Home / সারাদেশ / ফ্রি প্রাইমারী পর্যায়ে টেকনাফে ‘অনলাইন স্কুল
ফ্রি প্রাইমারী পর্যায়ে টেকনাফে ‘অনলাইন স্কুল

ফ্রি প্রাইমারী পর্যায়ে টেকনাফে ‘অনলাইন স্কুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :

মনিটরের বড় পর্দায় অনলাইন শিক্ষিকা সাজিয়া আফরীন ডাক দিলেন ‘হোয়ার ইউ মোহাম্মদ ফয়সাল?’ —‘ইয়েস মিস’ বলে পর্দার সামনে এগিয়ে গেল ফয়সাল। এরপর শিক্ষিকার সাথে কথোপকথন। পাঁচ বছরের কম বয়সী ফয়সালকে তখন খুবই উৎসাহী দেখাচ্ছিল। ফয়সাল স্কুলের টিনশেড ঘরে দাঁড়িয়ে। শিক্ষিকা সাজিয়া আফরীন ঢাকায়। তারপরও চলছে দুইজন মুখোমুখি কথা। শিক্ষিকা ফয়সালের কাছ থেকে ‘হোমওয়ার্ক’ নিলেন। কথা শেষ হল। শিক্ষিকা বললেন, ‘ভেরি গুড, ওকে থ্যাংক ইউ ফয়সাল। নাউ গো টু ইউর সিট।’ এরপর নিজের জায়গায় এসে বসল ফয়সাল।

টেকনাফের সদর ইউনিয়নের কুনকার পাড়ায় গড়ে ওঠা একটি অনলাইন স্কুলের শ্রেণীকক্ষের চিত্র এটি। প্রতিদিন এভাবেই প্রতিটি শিক্ষার্থী উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পড়ছে। আনন্দের সাথে শিখছে অ-আ, ক-খ ও এ-বি-সি-ডি।

স্কুলের শিক্ষিকা নাবিলা ইমান এ বিষয়ে বললেন, ‘বড় পর্দায় যখন শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্লাস পায়। তখন তারা নিশ্চুপ হয়ে আগ্রহের সাথে শুনে। তাদের কথামতো মন দিয়ে পড়ে। অবশ্য তাদের বুঝতে সমস্যা হলে, পরে আমরাও বুঝিয়ে দেয়। এ ছাড়া তাদের শৃঙ্খলার ও সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টিও আমাদের লক্ষ্য দিতে হয়।’

আরেক শিক্ষিকা শিল্পী শর্মা জানালেন, বাচ্চারা ভিডিও দেখতে খুব আগ্রহী। ক্লাশের শুরুতেই শিক্ষামূলক ভিডিওগুলো দেখে তারা আনন্দ পায়। এতে পরবর্তী ক্লাসের জন্য তারা মনোযোগী হয়ে উঠে।

স্কুলের শিক্ষার্থী ইন্ধ্রা শর্মা ঈশা’র মা শিখা রাণী শীল (২৭) বললেন, ‘আমার স্বামী সেলুনের দোকান করেন। অল্প আয়ের সংসারে বাচ্চার লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। এখন বিনামূল্যে অনলাইন স্কুলে সোনামণিটা পড়ছে। আমি খুশী।’

আরেক শিক্ষার্থী ঋতু শীলের মা রত্না শীল (৩০) বললেন, ‘বাচ্চারা একদিকে যেমন বাংলা ভাষা শিখছে। অন্যদিকে ইংরেজীতেও পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এটা আমার জন্য বড় পাওয়া।’

শিক্ষার্থী পূর্ণিমা শীলের মা চারুবালা শীল (৪০) ও সুস্মিতা শীলের মা কবিতা শীলও একই অনুভুতি ব্যক্ত করলেন।

২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কুনকার পাড়ায় আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ‘অনলাইন স্কুল’। আধুনিক শিক্ষাবঞ্চিত অজপাড়াগাঁয়ে উন্নত শিক্ষার জন্য স্কুলটি চালু হয় জাগো ফাউন্ডেশন,গ্রামীণফোন ও অগ্নি সিস্টেম লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে।

টেকনাফ অনলাইন স্কুলের প্রজেক্ট অফিসার সাইদুল ইসাম মিথু জানালেন, টেকনাফ অনলাইন স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ইংলিশ ভার্সন এ স্কুলে খাতা কলম থেকে শুরু করে স্কুল ব্যাগ সবই ফ্রি। মাসিক ফিও দিতে হয় না। ফলে প্রতি শিক্ষার্থীর পেছনে স্কুল কর্তৃপক্ষ মাসে কয়েক হাজার করে টাকা ব্যয় হয়।

জাগো ফাউন্ডেশনের শিক্ষা উন্নয়ন প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক জিহাদ উজ জামান বলেন, ফ্রি প্রাইমারী পর্যায়ে অনলাইন স্কুলটি চলছে। দেশীয় শিক্ষা কারিকুলামে চলছে পাঠদান। প্লে এবং নার্সারির সমন্বয়ে ‘রিসিপশন’ নামে প্রথম ধাপে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এরপর কেজি। তারপর ক্লাস ওয়ান। এভাবে পর্যায়ক্রমে এটি দশম শ্রেণী পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে। টেকনাফ অনলাইন স্কুলে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৯ জন। এদের মধ্যে ১৮ মেয়ে ২১ ছেলে। ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৫দিন ক্লাস হয়।

গ্রামীণফোনের সিআর এনগেজম্যান্ট স্পেশালিস্ট হাফিজুর রহমান খান বলেন, ২০১১ সালের আগস্ট মাসে পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু হয় ‘অনলাইন স্কুল’ কার্যক্রম। এরপর পর্যায়ক্রমে গাজীপুর, রাজশাহী, গাইবান্ধা, বান্দরবন, মাদারীপুর, লক্ষীপুর, দিনাজপুর, রংপুর, হবিগঞ্জ ও কক্সবাজার মিলে মোট ১০টি অনলাইন স্কুল গড়ে ওঠে। এসব স্কুলে মোট শিক্ষক ৬৯ জন। এদের মধ্যে ২৩ জন অনলাইন ও ৪৬ সরাসরি শিক্ষক। ১০টি স্কুলে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৯০ জন। ‘সবার জন্য ইন্টারনেট’ এ সেবার আওতায় চলছে অনলাইন স্কুল।

আপডেট :   বাংলাদেশ সময় : ০২:৫০ অপরাহ্ন, ১৮ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার ০২ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ

 

 

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কমপ্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি