Home / চাঁদপুর / ‘পুলিশ দেইখ্যা হেয় গাঙ্গে হাল দিছে, কয় তোগরে পুলিশে ধরবো না’
পুলিশ দেইখ্যা হেয় গাঙ্গে হাল দিছে, কয় তোগরে পুলিশে ধরবো না

‘পুলিশ দেইখ্যা হেয় গাঙ্গে হাল দিছে, কয় তোগরে পুলিশে ধরবো না’

রাত ৩টা ১৫ মিনিট। ভরাপূর্ণিমা তাই জল-জোছনার অপরুপ সৌন্দর্য মেনায় বুকে ষ্পস্ট হয়ে ধরা দিয়েছে। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা টাক্সফোর্সের সভাপতি মো. আব্দুস সবুর মন্ডলের নেতৃত্বে অভয়াশ্রম ঘোষিত পদ্মা- মেঘনার ১শ’ কিলোমিটার এলাকা চষে বেড়াচ্ছে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ইতোমধ্যেই মতলবের ষাটনল এলাকার মানবশুন্য এক চরের নদীপাড়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকার সন্ধান পায় অভিযান টিম। ডিঙি নৌকা থেকে প্রায় ২০ কেজির মতো অপরিপক্ক মা-ইলিশ জব্দ করা হয়।

অভিযান টিমের স্প্রিটবোট তখন মতলব থেকে মেঘনার পশ্চিম পাড়ে। সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ওই চর এলাকায় নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ খেয়ে বহু মৌসুমি জেলের দেখা মেলে। হঠাৎ নৌ-পুলিশে উন্নত টর্চ লাইটের আলোয়- মাঝ নদীতে ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকা দেখা গেলো।

নৌ-পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বোর্টর গতি বাড়ানো নির্দেশ দিলেন। টাক্সফোর্সের ব্যবহৃত দ্রুত গতির বোটটি মূহুর্তেই ডিঙি নৌকার কাছে পৌঁছে গেলো। নৌকায় চোখ রেখে উপস্তিত সকলেই সকলে চমকে গেলে ৮/৯ বছরের তিন শিশু ঘুঁণেধরা পাটাতনে জড়সড় ভাবে বসে আছে।

তাদের তিন জোড়া শিশুচোখে তখন সম্মিলিত অসহায় দৃষ্টি। এই জেলার অধিকাংশ শিশুরা যখন নরম বিছানায় মাকে জড়িয়ে ঘুমপুকুরে ডুব দিয়েছে, ঠিক সে মুহূর্তে ভাগ্যহত এই শিশুরা উত্তাল মেঘনার ঢেউ-¯্রােত আর প্রশাসনের ভয়কে উপেক্ষা করে ইলিশ ধরছিলো।
অসাধু কিছু ব্যক্তি লোভাতুর নগ্নদৃষ্টির কারণে নিষ্পপ এ শিশু গুলোকে ভুল পথে পা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসক ও নৌ-পুলিশ সুপার প্রথমেই শিশুদের অভয় দিয়ে স্প্রিটবোর্টে আসতে বললেন। শিশু গুলো পোষা বেড়ালের মোতই ধীরে ধীরে নৌকা থেকে বোর্টে পা রাখলো।

এই প্রতিবেদকের কাছে শিশু গুলো জানায়, তারা রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত হাফেজ গাজীর পুত্র সফিক (৯), জাফর ফকিরের পুত্র সুফিয়ান বাদশা (৯) ও জাহাঙ্গির সরকারের পুত্র ফয়সাল (৮)।

এদের প্রত্যেকেই স্থানীয় একটি সরকারি প্রাইমারী স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

স্থানী জহিরুল ইসলাম নামের এক প্রতিবেশী আত্মীয় তাদেরকে বেড়াতে নেয়ার কথা বলে নদীতে মাছ শিকারে নিয়ে এসেছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সফিক বলে, ‘বিয়ালে ডাইল দিয়া পানিভাত কচলাইয়া খাইচি। এ হন পর্যন্ত কিছু খাইনা। জহিরায় কইছেল আমরা চিরার চরে গুরতে যাই। হেয় মিছা-কতা কইয়া আমাগোরে মাছ ধরতে আনছে।’

কৃষ্ণকায় সুফিয়ান বাদশা জানায়, ‘নৌকায় ৫ হলি কেলা আর চাইডা পাউরুটি আছিলো। খালু (জহিরুল ইসলাম) কয়, অহন খাইলে আবার খিদা লাগবো, আটটু পর কলা-রুডি খাইছ’।

ফয়সাল বলে, ‘পুলিশ দেইখা হেয় গাঙ্গে হাল (লাফ) দিছে, আমগরে কয় তোরা ডরাইছ না, নৌকায় বইতে থাক, তোগোরে পুলিশে ধরবো না’।

এতো রাতে নদীতে মাছ ধরতে ভয় করে কিনা জানতে চাইলে তারা জানায়, ‘আমরা ছোডকাল থেকেই গাঙ্গে নামি, ডরাই না, আগেও গাঙ্গে ইলিশ মাছ ধরছি’।

এদিকে জেলা প্রশাসক শিশুদের অভুক্ত থাকার কথা জানতে পেরে নিজেদের জন্যে আনা রাতের খাবার থেকে শিশুগুলোকে খাবার দেন। এবং সকালে তাদের পরিবারের লোকদের মাধ্যমে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে আলাপ করলে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজি হযরত আলী বেপারী বলেন, যরা এ শিশুদের দিয়ে রাতে আঁধারে মা ইলিশ নিধন করছে তারা প্রকৃত অর্থে মানুষ হতে পারে না। এরা মৌসুমী জেলে। বছরের মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ রক্ষার দু’টি সময়ে তারা ছোট্ট ডিঙি নৌকা নিয়ে সরকারের নির্দেশকে উপেক্ষা করে এই কাজ করে থাকে। তাদের চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনের হাতে তুলে দেয়া হবে।

ভিডিও দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন…

প্রতিবেদক : আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ ১০ : ৩০ পিএম, ০৫ অক্টোবর, ২০১৭ বৃহস্পতিবার
এইউ

Leave a Reply