বিশেষ সংবাদ

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

স্বাধীন বাংলার স্থপতি, বাঙালির জাতির জনক মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান।যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। যার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। শেখ মুজিবের বাংলাদেশ স্বাধীন করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল এদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায় করা। এদেশের মানুষ যাতে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারে ।

পাকিস্তানিদের পরাধীনতার অধীন থেকে এ দেশের মানুষ কে মুক্ত করা।পশ্চিম পাকিস্তান এ দেশের মানুষকে অন্যায় ভাবে নির্যাতন করত, এদেশের ধন-সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। এ দেশের সাধারন মানুষ তাদের প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। যার কারনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে এদেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ ঘোষনা করেন। তার নেতৃত্বে এ দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ দেশকে মুক্ত করার জন্য শত্রু দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীন করা হয়।এদেশ স্বাধীন করতে গিয়ে লাখ লাখ মা-বোন তাদের ইজ্জত হারিয়েছেন। শহীদ হয়েছে এদেশের লাখ লাখ লোক।দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিধস্থ দেশ কে পূণ:গঠন করা। এদেশের মানুষের মধ্যে শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত করা। এদেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তোলা।কিন্তু তার সে স্বপ্ন পূরণ হলো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট রাতে বাংলার কুখ্যাত মা-বাবার কুসন্তান যাদের কে বঙ্গবন্ধু অতি আপনজন হিসাবে জানতেন সে নরপিশাচের দল স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে তার নিজ বাড়িতে হত্যা করে। ধুলিসাৎ হয়ে গেল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন।

ভাগ্যক্রমে দেশের বাহিরে অবস্থান করার কারণে বেঁচে যায় তার দু’ কন্যা সন্তান। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা। শেখ হাসিনা যিনি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।তিনিও তার বাবার স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টঙ্গীপাড়া গ্রামে এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। শেখ মুজিবের ছোটবেলা কাটে নদীতে সাঁতার কেটে, সমবয়সীদের সাথে হেসে খেলে ও দুষ্টমি করে। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান চাকরি করতেন মাদারিপুর কোর্টে সেরেস্তাদার পদে। তিনি কিশোর মুজিবকে নিয়ে এলেন মাদারীপুরে। ভর্তি করে দিলেন মাদারীপুর ইসলামিয়া স্কুলে। এখানে লেখাপড়া করতে করতে মুজিব বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগের চিকিৎসা চলতে চলতে তিনি চোখে গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন।

মাদারীপুর ও ফরিদপুরে চিকিৎসা করে যখন গ্লুকোমা ভালো হলো না তখন পিতা শেখ লুৎফর রহমান মুজিবকে নিয়ে তৎকালীন ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চোখের চিকিৎসক ডা.টি.আহমেদকে দেখাবার জন্য কলকাতায় নিয়ে যান। তিনি মুজিবের চোখ অপারেশন করে চোখে চশমা পরার পরামর্শ দিলেন। সে থেকেই তিনি চোখে চশমা পড়েন। কোলকাতা থেকে ফিরে আসার পর বাবা তাকে গোপালগঞ্জ মিশনারী স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবরেণ্য নেতা হয়ে গড়ে ওঠার প্রথম সূত্রপাত হয় ১৯৪০ সালে। তিনি যখন নবম শ্রেণির ছাত্র। এ সময়ে স্কুল পরিদর্শন করতে আসেন তৎকালীন দেশের প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক। তার সাথে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। স্কুল পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী দলবলসহ কাঁচা রাস্তায় পায়ে হেঁটে কাছেই ডাকবাংলোর দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখা গেল অদূরে কয়েকজন ছাত্র রাস্তা আটকিয়ে কিছু দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য স্লোগান দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদের কাছে যেয়ে বললেন,‘ তোমরা কি চাও? উত্তরে ছাত্রদের নেতা চোখে চশমা, হ্যাংলা লম্বা ছাত্রটি বেশ দৃঢ় ও নির্ভীক কণ্ঠে উত্তর দিল ‘আমাদের স্কুল-হোস্টেলের ছাদ দিয়ে বর্ষাকালে অনবরত পানি পড়ে, এতে আমাদের বইখাতা,বালিশ,তোষক ও লেপ ভিজে যায়।

তাই হোস্টেলের ছাদ মেরামত করার ব্যবস্থা না করলে পথ ছাড়বো না। প্রধানমন্ত্রী বললেন ছাদ মেরামত করতে কত টাকা লাগবে? ছেলেটি নির্ভীক ও অকুণ্ঠ কণ্ঠে বললো বারোশত টাকা লাগবে। প্রধানমন্ত্রী তৎক্ষণাৎ তার স্বেচ্ছাধীন তহবিল থেকে বারোশত টাকা মঞ্জুর করে দিলেন এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এসডিও সাহেবকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুল হোস্টেলের ছাদ মেরামত করার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দিলেন।

