চাঁদপুরে ২ হাজার মুরগির বাচ্চাসহ পোলট্রি ফার্ম আগুনে পুড়ে ছাই

চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়নের কল্যান্দী গ্রামে ২ হাজার মুরগির বাচ্চাসহ একটি পোলট্রি খামার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ১১ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে ৪টায় ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের তালুকদার বাড়িতে এই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাবাসীর সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এই ঘটনায় খামার মালিক এবং খামারির প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ওই বাড়ির মরহুম রুহুল আমিন তালুকদারের পরিবারের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে স্থানীয় রতন ভূঁইয়া নামের এক খামারি সেখানে মুরগি পালনের ব্যাবসা করতেনন। গত চারদিন আগে তিনি দোতলা বিশিষ্ট এই খামারে ২ হাজার মুরগির বাচ্চা তুলেছিলেন।

খামারের (ভাড়াটিয়া) মালিক রতন ভূঁইয়ার জামাতা আব্দুর রহমান জানান, আমরা ২ বছরের চুক্তিতে গত ২ মাস আগে পোল্ট্রি খামারটি ভাড়া নিয়েছিলাম। এরমধ্যে একবার মুরগি উঠিয়ে ভালোয় ভালোয় লালনপালন করে তা বাজারে বিক্রি করেছি। গত তিনদিন আগে ২ হাজার মুরগির বাচ্চা তুলেছিলাম। যা খামারসহ আগুণে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ওই সময়ে খামারের কর্মচারী জামাল ভূঁইয়া পাশে একটি ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। আগুণ দেখে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আগুণে তার ২ হাজার মুরগীর বাচ্চা, ১০ বস্তা খাবারসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

মরহুম রুহুল আমিন তালুকদারের পুত্র হৃদমি তালুকদার জানান, প্রতিদিনের ন্যায় তারা বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোর আনুমানিক সাড়ে চারটার দিকে মানুষের চিৎকার শুনে তিনি দৌড়ে এসে দেখতে পান আগুনের লেলিহান শিখায় পুরো খামারটি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি তারা তাৎক্ষণিক চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসকে অবগত করেন এবং এলাকাবাসীর সহায়তায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

হৃদমি তালুকদার আরো জানান, তার বাবা মরহুম রুহুল আমিন হাওলাদার অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই খাবারটি করেছিলেন। ২০১৭ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি একইভাবে এই খামারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তখনও মুরগি এবং খামারটি পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। এরপর বাবা পুনরায় খামারটি গড়ে তোলেন। কিস্তু গত ২০২১ সালের ২১ মে তার পিতা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে খামারটি তারা ভাড়া দিয়ে দেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন আমাদের এলাকায় আরও অনেক মুরগির খামার রয়েছে। কিন্তু পরপর দুইবার আমাদের খামারেই কেন আগুনের ঘটনা ঘটছে, তা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ করছি।

তালুকদার বাড়ির নুরুল আমিন তালুকদার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আমরা আগুন লাগার খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। ততক্ষণে পূর্ব দিক থেকে আগুনের লেলিহান শিখা পোল্ট্রি খামারটি ছাই করে দেয়। এর আগেও একবার এই ফার্মে আগুন লেগেছিল। তাছাড়া আমার ভাই মারা যাওয়ার চারদিন পর তার ২ লক্ষ টাকা দামের একটি গরু চুরি হয়ে যায়। এই পরিবারটির উপর বারবার কেন এমন ঘটনা ঘটছে তা আল্লাহ ভালো জানেন। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব তারা যেন বিষয়টি খতিয়ে দেখেন এবং এই পরিবারটিকে সহযোগিতা করেন।

মৃত রুহুল আমিন তালুকদারের বোন সাজেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাই কয়েক মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার পর তার পরিবারের জীবন যাপনের জন্য এই খামারটি ভাড়া দিয়েছিলাম। আজকে সেটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি এই ঘটনার সাথে কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার। পাশাপাশি সরকারের কাছে অনুরোধ করব যাতে করে খামারের ব্যাবসায়ী এবং এই পরিবারটিকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হয়।

এ বিষয়ে কল্যাণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রণি পাটোয়ারী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ঘটনাটি আমি অবগত হয়েছি। এটি খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। এই পরিবারটির সাথে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তারা যদি মনে করেন, কেউ শত্রুতা করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটিয়েছে তাহলে তারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারের। আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

Share