Home / শিল্প-সাহিত্য / প্রতিটি মা যদি এমন হতো!
প্রতিটি মা যদি এমন হতো!

প্রতিটি মা যদি এমন হতো!

‎Tuesday, ‎12 ‎May, ‎2015  08:54:31 PM

হাসান সাইদুল :

মধ্য বা আগেকার আমলে মেয়েদের সংসারের রান্নাবান্না করা সন্তান জন্মদান ও তার দেখভালের জন্য ব্যবহার করা হতো। সে সাথে ক্ষেতখামারের কাজেও সহভাগী হতো নারীরা।

দিনে দিনে রীতির কিছু পরিবর্তন এসেছে। মেয়েরা সমধীকার আন্দোলনে কতটুকু সফল বলা ভার তবুও পথ হটছে সমধীকারে। মাঠে-ঘাটে, অফিস-আদালত, দোকানপাট, মডেলিং এমনকি রাজনীতিতে মেয়েরা সোচ্চার।

বর্তমানে আমাদের দেশের গোটা কয়েক নারী পর্বতশৃঙ্গও জয়ের সাথে বিদেশে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। সব কিছুতে আজ সফলতা ঘর-সংসারে কতটুকু সময় দিচ্ছে জানি না। তবুও কিছু নারী আজো সংসার আর সন্তানের পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত। যেখানে পুনঃস্বাধীনতা ভোগ করতে মরিয়া ওরা। শুধু সন্তানের উজ্জল ভবিষ্যত কামনায়।
মায়েদের অবহেলার দরুণ সন্তান বখে যায়। আমরা হয়তো ঐশী সমাচার জেনেছি অনেক আগে। বাবা সংসারের উপার্জনকর্তা স্বভাবতই হয়ে থাকেন। এই রীতিই অতি গ্রহণযোগ্য। অনেক মা তাই বলেন এবং সেভাবেই সংসার পরিচালনা করেন। উপার্জনকর্তা যেমনই উপার্জন করুক তাতেই সন্তুষ্ট থাকে।
টুম্পা একজন মা।
ঢাকার মেয়ে তবুও অসাধারণ যাপিত জীবন। কতটুকু সফল কাজ ও আগ্রহের মাধ্যমে বুঝা যায়-
আজো অনেক মা-খালা-ভাবি আছেন যারা দিনের অন্তত নয়-দশটায় ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। তার পর রান্না ভারা ও অন্যান্য কাজ। আমাদের দেশের অধিকাংশ সংসারের অশান্তির মূল তো এই কারণই ধরা যায়।
মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কেজি টুয়ের ছাত্রী টুম্পার মেয়ে প্রতিভা। সকাল আটটা ত্রিশে ক্লাস শুরু হয়। খুব ভোর বেলা ঘুম থেকে জেগে ওঠা তারপর সোনামণির স্কুলে নিয়ে যাওয়ার আগে তাকে প্রস্তুত করা ও নাস্তা খাওয়াতে কোন দিন বিলম্ব হয় না টুম্পার। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়াই শিক্ষার্থীর দিনের প্রথম কাজ। সে হারে টুম্পার কাজও যেন শিক্ষার্থীর মত। একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে আসা-যাওয়াতে যার একটু বিলম্ব হয় না। সকালে স্কুল যেতে হয় বলে প্রতিভাকে ইসলাম শিক্ষা তথা আরবী (কুরআন) শিক্ষার জন্য বাসায় আলাদা হুজুর রেখেছেন। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী মেয়ের (প্রতিভা) জন্য রেখেছেন আলাদা শিক্ষক। একটুও দেরি ঘাটতি ঘটেনি প্রতীভার আপন বিকাশে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে। শুধুকি তাই?
প্রাইভেট শিক্ষক যখন পড়াতে আসেন- ডাইরী দেখে প্রতিভাকে পড়া শিখার সময় নিজেও কিছু শিখে নেয় টুম্পা (যেটা না বুঝে)। প্রাইভেট শিক্ষক অবাক হয়ে প্রশ্ন করে টুম্পাকে। জানতে চাওয়া হয়- কেন তিনি শিখতে চান- সংকোচ প্রকাশ না করেই টুম্পা উত্তর দেয়। প্রাইভেট শিক্ষক এক ঘন্টা কিংবা দেড় ঘন্টা পড়ায় তাতে বাচ্চার কতটুকু হয় জানি না। আমি তো সারাক্ষণ প্রতিভার পাশে থাকি। উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারিনি তবুও আমি চাই আমার সন্তান বেড়ে ওঠোক স্ব ও সুশিক্ষায়। সে জন্য আমিও শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নেই যে পড়াটা আমি না বুঝি।

টুম্পার স্বপ্ন আধুনিক মেয়েদের মত নিজের মেয়েকে দেখতে চায় না। মেয়ে তার যেন ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে নিজের জীবন গড়তে পাড়ে সে জন্যই নিরুঙ্কুশ পরিশ্রম করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। ঘরের টেলিভিশনটা দেখে নিয়ম মাফিক নিজের সাথে বসিয়ে। মা মূলত যে কোন সন্তানের প্রথম ও প্রধান শিক্ষক। যার কাছ থেকে তা সকল প্রতীভার বিকাশ ঘটে। কেমন মা টুম্পা? এমন অভিভাবক কি বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে প্রয়োজন? যে মা মেয়েকে অন্ধবিশ্বাস করে স্কুল কলেজে কিংবা কোচিং সেন্টারে পাঠাবে? নিয়মিত মার্কেটে? আমাদের দেশে সরকারি পরীক্ষার ফলাফলে আশানুরূপেরও বেশি অথচ শতভাগ কৃতকার্য শিক্ষার্থীর জীবনটাও কি শতভাগ কৃতকার্য? বিলাসিতা নয়, যে ঘরে মা’ই পরম বন্ধু ও সৎ অভিভাবকের কাজ পরিচালনা করতে পারে সে ঘরের সন্তানই পায় আলোকিত জীবন। শুধু কি তারা? না এক ঘরে দু’চার জন আলোকিত মানুষ থাকলেই সমাজের আলো জন কয়েক আলোকিত মানুষ পাওয়া যায়। আলোকিত মানুষ শুধু আলোই ছড়ায় অন্ধকার নয়।
অভিভাবক এমনই হওয়া উচিত। যে অভিভাবক শিক্ষার্থী হতে পারে যে কোন বয়সে। সন্তানের সুখময় জীবনের জন্য সকল মায়েরাই জীবন দিতে পারে কিন্তু কীভাবে কোন সময় জীবন দেয় তা ভাবাই মুখ্য।

জীবন তো সহজেই দেয়া যায় কিন্তু একটা জীবনের সফলতায় হাজারো জীবনকে বাঁচিয়ে তোলাই মহৎ কাজ এবং শ্রেষ্ঠ কাজ। যে কাজ সকল মা বা অভিভাবকরা করতে পারে না। যা সকলের দ্বারা করা সম্ভব। প্রতিটি অভিভাবকই হোক টুম্পার মত। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে একটি করে টুম্পা জন্য নিক। প্রতিভা তোমাকে সাদর অভিবাদন ও শুভ কামনা…।

চাঁদপুর টাইমস : ‍এমআরআর/২০১৫

 

নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes

চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।