Home / সারাদেশ / দেশের দুর্গম এলাকায় যেসব সেবা দিতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১
satelite

দেশের দুর্গম এলাকায় যেসব সেবা দিতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১

দেশের দুই শতাধিক হাওর, বিল, প্রত্যন্ত এলাকা ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে এখনও ইন্টারনেট পৌঁছায়নি। ইন্টারনেট সেবার বাইরে রয়েছে ৭৭২টি ইউনিয়ন। যার মধ্যে ২২৬টি একেবারে দুর্গম এলাকায়। এরমধ্যে কয়েকটি ছিটমহলও রয়েছে। এমন সব এলাকায় দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সরকার এসব এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়ে প্রযুক্তি বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ইন্টারনেট পৌঁছালে ওইসব এলাকার শিক্ষার্থী, তরুণরা জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রোগ্রামিংয়ে পিছিয়ে থাকবে না। দূরের শিক্ষার্থীরা অনলাইন স্কুলে পড়বে। ডাক্তার দেখাতে জেলা শহর বা ঢাকায় আসতে হবে না। টেলিমেডিসিনের (দূরচিকিৎসা) মাধ্যমে এলাকায় বসে রোগী নামকরা চিকিৎসক দেখাতে পারবেন, পাবেন ব্যবস্থাপত্র। দ্বীপ এলাকার জেলেদের মাছের দাম জানার জন্য অন্যের পেছনে ছুটতে হবে না, স্মার্টফোনের মাধ্যমে বা বাজার থেকে জেনে নিয়ে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারবেন মাছ।

গত ৫ এপ্রিল ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ সন্দ্বীপ সফরে যান। সন্দ্বীপের জনগণকে কীভাবে কানেক্টিভিটি দেওয়া যায়, ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া গেলে দ্বীপ এলাকাটির কী উন্নয়ন হতে পারে তা সরেজমিন দেখতে যান তারা। সফর থেকে ফিরে আসার পর পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তনের আভাসও মিলেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য বাড়ি বাড়ি ইন্টারনেট। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। সেটা তৈরি করতে গিয়ে দেখেছি এখনও দেশের ৭৭২টি ইউনিয়ন কানেক্টিভিটির আওতায় নেই। এরমধ্যে আবার ২২৬টি আবার অতি দুর্গম এলাকায়। এই ইউনিয়নগুলো এবং ছিটমহলেও ইন্টারনেট পৌঁছাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে আইএসপিগুলোকে (ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) বলবো তোমরা এবার বাড়ি বাড়ি ইন্টারনেট পৌঁছে দাও। সব জায়গায় তো আর বাড়ি বাড়ি পৌঁছানো যাবে না। সেক্ষেত্রে সেখানকার স্কুল, কলেজ, বাজারে ইন্টারনেট পৌঁছানো হবে।’

মন্ত্রী বলেন, যেসব দুর্গম এলাকায় ক্যাবলের (ফাইবার অপটিক) মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছানো যাবে না সেখানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে পৌঁছানো হবে। এরমধ্যে কয়েকটি দ্বীপ এলাকা, ছিটমহল, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিটিআরসির সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে (এসওএফ) এক হাজার ২০০ কোটি টাকার ওপরে জমা রয়েছে। টাকাগুলো ব্যাংকে পড়ে থাকার কোনও মানে হয় না। এসওএফ ফান্ডের টাকা দিয়ে ৭৭২টি ইউনিয়নে ইন্টারনেট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। এসওএফ-এর আগামী মিটিংয়ে ফান্ডের টাকা খরচের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশের বিভিন্ন দ্বীপ এলাকা, হাওর, ছিটমহল, প্রত্যন্ত এলাকা ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছাতে পারলে ইন্টারনেটনির্ভর শিক্ষা দেওয়ার হবে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া টেলিমেডিসিন (দূরচিকিৎসা) সেবা চালুর মাধ্যমে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার কমানো যাবে। জটিল রোগীর চিকিৎসা গ্রামে বসেই করা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, সন্দ্বীপের মাছ ও ফসলের ন্যায্য মূল্য, হাওর এলাকায় মাছ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন স্কুল বা দূরশিক্ষণ অনুষ্ঠান, ছিটমহলের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। অনুন্নত এলাকাকে ইন্টারনেট সভ্যতার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সরকার, কৃষি নিয়ে আমরা যা যা ভাবি তার সবকিছুই এই এলাকায় ইন্টারনেট দিয়ে করা হবে।

জানা গেছে, সার্ক স্যাটেলাইট (সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইট) বাংলাদেশের ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। যদি সার্ক সাটেলাইট বাংলাদেশ ব্যবহার করতে পারে তাহলে দ্বীপ এলাকা, ছিটমহল, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সার্ক স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ইন্টারনেট পৌঁছানো হবে। আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে এ কাজে ব্যবহার না করে তখন ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হবে। সার্ক স্যাটেলাইট ব্যবহার করা সম্ভব না হলে তখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটই হবে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর ইন্টারনেটের উৎস।

আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট হবে সব ধরনের যোগাযোগের মূল উৎস। যেখানে ক্যাবল যাবে না সেখানের জন্য রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।’

তিনি বলেন, ‘দুর্গম, পাহাড়ি ও দ্বীপ এলাকায় ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছানো খুবই ব্যয়বহুল। ফলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের পরিকল্পনাটা সহজ করে দিচ্ছে। ওইসব এলাকার শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিং শিখবে, ঘরে বসে আউটিসোর্সিং করবে। মূল কথা মূলধারা থেকে কেউই পিছিয়ে থাকবে না। কোনও বৈষম্য থাকবে না। সবাই থাকবে এক কাতারে।’

প্রসঙ্গত, এরইমধ্যে দেশের ১ হাজার ২০০ ইউনিয়নে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। এছাড়া সরকারের ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে কানেক্টিভিটি দেওয়া হয়েছে।

বার্তা কক্ষ

Leave a Reply