭২ থেকে ৭৫ শতাংশ লোক ভাড়া বাসায় থাকেন। বলা যায়, ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন বাধ্য হয়ে।
অন্য এক জরিপ বলছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ।
এটা সাধারণ মানুষের জন্য অস্বস্তিকর হলেও কেউ এ নিয়ে খুব একটা ভাবেন না। আইনের বিষয়ে অজ্ঞতাই এর প্রধান কারণ। এর ফলে ভাড়া বাসায় থাকতে গিয়ে ভাড়াটিয়াদের পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়।
বছর না ঘুরতেই বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া, বাড়ির মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী ভাড়াটিয়াকে বিনা নোটিশে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা, ভাড়া নেয়ার সময় করা চুক্তির শর্ত না মানাসহ আছে নানা অভিযোগ। এ অবস্থায় আইনটির বিষয়ে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত আইন না জানার কারণে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে কিছু বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়। এর একটি হল ভাড়া পরিশোধ নিয়ে। আমরা সাধারণত সরাসরি বাড়িওয়ালার হাতে ভাড়া দিয়ে দেই।
এর বিনিময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো রসিদ দেয়া হয় না। কখনও রসিদ দেয়া হলেও সেখানে ভাড়ার পরিমাণ উল্লেখ থাকে না। অথচ আইন অনুযায়ী রসিদ বাধ্যতামূলক।
এছাড়া প্রতিনিয়ত আরও একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি আমরা; আর তা হল ভাড়া বৃদ্ধি। বাড়ির মালিক নানা অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধি করেন। কিন্তু আইনে উল্লেখ রয়েছে, বাড়িওয়ালা চাইলেই ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াতে পারেন না।
সাধারণত দু’বছরের কম সময়ে বাড়ি ভাড়া বাড়ানো যাবে না। এ সময়ের পর বাড়াতে হলে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে আপসে তা নির্ধারিত হবে। এটি নিয়ন্ত্রকও নির্ধারণ করে দিতে পারেন।
কিন্তু এর কোনোটাই মানা হয় না। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অগ্রিম নেয়া বা জামানত। আইনের ১০ ও ২৩ ধারা মোতাবেক বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই বাড়ির মালিক তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের বাড়ি ভাড়ার অধিক জামানত গ্রহণ করতে পারবেন না।
কিন্তু দেখা যায়, প্রায়ই দুই-তিন মাসের অগ্রিম ভাড়া নেয়া হয় ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে। কখনও কখনও এর চেয়েও বেশি মাসের ভাড়া নেয়া হয়। এছাড়া আরও একটি বিষয় রয়েছে, যা আমরা অনেকেই জানি না। সাধারণত বাড়ি মেরামত করার দায়িত্ব বাড়িওয়ালার ওপরই বর্তায়।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিছু কিছু মেরামতের কাজ বাড়িওয়ালা করতে চান না। চাপিয়ে দেন ভাড়াটিয়ার ওপর, যা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। এসব বিষয়ে ভাড়াটিয়া এবং বিশেষ করে বাড়িওয়ালারা সচেতন হবেন, এটাই প্রত্যাশা।
সাহাদাৎ রানা : সাংবাদিক
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur