Home / সারাদেশ / নৌ-পরিবহন সংস্থার ৩৫টি নতুন জলযান নামানোর পরিকল্পনা
biwtac
প্রতীকী ছবি

নৌ-পরিবহন সংস্থার ৩৫টি নতুন জলযান নামানোর পরিকল্পনা

নৌ-পরিবহন সংস্থার ৩৫টি নতুন জলযান নামানোর পরিকল্পনা করছে । এগুলো বেসরকারি লঞ্চগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন রুটে পরিচালনা করার চিন্তা-ভাবনা করছে সংস্থাটি (বিআইডব্লিউটিসি )। এ লক্ষ্যে আপাতত ৩৫টি জলযান নামানোর পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় তথা বিআইডব্লিউটিসি এ উদ্যোগকে সেবার উদ্যোগ বলে দাবি করছে।

এ লক্ষ্যে ৩৫টি নতুন জলযান নির্মাণ করে তা দেশের বিভিন্ন নৌ-রুটে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক।

পুরনো জাহাজগুলোকে বাদ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন ৩৫ জলযান নামানোর পরিকল্পনা করছে বরে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্রে জানা গেছে ।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিআইডব্লিউটিসি’র নৌ-বহর শক্তিশালীকরণ ও আধুনিকায়ন করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিআইডব্লিউটিসিতে বিদ্যমান জাহাজ য়ে সেখানে নতুন জাহাজ প্রতিস্থাপন করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

এছাড়াও অভ্যন্তরীণ উপকূলীয় নৌ-পথে নিরাপদ ও দক্ষ নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা,নৌ-পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো, নৌ-পথে ক্রুজ সার্ভিস চালু করা,সংস্থার জলযান বহরে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং পুনর্বাসন সুবিধার সক্ষমতা বাড়ানো,ভবিষ্যৎ ট্রাফিক ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাসহ সংস্থার রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই এ নতুন প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন স্লিপওয়ে নির্মাণ’ শিরোনামে নেয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ১ হাজার ২৫৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং বিআইডব্লিউটিসির নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে দু’ফেইসে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। রাজধানী ঢাকাসহ বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ২৭টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, সড়ক ও রেল পরিবহন ব্যবস্থার তুলনায় নৌ-পথ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত। নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে নদীপথ সবচেয়ে সহজ, জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য মাধ্যম।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ২৮নং অধ্যাদেশ বলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন এবং ৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ও নৌ-যান একীভূত করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন গঠন করা হয়।

প্রতিষ্ঠালগ্নে বিআইডব্লিউটিসি’র মোট জলযানের সংখ্যা ছিল ৬ শ’৮টি। এ সবই ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। অধিকাংশ জলযান বয়সের ভারে ছিল ন্যূব্জ। ফলে ৬শ ৮টি জলযান বহরে থাকলেও বিআইডব্লিউটিসি জলযান সার্ভিস পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে ।এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিসি জলযান বহরের উন্নয়নে পুরান জলযান পুনর্বাসন এবং নতুন জলযান সংগ্রহে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

আশি ও নব্বই দশকে ডেনমার্ক, জার্মানি, বেলজিয়াম এবং পরবর্তী চীন সরকারের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ সংস্থার জলযান বহরে সংযুক্ত হলেও ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে বর্তমানে জলযানগুলো অত্যন্ত নাজুক ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক জলযান অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অতিক্রম করেছে।

বর্তমানে এ সংস্থাটির ১২৮টি বাণিজ্যিক জলযান ও ৫৩টি সহায়ক জলযানসহ মোট ১৮১টি জলযানের মাধ্যমে ফেরি সার্ভিস, যাত্রীবাসী সার্ভিস, কার্গো সার্ভিস ও শিপ রিপেয়ার সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে। তবে জলযানের সংখ্যা কম ও মানসম্মত আধুনিক না হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ নৌ-পরিবহন সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এর পরিপ্রেক্ষিতে নৌ- পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিআইডব্লিউটিসি নতুন করে ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন স্লিপওয়ে নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করে। প্রস্তাবটির ওপর ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ঐ পিইসি সভায় প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত জলযানসমূহের প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন এবং এ সংক্রান্ত সম্ভব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে জলযান ক্রয় সম্পর্কিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত হয়।

পিইসি সভার ওই সিদ্ধান্তের আলোকে ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করে পুনরায় পাঠানো হয়।

এরপর ওই প্রস্তাবের ওপর ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর পুনরায় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত ও বর্তমান পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুসারে ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ফেইজে নতুন ৪ টি জাহাজ নির্মাণ, সি-ট্র্যাক ৮টি, ইমপ্রুভড কে-টাইপ ফেরি ৪টি, ইমপ্রুভড ইউটিলিটি ফেরি ৬টি, মর্ডান কেবিন ক্রুজার কাম ইন্সপেকশন বোট ১টি, ফেরি পল্টুন নির্মাণ ৬টি, ঘাট পন্টুন ২টি,ফায়ার ফাইটং কাম-স্যালভেজ টাগ ১টি ও অয়েল ট্যাংকার বানানো হবে ১টি।

এ ছাড়াও প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেইজে প্যাসেঞ্জার ক্রজার ৩টি, আধুনিক অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী জাহাজ ৩টি,ফায়ার ফাইটিং কাম-স্যালভেজ টাগ ১টি,অয়েল ট্যাংকার ১টি ও ইমপ্রুভড কে-টাইপ ফেরি নির্মাণ করা হবে ২টি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান জানান, ‘ বিআইডব্লিউটিসিকে আধুনিকায়ন করে সেবা ও বাণিজ্যিক মনোভাব নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যেই এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সংস্থা লাভবান হবে। জনসাধারণও লাভবান হবে।’

strong> বার্তা কক্ষ
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭ : ৫০ পিএম ১ আগস্ ২০১৭
এজি

Leave a Reply