প্রধানমন্ত্রীর শান্তিরক্ষী কল্যাণ তহবিল গঠিত হচ্ছে

জাতিসংঘ মিশনে আহত ও নিহত সেনা সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পক্ষ থেকে ‘প্রধানমন্ত্রীর শান্তিরক্ষী কল্যাণ তহবিল’ গঠনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্যাদি,সাম্প্রতিক অর্জন, নিরাপত্তাঝুঁকি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া এতে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে কমিটি সদস্য মো.মোতাহার হোসেন, মো.নাসির উদ্দিন, মো.মহিবুবুর রহমান ও বেগম নাহিদ ইজাহার খান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া তথ্যে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে,‘জাতিসংঘ মিশনে আহত ও নিহত সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ কোনো নীতিমালা নেই। এ ব্যাপারে সরকার অনুমোদিত ট্রুপস কস্টের অবশিষ্টাংশ এবং শান্তিরক্ষীদের ঝুঁকি বিবেচনায় জাতিসংঘ থেকে প্রদত্ত অর্থের অংশবিশেষ নিয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পক্ষ থেকে একটি‘প্রধানমন্ত্রীর শান্তিরক্ষী কল্যাণ তহবিল’ গঠনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের দায়িত্ব পালনে হতাহতের সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবেলায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সর্বদা সচেষ্ট থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মিশন এলাকার ঝুঁকি অনুযায়ী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আধুনিক সরঞ্জামাদি মোতায়েন করে থাকে। এছাড়া শান্তিরক্ষীরা মিশনে মোতায়েনের আগে মিশন এলাকায় ঝুঁকির ধরনের ওপর ভিত্তি করে দেশে সব সদস্যকে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।’

বৈঠকে জানানো হয়, ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান সামরিক মিশনে ১৫ জন মিলিটারি পর্যবেক্ষক নিয়ে জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৪০টি দেশের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬শ ৭৯ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন।

বর্তমানে বিশ্বের ৮টি দেশের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৬ হাজার ৮৩২ জন সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৭০১ জন নারী শান্তিরক্ষী সাফল্যের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। এবং বর্তমানে ৩৭২ জন নারী শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্মরত রয়েছেন। বিশ্ব শান্তিরক্ষায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মোট ১৩৯ জন জীবন বিসর্জন দিয়েছেন এবং ২৪২ জন আহত হয়েছেন।

কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, বর্তমানে শান্তিরক্ষী পাঠানোর দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। ২০২০ সালে ১৩তম বারের মতো বাংলাদেশ জাতিসংঘে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

কুয়েত,দক্ষিণ সুদান এবং লেবাননে যেতে চান সংসদীয় কমিটির সদস্যরা:এদিকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সরেজমিন দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। তারা কুয়েত, দক্ষিণ সুদান এবং লেবানন যাবেন। প্রাথমিকভাবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে দিন-তারিখ এবং কতজন সদস্য যাবেন,তা এখনো ঠিক হয়নি। বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় ক্রয় মহাপরিদপ্তরকে ডিজিটালাইজ ও সেবার মান বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া বৈঠকে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসেসের (এমইএস) সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, এর আগের বৈঠকে কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিদেশে বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। সংসদীয় কমিটি বিদেশে বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কার্যক্রম পরিদর্শন করলে তাদের সুযোগ-সুবিধা এবং সমস্যাগুলো নির্ধারণ করা সহজতর হবে।’

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
এজি

Share