Home / ইসলাম / ফরিদগঞ্জে দ্বীন প্রচারে অবদান রাখছে সন্তোষপুর দরবার
Santaspur-Darbar

ফরিদগঞ্জে দ্বীন প্রচারে অবদান রাখছে সন্তোষপুর দরবার

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ইসলামী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ঐতিহ্যবাহী সন্তোষপুর দরবার শরীফ কমপ্লেক্স। বর্তমানে এখানে একটি দীনিয়া মাদরাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোডিং, হাফেজিয়া মাদরাসা, মসজিদ ও একটি খানকা রয়েছে।

বাংলা ১৩৫৮ সনে আলহাজ¦ হযরত মাও. শাহ্ সূফি মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন (রহ.) উক্ত দরবার প্রতিষ্ঠা করেন। ছারছীনা দরবারের পীর আলহাজ¦ হযরত মাও. শাহ সূফি নেছার উদ্দিন আহম্মদ (রহ.) এর নির্দেশে সঠিক দ্বীনের আলো ছড়িয়ে দিতে এ দরবার প্রতিষ্ঠা করা হয়।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কি.মি দূরে ১১ নং চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নে সন্তোষপুর দরবারের অবস্থান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল সীমানা প্রাচীর ঘেরা দরবারের প্রবেশ পথে রয়েছে নির্মানাধীন ১২০ ফুট উচ্চতার একটি মিনার। মসজিদের পাশে রয়েছে দরবারের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ্ সূফি মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন (রহ.) ও আলহাজ¦ হযরত মাও. শাহ সূফি পীরে মোকাম্মেল মোহাম্মদ বিন মোসলেহ উদ্দিন (রহ.) দ্বয়ের মাজার শরীফ। তার পাশেই খানকা শরীফের অবস্থান।

দরবারে প্রবেশ করতেই ভেসে আসছিলো শিশুদের কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াতের ধ্বনি। প্রতিদিন দূরদুরান্ত থেকে দরবারে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আসেন ইসলামের নানা বিষয় জানতে। ইসলাম সর্ম্পকে আলোচনা করতে প্রতি মাসে আয়োজন করা হয় তালিমুল জলসা।

এছাড়া ইসলামী সংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজিন করা হয়। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের ৯ ও ১০ তারিখ আয়োজন করা হয় বার্ষিক মাহফিল। যেখানে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে।

২০০৫ সালে এখানে দারুস্সুন্নাত ছালেহীয়া দীনিয়া মাদরাসা নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ঈর্ষানি¦ত সাফল্য অর্জন করে আসছে। বিশেষ করে ইবতেদায়ী শ্রেণিতে রয়েছে বিশেষ অর্জন।

প্রতি বছর ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে সরকারি বৃত্তি পাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ২০১৭ সালের ইবতেদায়ী শ্রেণিতে এ প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী টেলেন্টপুলে সরকারি বৃত্তি লাভ করে। যা এই উপজেলার মধ্যে অন্যন একটি রের্কড বটে।

এ বিষয়ে মাদরাসার মোহতামিম মাও. মো. শাহাদাত হোসাইন এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘মাদরাসার বিভাগ সমূহ হচ্ছে কিতাব বিভাগ (দ্বীনিয়া), হিফজুল কোরআন বিভাগ ও নূরানী বিভাগ। ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে এখানে পাঠদান করা হয়।

এখানকার শিক্ষা সমাপনির পর ছাত্ররা ছারছীনা মাদ্রাসাসহ ইচ্ছানুযায়ী দেশ বিদেশে ইসলামী বিভাগ ও মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা শিক্ষা বিষয়ে লেখাপড়া করতে পারে’।

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ শিশু (জামাতে পাঞ্জেদাহুম) থেকে ১০ম (পাঞ্জম) শ্রেণি পর্যন্ত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করছে। ১৩ জন শিক্ষক নিয়মিত তাদের পাঠদান করে থাকেন। তবে কামেল (দাওরায়ে হাদিস) পর্যন্ত খোলার পরিকল্পনা রয়েছে ইনশাআল্লাহ’।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার পরিচালক ও সভাপতি, সন্তোষপুর দরবার শরীফের পীর আলহাজ¦ হযরত মাও. শাহ আবদুল করীম বিন মুহাম্মদ (মা.জি.আ.) এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে এখানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বর্তমানে এখানে ২ শতাধিক ছাত্র রয়েছে। যাদের মধ্যে ছাত্রাবাসে ১১০ জন ও লিল্লাহ বোডিংয়ে ৪০ জন ছাত্র নিয়মিত আবাসন ও খাবারের সুবিধা পাচ্ছে’।

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৩ জন শিক্ষকের মাসিক বেতন, অফিসিয়াল খরচ, লিল্লাহ বোডিং ও আবাসিক ম্যাচে ছাত্রদের খাবার খরচ, কিতাব ক্রয়, ছাত্রদের চিকিৎসা ও ক্রীড়া সামগ্রী বাবদ মাসিক প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যায় হচ্ছে। যার অধিকাংশ দরবারের ভক্ত-মুরীদগণের দান করা অর্থ থেকে আসে।

তবে ছাত্রদের ক্লাশ এবং আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে এখানে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেত। এ লক্ষ্যে ৫তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মানের জন্যে ১৩ শতাংশ ভূমি ক্রয় করা হয়েছে। তবে আর্থিক সংকটের কারণে এই ভবনটি নির্মান করা যাচ্ছে না।

এছাড়া ৪ তলা বিশিষ্ট একটি ইসলামী গ্রন্থাগার (মাকতাবা) ভবনের নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। নূরানী বিভাগ পরিচালনার জন্যে জরুরী ভিত্তিতে একটি ঘর নির্মান কাজ চলছে। ৮০টি টয়লেট ও ২শ’টি অযুখানা ভবন নির্মানের প্লান করা হয়েছে।

সন্তোষপুর দরবারের পীর সাহেব সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ প্রতিনিধিকে আরো বলেন, ‘ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্যে অত্র কমপ্লেক্স পরিচালনার জন্যে সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।

জানা যায়, অত্র দরবারের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ¦ হযরত মাও. শাহ্ সূফি মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন (রহ.) ১৯৮০ সালে ইন্তেকালের পর তাঁরই নির্দেশ মোতাবেক তাঁর বড় ছেলে আলহাজ¦ হযরত মাও. মোহাম্মদ বিন মোসলেহ উদ্দিন (রহ.) গদ্দিনশীন পীর হিসেবে ২০১৪ সালের ৬ জুন পর্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৬ জুন আলহাজ¦ হযরত মাও. মোহাম্মদ বিন মোসলেহ উদ্দিন (রহ.) ইন্তেকালের পর তাঁর বড় ছেলে আলহাজ¦ হযরত মাও. শাহ আবদুল করীম বিন মুহাম্মদ (মা.জি.আ.) উক্ত দরবারের গদ্দিনশীন পীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

প্রতিবেদক : আতাউর রহমান সোহাগ

Leave a Reply