বিশ্ব পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ দিবস আজ

আজ রোববার ২৫ জুলাই। বিশ্বে প্রথম বারের মতো ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হচ্ছে। পানিতে ডুবে মৃত্যু একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারায় পানিতে ডুবে।

পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধকল্পে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘যে কেউ পানিতে ডুবে যেতে পারি,সবাই মিলে প্রতিরোধ করি’। পানিতে ডুবে মৃত্যুর বেশির ভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

প্রসঙ্গত, ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ বিষয়ক একটি ঐতিহাসিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ফলে জাতিসংঘ ২৫ জুলাইকে‘বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস’হিসেবে ঘোষণা করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। বন্যা ও জলযান দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ঘটনা পানিতে ডুবে মৃত্যুর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে কোনো কোনো দেশের পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম।

পানিতে ডুবে মোট মৃত্যুর ৯০ % এর বেশি ঘটে থাকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এশিয়া ও আফ্রিকাতে পানিতে ডুবে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। পানিতে ডোবার ক্ষেত্রে সামাজিক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। গ্রামাঞ্চলে অধিকসংখ্যক শিশু-কিশোর পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে।

বিশ্বে শিশু মৃত্যুর ১০টি প্রধান কারণের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু অন্যতম। বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এক-চার বছর বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে,এরপর রয়েছে ৫-৯ বছর বয়সী শিশুরা।

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের পরিচালক ও ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টারের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ড.আমিনুর রহমান বলেন,‘ বাংলাদেশ সরকার পানিতে ডুবে যাওয়াকে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসমূহ (এসডিজি), বিশেষত এসডিজি ৩-সুস্বাস্থ্য এবং কল্যাণ,অর্জনের লক্ষ্যে শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৫ বছরের নিচে ২ লাখ শিশুর সুষ্ঠু তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৮ হাজার কমিউনিটি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানোর একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে শিশুদের এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিরোধে যত দ্রুত সম্ভব এসব কার্যক্রম দেশব্যাপী পরিচালনা করার এখনই সময়।

পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক ২০২০-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার পরে পানিতে ডুবা হচ্ছে দ্বিতীয় প্রধান ঘাতক। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে গৃহীত কার্যকর পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ন করার মতো আর্থিক সামর্থ্ বাংলাদেশের নেই। তাছাড়া এ পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উপযুক্তও নয়। দেশের প্রেক্ষাপট এবং সমাজে গ্রহণযোগ্য এরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে জাতীয়ভাবে সর্বশেষ জরিপ হয়েছে ২০১৬ সালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ইউনিসেফের সহযোগিতায় সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ পরিচালিত ঐ জরিপে তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী প্রতি বছর সব বয়সী প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি অর্থাৎ আনুমানিক ১৪ হাজার ৫০০ জনই ১৮ বছরের কম বয়সী।

অন্যভাবে বলা যায়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের শিশুরা পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন । বছরে প্রায় ১০ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ৪৩ % কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া।

পানিতে ডুবে মৃতদের ৯১% বয়স ১৮ বছরের কম। চার বছর বা কম বয়সীদের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু সবচয়ে বেশি, ৫৬২ জন (৪২ শতাংশ)। ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ৪৬২ জন (৩৫ শতাংশ),১০-১৪ বছরের ১৫২ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ৩৮ জন।

১১৮ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের বেশি। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যে পানিতে ডোবার ৭৯ % ঘটনা ঘটে দিনের বেলায়। দিনের বেলায় শিশুরা পানির সংস্পর্শে বেশি যায়।

দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ৫৩৭ জন (৪০ শতাংশ) এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগে ৫১৭ (৩৯ শতাংশ) জন মারা যায়। তবে রাতেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যা বা রাতে ২৬৫ (২০ শতাংশ) জনের মৃত্যু হয়।

বার্তা কক্ষ,২৫ জুলাই ২০২১
এজি

Share