ছেলেটিকে কাছে ডেকে কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘তোমার সৎসাহস ও নির্ভীক উত্তরে আমি খুব খুশি। পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা খাদ্যমন্ত্রী পুরো ঘটনাটি লক্ষ্য করছিলেন। ঝানু রাজনীতিক ছিলেন বলে বুঝতে পারলেন ছেলেটিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারলে এ ছেলেটিই ভবিষ্যতে একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। ’

ডাকবাংলোয় পৌঁছেই তিনি পিয়নের মাধ্যমে খবর দিয়ে তাকে ডাকবাংলোয় ডেকে আনলেন। দুজনে অনেক আলাপ আলোচনা করলেন। বিদায় নেওয়ার সময় সোহরাওয়ার্দী নিজের ঠিকানা দিয়ে কলকাতায় দেখা করতে বললেন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব ম্যাট্রিক পাস করার পর কলকাতায় গিয়ে ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তিনি ঠিকানা অনুযায়ী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে দেখা করেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেখ মুজিবকে রাজনীতির বিভিন্ন কলাকৌশলের দীক্ষা দেন। সে থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সোহরাওয়ার্দীর গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক। ছাত্র রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের ওপর যে অকথ্য অত্যচার, নির্যাতন ও শোষণ করেছে তার বিরুদ্ধে তিনি নিজে সমমনাদের নিয়ে একটি নতুন দল গঠন করেন। নতুন দলের নাম রাখা হয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রতিবাদ গড়ে তোলেন।

পর্যায়ক্রমে ৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ভোটে জয়লাভ করেও বাঙালিদের হাতে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় শেখ মুজিব প্রচণ্ড প্রতিবাদ গড়ে তোলায় ১৯৫৮ সালে বাধ্য হয়ে সরকার দেশে মার্শাল ল’শাসন ব্যবস্থা চালু করে। এর পর ’৬২ তে শিক্ষানীতি ’৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় থাকার প্রতিবাদেও শেখ মুজিব প্রচণ্ড আন্দোলন এবং ১৯৭০ সালে সামরিক বাহিনীর তত্বাবধানে সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ভোটে জয়লাভ করেও ক্ষমতালোভী জুলফিকার আলী ভ‍ুট্টোর গভীর ষড়যন্ত্রে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় ১৯৭১’র ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন।

২৫ মার্চ রাতে সারা পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী যে মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে,এরই প্রতিক্রিয়ায় ৯ মাসে নিরস্ত্র বাঙালি হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তাদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে দেশকে শত্রু মুক্ত করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটি ভাষাভিত্তিক অসা¤প্রদায়িক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

স্বাধীন বাংলাদেশের এক গর্বিত বাঙালি হিসেবে আজ আমরা সারাবিশ্বে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি একমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের আত্মত্যাগের কারনে।১৯৪৬ সালে সিলেট জেলা প্রস্তাবিত পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে,নাকি ভারতের অংশ থাকবে তা নিয়ে আসামে বাদানুবাদ সৃষ্টি হয়।

শেখ মুজিব ছাত্রনেতা হিসেবে সিলেট পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির জন্য রেফারেনডামের প্রচারে অংশ নেন। তার সাহসী ভূমিকা ছাত্রসমাজ ও জনমনে দাগ কাটে। তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই বুঝতে পেরেছিলেন এ পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি। ব্রিটিশ শাসনের যাঁতাকল থেকে মুক্তি পেয়ে বাঙালিরা নতুন করে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ও তার আজ্ঞাবাহকদের দ্বারা শোষিত ও নির্যাতিত হতে থাকবে।

পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে সমাবর্তন উৎসবে ঘোষণা দেন,উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। শেখ মুজিবসহ আরও দু’জন ছাত্রনেতা তাৎক্ষনিকভাবে ‘না না না’ ধ্বনি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। এ থেকে শুরু হয় প্রতিবাদী চেতনার নতুন রূপ। তমুদ্দন মজলিস নামক সংগঠনটি ঢাকায় গঠিত হওয়ায় বঙ্গবন্ধু উক্ত সংগঠনসহ ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠন করেন ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’।

এ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ পালিত ‘ভাষা দিবস’। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংগঠিত করার আন্দোলনে আইনের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান সম্পৃক্ত থাকায় অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বহিষ্কৃত হন। ভারত বিভক্তির পর পাকিস্তানের বিশেষ করে বাঙালি জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগের পরিধি কমেনি।

প্রদেশব্যাপী চলছিল পাকিস্তানি শাসকবাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতন। বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও চেতনাকে মুছে ফেলতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে থাকে। বঙ্গবন্ধু মানুষের আবেগ সম্পর্কে সম্যকভাবে অবগত ছিলেন।

মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির বিরুদ্ধে ঢাকার রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন গঠিত হয় প্রথম নিয়মতান্ত্রিক বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগ। এতে মওলানা ভাসানী সভাপতি সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও শেখমুজিব যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন।

