কৃষি ও গবাদি

ফরিদগঞ্জে বেকারদের স্বাবলম্বী করছে টার্কি

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পাখি প্রজাতির টার্কি মুরগী পালন। বাণিজ্যিক ভাবে টার্কির বাচ্চা ও মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক খামার। পোল্ট্রি মুরগীর চেয়ে টার্কি মুরগীর রোগ-ব্যাধি কম, মাংস খেতে সুস্বাদু ও লাভজনক। এই মুরগী পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বেকার যুবক-যুবতীরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও পোল্টি ফিড ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, চরপাড়া, বদপুর, কড়ৈতলী, মুন্সিরহাট, হাঁসা, ধানুয়া, গজারিয়া, ফিরোজপুর, পৌরসভা সহ ১৫ ইউনিয়নের বিভিন্ন বাসা-বাড়ির আঙিনা ও বাড়ির ছাদে ছোট আকারে টার্কি মুরগীর খামার গড়ে তোলা হয়েছে। অনেকে শখের বসত পালন করছে টার্কি। অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে ফরিদগঞ্জে দিন দিন টার্কি পালন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

টার্কি মুরগী পালন করে ইতোমধ্যেই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেছেন সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের বিল্লাল হোসেন সর্দার। এক বছর পূর্বে নিজ বসতবাড়ির ছাদে সাতটি টার্কি দিয়ে শুরু করেন খামার। বর্তমানে ওই খামারে শতাধিক টার্কি রয়েছে।

তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, টার্কি মুরগী পালন করে লাভবান হয়েছি। এখন খামারে প্রায় ৪ লাখ টাকার টার্কি রয়েছে। খামারে উৎপাদিত টার্কির ডিম ফরিদগঞ্জ, চান্দ্রা, গাজিপুর, কামতা ও রুপসা বাজারের ব্যবসায়ীরা কিনে নেয়।

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর্থিক সহযোগীতা পেলে বড় ধরনের খামার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি ঋণ সুবিধা।

কড়ৈতলী গ্রামের মায়ের দোয়া পোল্ট্রি সত্ত্বাধিকারী মো. তারেক। তিনি ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার আনার্সে অধ্যয়নরত। এ প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি টার্কি মুরগী পালন করছি। বড় ও বাচ্চা সহকারে খামারে শতাধিক টার্কি রয়েছে। টার্কি পালন করে আমি লাভবান হয়েছি।

হাঁসা গ্রামের মির্জা টার্কি ফার্মের সত্ত্বাধিকারী মো. হাফিজুর রহমান। তিনি সদ্য কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করেছেন। সম্প্রতি তিনিও শুরু করেছেন টার্কি মুরগী পালন। এ প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, টার্কির প্রধান খাবার ঘাস। তবে দানাদার খাবারের পাশাপাশি পাতাকপি ও কচুরিপানা খেয়ে থাকে এরা। কোলেস্টেরল ও চর্বি কম এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় টার্কির মাংসের চাহিদা বেড়েছে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা পোল্টি ফিড ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম গত দেড় বছর ধরে টার্কি পালন করছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৫ শতাধিক টার্কি বিক্রি করেছেন।

তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, টার্কি মুরগী রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। ছয় মাসের একটি পুরুষ টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন থাকে তিন থেকে চার কেজি। প্রতি কেজি টার্কি মুরগি বিক্রি হয় সাড়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকায়।

তিনি আরো জানান, ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ২৮ দিনেই এর ডিম ফুটোনো যায়। এছাড়া বর্তমানে দেশি মুরগির মাধ্যমে টার্কির ডিম ফোটানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এক মাসের এক জোড়া বাচ্চা বিক্রি করেন ১২’শ টাকায়। প্রতিটি ডিম বিক্রি করেন ১শ’ টাকা।

তিনি আরো বলেন, রামগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুর সহ দেশেরে বিভিন্ন জায়গা থেকে তার কাছে টার্কি মুরগি ক্রয় করতে আসেন ক্রেতারা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টার্কি মুরগী পালনে জনপ্রিয়তা বাড়লেও কিছু সমস্যা রয়েছে।

বিশেষ করে এই মুরগীর ক্রেতা কম হওয়ায় বাজারজাত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে খামারীরা। ক্রেতারা যাতে এই মুরগী কিনতে আগ্রহী হয় এর জন্যে সরকারীভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সম্ভাবনাময় এই মুরগী ডিম ও মাংস উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জ্যোতিময় ভৌমিক এ প্রতিনিধিকে বলেন, টার্কি মুরগী এখনো প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হয়নি। তবে ফরিদগঞ্জে এটি একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ১৫/২০ জন টার্কির চিকিৎসার জন্যে প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে আসেন। প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে টার্কি খামারিদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিবেদক : আতাউর রহমান সোহাগ

Share