Home / বিশেষ সংবাদ / পারস্যের কবি হাফিজ ছিলেন নজরুলের প্রিয় কবি
পারস্যে

পারস্যের কবি হাফিজ ছিলেন নজরুলের প্রিয় কবি

কবি হাফিজ ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রিয় কবি। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষার কবি আর হাফিজ ছিলেন ফারসি ভাষার কবি।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৯১৭ সালে যখন ৪৯ পল্টুন সেনাবাহিনীতে যোগদান করার পর করাচি চলে যায় যান এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময়কাওে ও শেষে সেনাবাহিনীতে অপর একজন মৌলভীর সাথে পরিচয় ঘটে।তাঁর কাছে থেকেই তিনি ইরানের কবি হাফিজের ফারসি ভাষার কবিতা শুনে ভীষণ আকৃষ্ট হন্। তার কাছেই তিনি ধীরে ধীওে ফরাসি ভাষা শিখেন ও পন্ডিত্য অর্জন করেন কবি নজরুল ।

ইরানের একটি প্রসিদ্ধ শহরের নাম সিরাজ । যাকে পারস্যের তীর্থভূমি। কবি হাফিজের বাবা বাহাউদ্দিন ইরানে ব্যবসা-বাণিজ্যেও জন্যে শিরাজ শহরে বসবাস শুরু করেন। তাঁর মাতার নাম ছিল ঐশ্বর্য। তিনি ঐ শহরের একজন কুরআনের হাফেজ ছিলেন বলে তখনকার মানুষটা তাকে বুলবুল -ই – শিরাজ বলে সম্ভাষণ করতেন।

তিনি তাঁর কবিতায় ছদ্মনাম হিসাবে ব্যবহার করতেন হাফিজি । তাঁর জন্ম তারিখ না পাওয়া গেলও ৭৯১ হিজরিতে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন বলে জানা যায় । তাঁকে একটি আঙ্গুর বাগানে সমাধিস্থ করার কারণে ওই এলাকাটি আজও হাফিজিয়া নামে প্রসিদ্ধ।

যতদূর জানা যায়- কবি হাফিজ তৎকালীন ফারসি ভাষা কবি হিসেবে ইরানের সমাজে পরিচিতি ছিল। তার কবিতার উৎস হলো প্রেমের। প্রেমের কবিতা থেকেই কবিতা লিখতেন। তিনি একসময় তার মা দারিদ্রতার কারণে তাদের হাতে তাকে তুলে দেন। তিনিও কঠোর পরিশ্রম ও রুটির দোকানের চাকরির পাশাপাশি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসে লেখাপড়ার সুযোগ লাভ করেন।

কবি নজরুল তাঁর জীবন সম্পর্কে জেনে হয়ত সেই কবি হাফিজের জীবনের সাথে অনেক মিল খুঁজে পান। কেননা কবিতায় তাদের উভয়ের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা প্রায় একই। এ জন্যই কবি হাফিজ কবি নজরুলের প্রিয় কবি হিসেবে ভাবতেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের পুত্র অরিন্দম খালেদ বুল বুল ১৯৩১ সালের সম্ভবত ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ অসুস্থ হন। তখন তার ঘরে বসে প্রিয় কবি হাফিজের রুবাইয়াতগুলো করাচি থেকে আসার পর তিনি নিয়ে এসেছিলেন সেগুলো ফারসি থেকে বাংলায় অনুবাদ শুরু করেন। বাংলা অর্থ হচ্ছে হল চার লাইনের কবিতা। কবি নজরুল ৭৫টির মধ্যে অনুবাদ করেছিলেন হাফিজুর শেষ হওয়ার পরপরই বুলবুল ও দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন।

বুলবুলের মৃত্যুতে কবি বিমর্ষ হয়ে পড়েন। একদিকে কবি হাফিজের প্রথম পুত্র মৃত্যুবরণ করেন ১৩০৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে কবি হাফিজ ও মর্মাহত হন। এছাড়াও ১৯২১ সালে কবি কুমিল্লা দৌলতপুরে আলী আকবর খানের বাড়ি আসার পর তাঁর ভাগনির সাথে তার পরিচয় ঘটে এবং এক পর্যায়ে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

তখন তিনি তারঁ নাম দেন তাঁর প্রিয় কবি হাফিজের প্রিয় ফুলের নামে নাম নার্গিস। নার্গিসের প্রণয়ের কারণে অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করতে পেরেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সূত্র :অনূদিত রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ এবং নুরুল ইসলাম রচিত জীবনীগ্রন্থ।

চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় কবি নজরুল

কার্পাসডাঙ্গা হল চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার একটি স্থানের নাম। কার্পাশডাঙ্গা এখানে বিশাল পোড়া মাটি দূষণের একটি আটচালা ঘর রয়েছে॥ দৃষ্টিতে বাড়িটি ছিল বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায়্। বাড়ির ঘরের সামনে একটি বড় উঠান, পাশে একটা পুকুর রয়েছে এবং ভৈরব নদী পাশ দিয়ে বয়ে গেছে।

এ বাড়ির মালিকের নাম ছিল শ্রী হর্ষ প্রিয় বিশ্বাস। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক এবং রাজনীতিবিদ্। স্বদেশী আন্দোলনের বৈঠকখানা হিসেবে ব্যবহৃত হতো এ বাড়িটি।

১৯২৬ সালে কবি নজরুল এ বাড়িতে বেড়াতে আসেন। কলকাতা প্রবাসী সরকারের আমন্ত্রণে তিনি প্রথম এখানে আসেন । হর্ষ প্রিয় বিশ্বাসের সাথে সখ্যতা তৈরি হয়। তিনি তাঁর আটচালা ঘর নজরুলকে থাকার জন্য ব্যবস্থা করেন। ট্রেনে দর্শনা রেল স্টেশন হয়ে গরুর গাড়িতে কবি এখানে বেশ কয়েকবারই আসেন।

এখানে তিনি বেশ কয়েকটি গান, ছড়া, কবিতা ও উপন্যাস রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে হল : বাবুদের তাল-পুকুরে, লিচু চোর, পদ্মগোখরা ও মৃত্যুক্ষুধা প্রভৃতি।

লেখার বিষয়বস্তুও ছিল এখানে। নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত আলমিরা এখনো রয়েছে স্মৃতি হিসেবে। সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক জীবনের গল্প আছে এ বাড়িটির। বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। শোষিত-বঞ্চিত অধিকারহারা মানুষের অধিকার আদায়ের তিনি ছিলেন এক যোদ্ধা।

রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতেন ঐ বাড়িটি । যেখানে সময়ের বিবর্তনে কার্পাসডাঙ্গা সে স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের প্রিয় কবি নজরুলের অস্তিত্ব ।

লেখক : আবদুল গনি, সাবেক শিক্ষক, সাংবদিক ও সাধারণ সম্পাদক,নজরুল গবেষণা পরিষদ, চাঁদপুর। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১।