ভাষা আন্দোলন ও তৎপরবর্তীতে স্বৈরাচারি মুসলিম লীগের গণবিরোধী রাজনীতি মানুষকে ব্যাথীত করে তোলে। মুসলিম লীগবিরোধী রাজনীতিক দলগুলোকে একত্রিত করার ব্যাপারে দলীয়ভাবে তৎপর হন তিনি। গঠন করেন নির্বাচনী মোর্চা যুক্তফ্রন্ট। সম্মিলিত বিরোধীদলের অংশগ্রহণের ভেতর দিয়ে ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগ রাজনীতির ভরাডুবি ঘটে।

কিন্তু কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকার আদমজীতে বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গার অজুহাতে ৯২ (ক) ধারা জারি করে যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটায়। শেখ মুজিব মন্ত্রী থাকাকালে দলের স্বার্থে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ২১ দফা কর্মসূচী ছিল পাকিস্তানের দু’ অঞ্চলের মধ্যে আঞ্চলিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য থেকে বের হয়ে আসার নীতিচিত্র।

শতকরা ৯৭ ভাগ মানুষের ভোটে বিজয়ী যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতায় বসতে না দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী শাসক গোষ্ঠী বাঙালিদের সাথে বেঈমানী করে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনীতিতে পালাবদল ঘটে।

সামরিক শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন সেনা বাহিনীপ্রধান আইয়ুব খান। শেখ মুজিবুর রহমানসহ বহু রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করা হয়। দশ বছর রাজনীতি করবেন না এমন মুচলেকা দিয়ে আতাউর রহমান খানসহ বহু রাজনীতিবিদ নিরাপদ জীবন অতিবাহিত করতে শুরু করেন। শেখ মুজিব এসময় থেকে বাঙালির স্বাধিকারের বীজ বপন করতে থাকেন।

৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৪-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবিরোধী আন্দোলন, ৬৫-এর মৌলিক গণতন্ত্রী পন্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ইত্যাদি কর্মকান্ডে তিনি ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে সক্রিয় থাকেন। এ সময় পূর্ব বাংলায় সেনাবাহিনী বা নৌবাহিনীর কোন সদর দপ্তর ছিল না। এ বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে তিনি জাতির সামনে বাঙালির ন্যায় ও শাসনসম্বলিত ৬ দফা দাবী পেশ করেন।

এসময় ন্যাপনেতা মাওলানা ভাসানীসহ অনেক ৬ দফাকে সিআইএর দলিল, ‘শেখ মুজিব সাম্রাজ্যবাদের দালাল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। জামায়াতে ইসলামী ৬ দফা কেন্দ্রের শাসনবিরোধী বলে প্রচার চালাতে থাকে। শেখ মুজিব এ সময় শত বিরোধীতা, কারাবাস, নির্যাতন উপেক্ষা করে আন্দোলন এগিয়ে নেন।

শাসক গোষ্ঠী শেখ মুজিবসহ বাঙালি আমলা, সেনাবাহিনীর মেধাবী সদস্য, ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদদের ফাঁসাবার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজু করেন। কিন্তু ছাত্রসমাজ ১১ দফা দাবীতে রাজপথে নামে। আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয়।

১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ রেসকোর্সে এক সংবর্ধনায় তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান করেন। ১৯৭০ সালে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। এসময় ভাসানী ন্যাপসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত থাকেন।

কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৭০-এর নির্বাচনকে ‘৬ দফার প্রতি গণভোট’ হিসেবে গ্রহণ করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা। কিন্তু ইয়াহিয়া-ভ‍ুট্টোর চক্রান্তে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসতে না দিয়ে সংসদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে বাঙালিরা রাস্তায় নামে।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, ইস্তেহার পাঠ, মিছিল মিটিং ইত্যাদি করতে থাকে। তার ৭ মার্চের ভাষণ ছিল শুধু রাজনৈতিক ভাষণ নয়; কূটনৈতিক ভাষণও। এর মাধ্যমে তিনি জাতিকে স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনা দেন।

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সত্তার দু’টি নাম। কিউবার রাষ্ট্রনায়ক ফিদেল কাস্ট্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মাঝে হিমালয়ের উষ্ণতা দেখেছি। তার ত্যাগ তিতীক্ষা, কারাবাস জীবন, চারিত্রিক দৃঢ়তা, সাহসিকতা তথা জনগণকে বোঝার দূরদৃষ্টি ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষিপ্রগতি আমাদের চলার পথের পাথেয়। একটি অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত,গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক এটাই প্রত্যাশা করি।

আর বাঙালি জাতীয়তাবাদের এ লড়াকু নেতা টিকে থাকবেন আমার মেধা,মননে ও আদর্শে।

লেখক : মো.ওসমান গনি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট , ১৪ মার্চ ২০২০ ।

Share