Home / লাইফস্টাইল / দাঁতের যত্ন ও প্রতিকার
দাঁতের যত্ন ও প্রতিকার

দাঁতের যত্ন ও প্রতিকার

মুখের সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিত্ব প্রকাশে উজ্জ্বল সুন্দর দাঁতের ভূমিকা অপরিসীম। সুন্দর দাঁতের সাথে জড়িয়ে আছে সুন্দর হাসি, আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ়তা। তবে মজার ব্যাপার হলো, ত্বকের পার্থক্যভেদে দাঁতের নিজস্ব একটি রং থাকে। সাধারণত উজ্জ্বল ত্বকের মানুষের ক্ষেত্রে দাঁতের এনামেলের রং কিছুটা হালকা হলদে থাকে। অন্যদিকে যাদের ত্বক অপেক্ষাকৃত চাপা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে দাঁত সেই অনুপাতে সাদা হয়ে থাকে। এ কারণেই আমরা ইউরোপীয় ও আফ্রিকানদের মাঝে দাঁতের রঙের তারতম্য দেখতে পাই। মূলত জিনগত কারণে দাঁতের রঙের এমন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

তবে জিনগত কারণ ছাড়াও কিছুটা আলসেমি এবং অবহেলার কারণেও দাঁতের রঙের পরিবর্তন এবং ক্ষয়সাধন হতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেসকল কারণে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে।

আমরা প্রত্যহ অনেক ধরনের খাবার গ্রহণ করে থাকি। এর মধ্যে কিছু আছে মসলাদার খাবার, আবার কিছু আছে তেল-চর্বিযুক্ত মাংসের খাবার। এসকল খাদ্যে একধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে, যা দাঁতের উপর হালকা আবরণ তৈরি করে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ দাঁতের সাথে লেগে থাকলে দাঁতের রঙের পরিবর্তনে এই পদার্থ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

খাবার নিয়ে আমরা কিছুটা সচেতন থাকলেও, পানীয়ের ব্যাপারে আমরা অনেকেই থাকি উদাসীন। চা, কফি, ঠাণ্ডা বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় সেবনের পর আমাদের মুখ ধোয়ার কথা মনে থাকে না। কিন্তু এধরনের পানীয়কে আমাদের দাঁতের জন্যে নীরব ঘাতক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নানা ধরনের ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার পর যে রস দাঁতের এনামেলের সাথে লেগে থাকে, তা থেকেও দাঁতের রঙের পরিবর্তন ঘটতে পারে।
ধূমপান দাঁতের জন্যে বিশেষভাবে ক্ষতিকারক। তামাকজাতীয় দ্রব্যের নিকোটিন দাঁতের ঔজ্জ্বল্য অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। এছাড়াও পান, সুপারি, জর্দা, গুল বা সাদাপাতাও দাঁতের জন্যে সমান ক্ষতিকর।
দাঁতের যত্নে বর্তমানে ‘মাউথওয়াশ’ (মুখ ধোয়ার তরল প্রতিষেধক) খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহার দাঁতের জন্যে মোটেও ভালো নয়। মাউথওয়াশের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে দাঁতের রং পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।বাংলাদেশে স্থানভেদে পানির তারতম্য রয়েছে। আর্সেনিক বা আয়রনযুক্ত পানি দাঁতের জন্যে বেশ ক্ষতিকারক।

ফ্লোরাইড সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব কমই আছে। বর্তমানে বিজ্ঞাপনের চাকচিক্য উপস্থাপনায় ফ্লোরাইড মূলত দাঁতের জন্যে টুথপেস্ট নির্বাচনে আবশ্যকীয় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই ফ্লোরাইডের অতিরিক্ত ব্যবহার হয়ে উঠতে পারে দাঁতের জন্যে বেশ ক্ষতিকারক। দাঁতের রং পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে দাঁতের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেও এটি বাধা হয়ে উঠতে পারে।

বয়সের কারণেও দাঁতের রঙের পরিবর্তন ঘটতে পারে। বয়সের সাথে সাথে দাঁতের এনামেল দুর্বল হয়ে গিয়ে হলুদ বর্ণের ডেন্টিন বেরিয়ে আসে, যার ফলে দাঁত অনেকটাই হলুদ দেখায়।

দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করার জন্যে আমাদের প্রয়োজন কিছুটা সচেতনতা আর প্রাকৃতিক উপকরণের ব্যবহার। কেননা, বাজারের অতিরিক্ত ক্যামিকেল জাতীয় প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে দাঁতের উপকারের চাইতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাই হাতের কাছের সহজলভ্য দ্রব্যাদি দিয়েই শুরু হোক দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করার প্রয়াস।

