চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক :
দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পর মন্ত্রী পেয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসনমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দফতরবিহীন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
সর্বশেষ জিয়াউর রহমানের সময়ে (১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল) জনপ্রশাসনমন্ত্রী ছিলেন। এর পর এরশাদের আমল (১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল) পেরিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছিল। এই মেয়াদে ক্ষমতায় এসে শুরুতে আওয়ামী লীগ একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছে।
মূলত প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিরা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণকারী গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়টির কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে রেখেছিলেন। কারণ পরোক্ষভাবে দেশ পরিচালনাকারী আমলাদের নিয়ন্ত্রণের কাজটি অন্যের হাতে দেওয়ার ঝুঁকি কেউ নেননি।
কতদিন পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মন্ত্রী পেল- জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘এটা তো বলতে পারছি না, অনেক দিন পর তো হবেই। হিসাব করতে হবে। তার পর বলা যাবে।’
সংশয় নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার বলেন, ‘অনেক আগে জনপ্রশাসনে মন্ত্রী ছিল বলে শুনেছি। খুব সম্ভবত জিয়াউর রহমানের সময়ে মাজিদুল হক সর্বশেষ জনপ্রশাসনমন্ত্রী (তখনকার সংস্থাপন) ছিলেন। তবে ১৯৯১ সালে বিএনপি প্রথম এসে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছিল।’
‘কার্যবিধিমালা-১৯৯৬ (রুলস অব বিজনেস)’ অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিভিল সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ ও শর্তাবলী নির্ধারণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তার অধীন কর্মকর্তাদের নিয়োগ পদ্ধতি, বয়সসীমা, যোগ্যতা, কতিপয় এলাকার জন্য এবং লিঙ্গভিত্তিক পদ সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যগত উপযুক্ততা, পরীক্ষা, নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, প্রেষণ, ছুটি, ভ্রমণ, জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি, বাছাই, অবসর, অবসর ভাতা পরিকল্পনা, পুনর্নিয়োগ, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পেনশন, পদমর্যাদা নির্ধারণ নিয়ে কাজ করে।
জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে (এখন জনপ্রশাসন) মন্ত্রী ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মাজিদুল হক। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এর পরের বছর ক্ষমতায় বসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
এর পর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে নুরুল হুদাকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেয়। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির ওই মেয়াদে পরে প্রতিমন্ত্রী হন ব্যারিস্টার আমিনুল হক।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ও ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে কাজের দেখভাল করতেন।
২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ মন্ত্রণালয় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হাতে। গত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়ে এ মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে এইচ টি ইমাম বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতেন।
গত বছরের ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে ইসমাত আরা সাদেককে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তবে নানা সমস্যায় জর্জরিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে সৈয়দ আশরাফের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। সচিবালয়ে তিন নম্বর ভবনের একজন যুগ্ম-সচিব নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘তাকে আমার যেভাবে জানি, তাতে তিনি নীতিবহির্ভূত কিছু করবেন না। সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগী হবে। সব মিলিয়ে আমরা আশান্বিত হতে পারি।’
জনপ্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সরকারের এ সিদ্ধান্তে তারা খুশি। পদোন্নতি, বদলিতে অনেকের চাপা কষ্ট দূর করে সৈয়দ আশরাফ জনপ্রশাসনকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবেন বলেও আশা তাদের।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফকে গত ৯ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দফতরবিহনী মন্ত্রী করা হয়। এর পর থেকেই গুঞ্জন ছিল উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি করে সৈয়দ আশরাফকে সেখানে নিয়োগ দেওয়ার।
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ১০:২৪ অপরাহ্ন, ১ শ্রাবণ ১৪২২ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার ১৬ জুলাই ২০১৫
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি