শীর্ষ সংবাদ

তীব্র শীতে নদীর পাড়ে চাঁদপুর বেদে পল্লীর মানবেতর জীবন

প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহে কেমন কাটছে চাঁদপুর শহরের বেঁদে পরিবারদের দিনগুলো। বছরের বারো মাসই নদীতে মাছ শিকার করে কিংবা সিংগা লাগিয়ে অথবা বাড়িতে বাড়িতে থালা বাসন ফেরি করে যাদের জীবিকা নির্বাহ করা হয়। সেই বেঁদে পরিবারদের খবর কেউ রেখেছেন কি?

গত কয়েকদিন ধরে চাঁদপুরে হাঁড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যয় হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই প্রচন্ড শীতের মধ্যেও দেখা গেছে চাঁদপুরের বেঁদে পরিবারের লোকজন নদীর জলের ওপরই শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছেন।

চাঁদপুর শহরের প্রেসক্লাব ঘাট ও ১০ নং চৌধুরী ঘাটস্থ বেঁদে পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, বেঁদে পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষরা শীতের কাপড়ে কষ্ট পাচ্ছেন। শীতের হিমেল হাওয়া থেকে রক্ষা পেতে কারো কারো গায়ে পুরান শীতের পোষাক থাকলেও অনেকের গায়ে দেখা গেছে তেমন কোনো ভালো শীতের পোষাক নেই। তবে বেঁদে পরিবারের শিশুদের চেয়ে শীতে কষ্ট ভোগ করছেন বড়রা। তাদের এই শীত কাটানোর জন্য শীতের পোষাক দেওয়ার জন্য তেমন কেউই এগিয়ে আসেননি বলে জানা গেছে।

তবে কয়েকজন বেঁদে জানিয়েছেন কয়েকদিন পূর্বে প্রশাসনের লোকজন এসে প্রসেক্লাব ঘাটে গিয়ে তাদের কে ডেকে কয়েকটি কম্বল দিয়েছেন। কিন্তু সরকারি ভাবে প্রশাসন থেকে এখনো কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা তারা পাননি বলে জানিয়েছেন দুই বেঁদে পল্লীর সর্দার আব্দুল মালেক বেপারী।

১০ নং ঘাটস্থ ও ৫ নং ঘাট এই দুই স্থানের বেঁদে পরিবারদের সরদার আবদুল মালেক সরদারের কাছে জানান, শহরের এ দুই স্থানে মোট ২’শ ৭০ জন বেঁদে পরিবার রয়েছে। গত বছর এই ২’শ ৭০ জন বেঁদে পরিবারের মধ্যে শীতের মৌসুমে, দলীয় একটি সংগঠন থেকে সুজিত রায় নন্দীর মাধ্যমে মাত্র ৫০ জন সদস্যের মাঝে ৫০টি শীতের পোষাক দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা শিশুদের জন্য কিছু শীতের পোষাক বিতরণ করেছেন।

বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং কয়েকটি সংগঠন থেকে তাদের সহযোগিতা করা হলেও এবছর তেমন কোন বৃত্তবান কিংবা প্রশাসানিক ভাবে তাদের শীতের পোষাক দেয়ার জন্য তেমন কেউ এগিয়ে আসেনি ।

তিনি আরো জানান, গত কয়েকদিন পূর্বে প্রেসক্লাব ঘাটের পল্লীতে কারা যেনো ১’শ টির মতো কম্বল বিতরণ করেছেন। তবে কারা দিয়েছেন তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।

তিনি বলেন, প্রতি বছর সরকারি কোন অনুদান বা সাহায্য সহযোগিতা আসার আগেই তিনি চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের ফোন পেতেন। এবার শীতের পোষাক পেতে জেলা প্রশাসন থেকে তিনি এখনো কোন ফোন পাননি।

তিনি জানান, তারা এখানে থাকছেন শত বছরেরও বেশি সময় ধরে। দীর্ঘ বছর গুলোতে ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে বৃত্তবান এবং জেলা প্রশাসন যেমনি ভাবে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন তেমনি ভাবে এই শীতের মৌসুমেও চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকার তাদের বেঁদে পরিবারদের প্রতি বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন এমনটাই প্রত্যাশা বেঁদে পরিবারের।

শুধু প্রেসক্লাব ঘাট ও ৫ নং খেয়া ঘাটেই নয় এর বাইরেও চাঁদপুর শহরের, শেখের হাট, শাহতলী, রঘুনাথপুরসহ শহর ও তার বাইরে বহু বেঁদে পরিবার রয়েছে। তারাও একই ভাবে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদক:কবির হোসেন মিজি

Share