ঘরেই তৈরি করে ফেলুন টুথপেস্ট
আমরা বাজার থেকে বিজ্ঞাপনের চাকচিক্য থেকে অনেক ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহার করি। তবে আমরা চাইলেই নিজেরাই ঘরের উপকরণ দিয়ে খুব সহজেই টুথপেস্ট তৈরি করে ফেলতে পারি। এরজন্যে আমাদের দরকার নারকেল তেল, বেকিং সোডা, লেবুর রস ও কয়েক ফোঁটা পুদিনার রস। উপকরণগুলো একত্র করে একধরনের মিশ্রণ তৈরি করে তা দাঁতের জন্যে কার্যকরী মাজন বা টুথপেস্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এই পেস্ট বা মিশ্রণটি প্রাকৃতিকভাবে দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।

তুলসী পাতা ও সরিষা তেল
তুলসী পাতার বিভিন্ন ভেষজ গুণাগুণ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা রয়েছে। এই তুলসী পাতা দাঁতের ক্ষয়রোধ ও মাড়িকে মজবুত করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই ক্ষেত্রে তুলসী পাতাকে প্রথমে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে। তারপর এই গুঁড়োর সাথে সরিষার তেল ব্যবহার করে একটি মাঝারি তরল মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে।এছাড়াও সজীব তুলসী পাতা পিষে নিয়েও একধরনের পেস্ট তৈরি করে নেয়া যেতে পারে, যা সরাসরি টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

কমলা ও লেবুর খোসা
দাঁতের জন্যে কমলা বা লেবুর খোসার খুব উপকারী। এই খোসা প্রাকৃতিকভাবে দাঁতের পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। দাঁতকে চকচকে করার জন্যে কমলা বা লেবুর খোসার নিচের অংশটি দাঁতের উপর ভালোভাবে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এছাড়াও কমলা বা লেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে তা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। পরবর্তীতে সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে অথবা শুকনো গুঁড়ো সরাসরি দাঁতের মাজন হিসেবে ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

স্ট্রবেরি ও অন্যান্য উপকারী ফল
দাঁতের জন্যে ফল একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধুমাত্র কয়েকটি পাকা স্ট্রবেরি মুখের মাঝে চিবোনোর ফলে এর রস হতে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দাঁতের স্পর্শে আসে, তা দাঁতের জন্যে খুব উপকারী। এছাড়াও আঙুর, আপেল, মাশরুম, গাজর ইত্যাদিও দাঁতের যত্নে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।পাশাপাশি পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার দাঁতের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন এসব খাবার খাওয়ার পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নেয়া হয়।

আপেল সিডার ভিনেগার
আপেলের রসের সিরকা বা ভিনেগার দাঁতের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এর একধরনের অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণ রয়েছে, যা মুখের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া দমন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।আপেলের রসে আছে অ্যাসিটিক এসিড, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রবায়োটিক ও এনজাইম। এই রস দাঁতের ময়লাকে হালকা করে ফেলে, যা খুব সহজেই মুখ ধোয়ার সময় পানির সাথে বের হয়ে যায়। এছাড়াও যারা ধূমপান করেন তাদের দাঁত এবং মুখের নিঃশ্বাসের জন্যে আপেলের সিরকা ব্যবহার করা উচিত।

নারকেল তেল
অয়েল পুলিং বা তেলের কুলকুচা করার পদ্ধতিটিও দাঁতের জন্যে খুব উপকারী। এক চামচ নারকেল তেল মুখে কিছুসময় রেখে দিয়ে পানির সাহায্যে দাঁত ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি অনেকটাই বাজারের রাসায়নিকযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করার মতোই।এছাড়াও ব্রাশের উপর কয়েক ফোঁটা তেল মেখেও দাঁত মাজা যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারকেল তেল প্রাকৃতিকভাবে দাঁতের যত্নে বেশ কার্যকরী এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

বেকিং সোডা ও লেবুর রসের পেস্ট

বেকিং সোডা ও লেবুর রসের মিশ্রণও দাঁতের যত্নে ভালো ভূমিকা পালন করতে পারে। লেবুতে উচ্চ মাত্রায় সাইট্রিক এসিড থাকে, যা দাঁতের যত্নে প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে থাকে।তবে উপকরণ দুটোর পরিমাণ খুব বেশি হতে পারবে না। নয়তো এর অতিরিক্ত ক্ষার দাঁতের জন্যে ক্ষতিকারক হতে পারে।

তবে দাঁতের যত্নে এ ধরনের উপকরণ ব্যবহারের পাশাপাশি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলা পালন করতে হয়। যেমন-

নিয়মিত দু’বেলা খাওয়ার পর ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজার অভ্যাস করা
ঠাণ্ডা পানি, চা, কফি বা যেকোনো ধরনের পানীয় গ্রহণের সাথে সাথে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে
ধূমপান থেকে বিরত থাকা
মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খাওয়ার সাথে সাথে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলা

নিউজ ডেস্ক
:আপডেট সময় ২:৫০ ১৫ জুলাই ২০১৮ ,রোববার
কে.এইচ

Leave a Reply