Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরসহ দেশের ২৩ জেলায় এইডস ঝুঁকিতে
aids

চাঁদপুরসহ দেশের ২৩ জেলায় এইডস ঝুঁকিতে

এইচআইভি-এইডসের সংক্রমণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে তুলনামূলক কম হলেও দেশের ২৩ জেলা এ ঘাতক ব্যাধির ঝুঁকিতে রয়েছে। সারাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের ওপর জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি কর্মসূচি ২৩ জেলায় এই ঘাতক ব্যাধির অধিকমাত্রায় সংক্রমণের প্রমাণ পেয়েছে।

জেলাগুলো হলো- ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, কুমিল্লা, যশোর, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, পটুয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ।

কর্মসূচি সংশ্নিষ্টরা বলছেন, অনিরাপদ যৌন সম্পর্কসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এইডস সংক্রমণ হলেও বর্তমানে অভিবাসন ও শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মাধ্যমে এ ঘাতক ব্যাধি সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনও অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস সংক্রমণ বাড়ছে বলে জানিয়েছে।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে যাওয়া বাংলাদেশিদের মাধ্যমে এইডস ছড়িয়ে পড়ছে। এ প্রেক্ষপটে তারা আন্তর্জাতিক ও সরকারি-বেসরকারি অর্থায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস আক্রান্তের ঝুঁকি হ্রাসের পাশাপাশি চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন। একই পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সমকালকে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এই ঘাতক ব্যাধির সংক্রমণ কিছুটা কম। তাই দেশব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ না করে আগে জরিপ করে দেখা হয়েছে। যেসব জেলায় সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেইসব জেলায় প্রতিরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এইচআইভি প্রতিরোধে ২৩ জেলায় ২৫টি সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে থেকে পাঁচ জেলার ছয় সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে এইচআইভি পরীক্ষা ও আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদান অব্যাহত আছে। এই সেবাকেন্দ্র আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশ থেকে এইচআইভি নির্মূল করা হবে।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অভিবাসনের মাধ্যমে এইডস সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। চাকরি বা কাজের সূত্র ধরে বিদেশে যেসব মানুষ বসবাস করছেন কিংবা যাতায়াত করেন তাদের সচেতন করে তুলতে হবে।

কীভাবে এইচআইভি সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, সে বিষয়ে তাদের ধারণা দিতে হবে। এ জন্য সরকারকে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার বিষয়ে মানুষকে জানানোর পাশাপাশি এ সেবা আরও সম্প্রসারিত করতে হবে।

এদিকে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য ‘এইচআইভি পরীক্ষা করুন, আপনার অবস্থা জানুন।’ দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি :স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি কর্মসূচি বলছে, সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার দশমিক শূন্য এক শতাংশের নিচে। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভির মাত্রা এখনও নিয়ন্ত্রিত।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের অপর জরিপে বলা হয়েছে, দেশে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণের হার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যা বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে। এ ছাড়া শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে সংক্রমণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ নারী যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়াদের মধ্যে সংক্রমণ হার প্রায় এক শতাংশ। কয়েক বছর ধরে নতুনভাবে শনাক্ত ব্যক্তিদের তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, নতুন করে আক্রান্ত ৩০ শতাংশেরও বেশি অভিবাসী অথবা তাদের পরিবারের সদস্য।

ইউনিসেফের সহায়তায় মা থেকে শিশুতে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিচালিত কার্যক্রমে দেখা গেছে, মায়ের কাছ থেকে শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণের হার প্রায় এক শতাংশ। এইডস/এসটিডি কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইডস ধারণা করছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে এইচআইভি-এইডস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। বাংলাদেশে প্রথম ১৯৮৯ সালে এইচআইভি রোগী শনাক্ত করা হয়।

ওই বছর থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৫৮৬ জন আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জীবিতদের মধ্যে তিন হাজার ২৬৫ জনকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। চলতি বছর কতজন আক্রান্ত হয়েছেন তা আজ শনিবার জানা যাবে। জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক শাখা ইউএনএইডসের তথ্যমতে, সারাবিশ্বে তিন কোটি ছয় লাখ ৯০ হাজার মানুষ এইডসে আক্রান্ত। তবে ২০০০ সালের তুলনায় আক্রান্তের হার ৩৫ শতাংশ কমেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দাতা সংস্থার সহায়তায় ড্রপ ইন সেন্টারের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার শিরায় মাদক গ্রহণকারী, সাড়ে ১৮ হাজার নারী যৌনকর্মী, প্রায় ২৮ হাজার সমকামী, চার হাজার ৬২ জন হিজড়াকে সেবার আওতায় আনা হয়েছে।

এইডস/এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম সমকালকে বলেন, অভিবাসী এলাকাপ্রবণ সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অভিবাসী ও প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইউনিসেফের সহায়তায় এইচআইভি পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম অন্যান্য জেলায়ও শুরু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মায়ের এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় আনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৭৩ জনের শরীরে এইচআইভি শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৩১ জনকে সরকারিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কর্মসূচি :দিবসটি উপলক্ষে আজ আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সকাল ১১টায় এইডস/এসটিডি কর্মসূচি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। (সমকাল)