চাঁদপুর সদর

মা ইলিশ বহনের দায়ে দু’ব্যাক্তিকে কারাদণ্ড : ট্রলার মালিকদের ধর্মঘট

নিষিদ্ধ সময়ে যাত্রীবাহী ট্রলারে মা ইলিশ বহনের দায়ে নৌ-পুলিশ কতৃক আটক মো. আক্তারুজ্জামান ও মোস্তফা কামাল নামে দু’জনকে দু’বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ নিয়ে চাঁদপুর থেকে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী ট্রলার মালিকরা দু’দিনের ধর্মঘট ডেকেছে। তবে তাদের এ ধর্মঘট মানেনি অধিকাংশ ট্রলার মালিকরা।

জানা যায় গত রোববার (১৫ অক্টোবর) রাতে চাঁদপুর সদর উপজেলা রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী ট্রলারে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নৌ-পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৪০ কেজি ইলিশ জব্দ করে।

এসময় মা ইলিশ বহন করার অপরাধে ট্রলার মালিক মো. আক্তারুজ্জামান ও তার সহযোগী মোস্তফা কামালকে ট্রলারসহ আটক করে নৌ-ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।

পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোমেনা আক্তার আটকদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দু’বছর করে কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা করে টাকা জরিমানা করেন।

এঘটনায় ট্রলার ওই রুটে চলাচলরত যাত্রীবাহী ট্রলারের ঘাট ইজারাদারের নেতৃত্বে ট্রলার মালিকরা ১৭ ও ১৮ তারিখ নদীতে ট্রলার চলাচলে ধর্মঘট ডাকে। তবে কিছু জেলে এ ধর্মঘট মানেনি। তারা যাত্রী পারাপার করেছে।

এ বিষয়ে ট্রলার ঘাট ইজারাদার শাহজালাল বন্দুকসী বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই অভয়াশ্রম চলাকালে কেউ যাতে ট্রলারে ইলিশ বহন না করে তা সকল ট্রলার মালিকদের বলা হয়েছে।

তিনি জানান, ওইদিনের আটক মাছগুলো ৩নং ওয়ার্ড মেম্বারের ছিলো। অথচ সেই আবার পুলিশকে তথ্য দিয়ে মাছগুলো ধরিয়ে দিয়েছে। যার মাছ সে কোনো ধরিয়ে দিবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সে নিজেকে হিরো সাজাতে চেয়েছে।

এ বিষয়ে ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ রণি বলেন, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় ২১ দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দেশের একজন ইউপি সদস্য এবং সচেতন নাগরীক হিসেবে এ কর্মর্সচি বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করা আমারও দায়িত্ব।

তিনি বলেন, অভিযানের শুরুতে আমি অসুস্থ্য ছোট ভাইকে নিয়ে ঢাকায় ছিলাম। সেখানে থাকা সময়ে জানতে পারি রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ননের কিছু মৌসুমি জেলে মা ইলিশ নিধন করছে। তাছাড়া এ ইউনিয়নটি চারদিকে পদ্মা-মেঘনা বেষ্টিত হওয়ায় পাশ্ববর্তি জেলা শরিয়তপুর, ভেদেরগঞ্জ ও কাঁচিঘাটা থেকে জেলেরা রাজরাজেশ্বর এলাকায় এসে ইলিশ নিধন করে।

ইউপি সদস্য আরো জানান, কিছুদিন আগে কে বা কারা ইএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করে আমি নাকি এর সাথে জড়িত। পরে ডিসি স্যার ও ইউএনও ম্যাডাম আমাকে ডেকে মা ইলিশ নিধন বন্ধের কাজ করতে বলেন। শুধু তাই নয় আমার ইউনিয়নে কোনো জেলে যদি নদীতে নামে তবে এর দায়ভার আমাকেই নিতে হবে বলে জানায়। এরপর ডিসি স্যার ও ইউএনও ম্যাডামের নিদের্শে আমি মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনকে সহায়তা করি। এটা কি আমার অপরাধ?।

পারভেজ রণি আরো জানায়, ১৫ অক্টোবর রাতে রাজরাজেশ^র থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী ট্রলারে ৪ বস্তা ইলিশ বহন করা হয়েছিলো। বিষয়টি ট্রলারে থাকা কেউ গোপনে নৌ-পুলিশের এসপিকে জানিয়ে দেয়। পরে পুলিশ ৪০ কেজি ইলিশ জব্দ করে এবং ট্রলারের মালিকসহ দু’জনকে আটক করে দু’বছরের কারাদন্ড দেয়।

এদের মধ্যে একজন কলেজ শিক্ষার্থী ছিলো। এখন সাজাপ্রাপ্তদের পরিবার ধরে নিয়েছে পুলিশকে আমিই তথ্য দিয়েছি এবং জব্দকৃত ইলিশগুলো নাকি আমার ছিলো। এখন প্রশ্ন হলো ইলিশ মাছ যদি আমার হয় তবে আমিই বা কেনো পুলিশকে তথ্য দিবো?। একজন ইউপি সদস্য হিসেবে সরকারের কাজে সহায়তা করা আমার দায়িত্ব। অথচ আমার এলাকার অসাধু জেলে ও ইলিশ ব্যবসায়ীরা আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।

রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান জানায়, ট্রলার ধর্মঘটের বিষয়টি আমি শুনেছি। চরের নিরিহ ট্রলার যাত্রীদের কথা ভেবে আমি ট্রলার মালিকদের ধর্মঘট উঠিয়ে নিতে অনুরোধ করেছি।

প্রতিবেদক :আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ ১০: ৩০ পিএম, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭ বৃহস্পতিবার
এইউ

Share