বিশেষ সংবাদ

তিন সিটি নির্বাচন : প্রতীক সংকট, অজগর কচ্ছপ কাকড়া ঝাড়ুও তালিকায়

২০১৫ এপ্রিল ০৭ ২১:৫০:১৬

চাঁদপুর টাইমস ডট কম :

জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য পৃথক প্রতীক নির্ধারণ করে এবার প্রতীক সংকটে ভুগছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আসন্ন ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বরাদ্দ প্রতীকের তুলনায় প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ইসি প্রতীক সংকটে পড়েছে। তবে সংকট মোকাবিলায় ইসি অর্ধশতাধিক অতিরিক্ত প্রতীক নির্ধারণ করেছে। যেগুলোর মধ্যে অজগর, কচ্ছপ, কাকড়া, ঝাড়ুও রয়েছে।

আগামী ১০ এপ্রিল ইসিকে তিন সিটির মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রায় দুই হাজার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে হবে। এরপরেই শুরু হবে প্রচারণা।

ইসি জানায়, তিন সিটি নির্বাচনে অর্ধশত মেয়র, প্রায় দেড় হাজার সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য ৩৬টি আলাদা প্রতীক চূড়ান্ত রয়েছে। এখনো অর্ধশতাধিক নতুন প্রতীক প্রয়োজন।

নির্ধারিত প্রতীকের বাইরে অতিরিক্ত প্রতীকের প্রয়োজন হলে ইসিকে জানাতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে কমিশন ১৯ বিধির (৩) উপ-বিধি অনুসারে নতুন প্রতীক প্রণয়ন করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে।

এদিকে প্রতীক সংকটে নির্বাচনে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না বলে ইসির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

প্রতীক সংকটের কথা স্বীকার করে ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতিটা পদের জন্য ৫ থেকে ৬টি প্রতীক বেশি লাগবে। বাড়তি প্রতীক লাগলেও ইসি অন্য নির্বাচনের প্রতীক ব্যবহার করবে না। বাছাই করে নতুন প্রতীক নির্ধারণ করা হবে।’

তিনি জানান, ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩০টি প্রতীক বাছাই করা হয়েছে। এখনো বাছাইয়ের কাজ চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে ইসি চূড়ান্ত অতিরিক্ত প্রতীক নির্ধারণ করবে।

ইসির অতিরিক্ত প্রতীকের তালিকায় থাকা অন্য প্রতীকগুলো হল— কামরাঙ্গা, কেক, ছুরি, জাহাজ, ঝুমঝুমি, টিফিন বক্স, পিঁড়ি, টুপি, থালা, হাঁড়ি-পাতিল, ইট, আংটি, বর-কনে, দা, নেলকাটার, পাটপাতা, বেল্ট, মগ, ব্লেজার, স্ট্যাপলার মেশিন, সোফা, হকি ও টুথব্রাশ। এ ছাড়া আরও কিছু প্রতীক বাছাইয়ে কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটা নির্বাচনে আলাদা প্রতীক নির্ধারণ করে ইসি শেষ সময়ে প্রতীক নিয়ে বিপাকে পড়েছে। প্রতীকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সব মানুষের কাছে পরিচিত নয় এমন কিছু প্রতীক নির্ধারণ করতে যাচ্ছে ইসি। ফলে প্রতীক চিনতে না পেরে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে মূল্যবান ভোটটি নষ্ট করতে পারেন।

ইসি জানায়, এ বছরের শুরুতে প্রতিটি নির্বাচনের জন্য ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা’ সংশোধন করে ২১৩টি প্রতীক চূড়ান্ত করে ইসি। আগের ১৪০টি প্রতীকের সঙ্গে নতুন আরও ৭৩টি প্রতীক যুক্ত করা হয়।

বিধিমালা সংশোধনের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৬৫টি, উপজেলা পরিষদে ৪৬টি, সিটি করপোরেশনে ৩৪টি, পৌরসভায় ৩৪টি ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৩৪টি প্রতীক সংরক্ষণ করে ইসি। যেগুলো অন্য নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে না।
এর আগে ইসির সংরক্ষিত ১৪০টি প্রতীকের মধ্যে টেবিল, চেয়ার, ছাতা, আনারস, টেলিভিশনসহ অন্তত এক ডজনেরও বেশি প্রতীক বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহার করা হতো। এতে ভোটারদের মধ্যেও এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এ কারণে ইসি আলাদা আলাদা প্রতীকের কথা চিন্তা করে।

পরে সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের জন্য ১২টি প্রতীক, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১০টি ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ১২টি প্রতীক চূড়ান্ত করা হয়।

এ ছাড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য ১৪টি, ভাইস চেয়ারম্যান ১২টি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ১০টি এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০টি প্রতীক চূড়ান্ত করা হয়।

পৌরসভার মেয়র পদের জন্য ১২টি, সংরক্ষিত সদস্য পদে ১০ ও সাধারণ সদস্য পদের জন্য ১২টি প্রতীক চূড়ান্ত করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য ১২টি, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদের জন্য ১০টি এবং সাধারণ সদস্য পদের জন্য ১২টি প্রতীক চূড়ান্ত করে ইসি।

আলাদা প্রতীক নির্ধারণ প্রসঙ্গে সে সময় নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনে বিশেষ প্রতীক ব্যবহার করা হবে। এ জন্য প্রচলিত প্রতীকগুলো থেকে আলাদা আলাদা তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর ফলে এক নির্বাচনের প্রতীক অন্য নির্বাচনে ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ হবে। প্রতীক নিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্তিও কমে যাবে।’

তফসিল অনুযায়ী, ২৮ এপ্রিল ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তিন সিটিতে ৫৫ জন মেয়র ও ১৫৩২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। প্রার্থীরা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ পাবেন। ১০ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নির্ধারিত প্রতীক
মেয়র পদ : কমলা লেবু, ক্রিকেট ব্যাট, চরকা, টেবিল ঘড়ি, টেলিস্কোপ, ডিশ এন্টেনা, দিয়াশলাই, ফ্লাস্ক, বাস, ময়ূর, হাতি ও ইলিশ মাছ।
সাধারণ কাউন্সিল পদ : কাঁটা চামচ, মিষ্টি কুমড়া, এয়ারকন্ডিশনার, করাত, ঘুড়ি, টিফিন বক্স, ট্রাক্টর, ঠেলাগাড়ি, ঝুড়ি, ব্যাডমিন্টন, র‌্যাকেট, লাটিম ও রেডিও।
সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদ : কেটলি, গ্লাস, পান পাতা, পিঞ্জর, টিস্যু বক্স, বৈয়ম, মুলা, মোড়া, শীল-পাটা ও স্টিল আলমারি।

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫

Share