Home / চাঁদপুর / নানা সমস্যার মধ্যেও চাঁদপুর চরাঞ্চলে আলো ছড়াচ্ছে ওমর আলী উবি
নানা সমস্যার মধ্যেও চাঁদপুর চরাঞ্চলে আলো ছড়াচ্ছে ওমর আলী উবি

নানা সমস্যার মধ্যেও চাঁদপুর চরাঞ্চলে আলো ছড়াচ্ছে ওমর আলী উবি

চাঁদপুর সদরের উপজেলার নদী সিকস্তি একটি চর ইউনিয়ন ১৪ নং রাজরাজেশ্বর। চতুর্দিকে পদ্মা-মেঘনা বেষ্টিত ইউনিয়নটিতে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস।

বর্তমান সময়ের আধুনিক সুযোগসুবিধা বঞ্চিত ও অবহেলিত ওই ইউনিয়নের একমাত্র উচ্চবিদ্যালয়ের নাম ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৮বার নদী ভাঙনের শিকার বিদ্যালয়টি নানা সিমাবদ্ধতার পরেও স্ব-গৌরবে ইউনিয়নবাসীর মাঝে শিক্ষার আলো বিতরণ করে যাচ্ছে।

মানসম্মত শিক্ষাদানের ফলে এ প্রতিষ্ঠানটি বহুবছর ধরে ফলাফলের দিক থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪৭টি হাইস্কুলের মধ্যে ৬ থেকে ৭ নং অস্থানে রয়েছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে বহু প্রাক্তণ শিক্ষার্থী দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। অথচ বর্তমানে অত্র ইউনিয়নের একমাত্র এই উচ্চ বিদ্যালয়টি শ্রেণিকক্ষ ও ফার্নিচার, কম্পিউটার ল্যাব ও মেয়েদের কমনরুম, সৌর বিদ্যুৎ চালিত সিলিং ফ্যানসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে।

স্কুলটিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের সার্বিক উন্নয়নকল্পে এবং সেখানকার মানুষজনকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার প্রয়াসে ইউনিয়নের কৃতিজন মরহুম ওমর আলী এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর ২০০০ সন থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যালয়টি সর্বমোট ৮ বার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। যার ফলে প্রতিবারই প্রায় ১০/১২ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়টির স্থান পরিবর্তন করে নতুনভাবে জায়গা ক্রয় করে আবর পুনঃনির্মাণ করতে হয়েছে। আর এর সব ব্যয়ভারই বহন করেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ওমর আলীর সুযোগ্য পুত্র ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি মো. মুনির ফারুক।

৮ বার ভাঙনের পর বর্তমানে বিদ্যালয়টি বর্তমান অবস্থান ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডস্থ বেপারী কান্দি গ্রামে। এবছর পদ্মা- মেঘনার প্রবল ¯্রােতে রাজরাজেশ্বরে ব্যপক ভাঙনের নদী এখন এর মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। কতৃপক্ষ জানায় এবছর স্কুলটি না সরালে হয়তো সামনের বর্ষায় প্রতিষ্ঠানটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। পূর্ব ও দক্ষিণমূখি টিনের তৈরি দৃষ্টিনন্দন এ বদ্যালয়টির শ্রেণীকক্ষ সংখ্যা মাত্র ৭টি। প্রচন্ড গড়মকে উপেক্ষা করে ছোট ছোট শ্রেণীকক্ষগুলোতে শিক্ষার্থীরা অত্যান্ত কষ্টকর পরিবেশে পাঠগ্রহণ করছে।

বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে ৪২১জন শিক্ষার্থী লেখা পড়া করছে। গত বছর এই স্কুল থেকে জেএসসি পরীক্ষায় ৬২জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৮টি এ গ্রেডসহ ৬০জন কৃতকার্য। এসএসসিতে ১৪জন অংশ নিয়ে ১০জন কৃতকার্য হয়। তবে এসএসপি পরীক্ষার্থী সংখা কম হওয়ার বিষয়ে কতৃপক্ষ বাল্যবিয়েকে প্রধানত দায়ি করে। বিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সনে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিলো সর্বমোট ১৪২জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৯২ ও ছাত্র ৫০। যা ১০ম শ্রেণীতে এসে দাড়িয়েছে মাত্র ৩৩ জনে। কতৃপক্ষ জানায়, ৭ম শ্রেণী থেকে অধিকাংশ ছাত্রী বাল্য বিয়ের শিকার হয়ে শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে পড়ছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বহু শিক্ষককে হুমকি-ধমকির সম্মুক্ষিণ হতে হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সফিউল্যাহ সরকার চাঁদপুর টাইমসকে জানায়, নানান সমস্যার মধ্যে থেকেও আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করে যাচ্ছি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি যে সমস্যাগুলো মারাত্মক আকার দেখা দিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, শ্রেণিকক্ষ ও ফার্নিচার সংকট, উন্নত সৌর বিদ্যুতের অভাবে সিলিং ফ্যান ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কম্পিউটার ল্যাব না থাকায় শিক্ষার্থীরা তথ্য-প্রযুক্তিগত শিক্ষা পাচ্ছে না। একটি কমনরুম ও ছাত্রদের থাকার হোস্টেলের প্রয়োজনীয়তা প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫ জন এমপিওভুক্ত। বাকি ৬ জন শিক্ষকের বেতনভাতা বিদ্যালয়ের সভাপতি ব্যক্তিগতভাবে বহন করছেন। তাছাড়া প্রতি বছর তিনি ৫টি শ্রেণি থেকে ৩জন করে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা করে ৫০ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করেন।

এছাড়া প্রতিবছর শিতের সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে গরম কাপড় ও কম্বল বিতরণ করা হয়। তাছাড়া চরাঞ্চলের অসহায় ও গরিব লোকজনের সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই মাসিক বেতন বা টিউশন ফি নেয়া হয় না। এজন্য বিদ্যালয়ের বাকি ৫ জন শিক্ষক যদি এমপিওভুক্ত হতো তবে প্রটিষ্ঠানটির পরিচালায় খরচ অনেকটাই কামে যেতো। এ বিষয়ে তিনি চাঁদপুর ৩ আসনের সংসদ ডা. দীপু মনিসহ ঊর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মুনির ফারুক চাঁদপুর টাইমসকে জানায়, ‘নদী ভাঙনের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে এবছরই ইউনিয়নের লঙ্গিমারা চরে এটি স্থনান্তরিত করা হবে। সেখানে এরইমধ্যেই আমরা বিদ্যালয়ের জন্য ১শ’ ৮০ শতাংশ জমি ক্রয় করেছি। এলাকার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো বিতরণের জন্য আমার বাবা এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করে গেছে। আমরা যতোদিন বেঁচে থাকবো এই প্রতিষ্ঠানের জন্য সহযোগিতা করে যাবো।


আশিক বিন রহিম

: আপডেট, বাংলাদেশ ১১:০৩ পিএম, ০৭ অক্টোবর, ২০১৭ শনিবার
ডিএইচ

Leave a Reply